বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে হিন্দুদের উপর বর্বরোচিত হামলা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানী, মঠ-মন্দির, ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং জায়গা-জমি দখলসহ সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রাঙামাটির সনাতনীরা। হাজার হাজার সনাতন সম্প্রদায়ের নর-নারী প্রতিবাদ সমাবেশ অংশগ্রহণ করেন। এসময় প্রায় দেড় ঘন্টা রাঙামাটি শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে য়ায়।
সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে এগারোটায় রাঙামাটি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ব্যানারে হাজার হাজার সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ অংশগ্রহণ করেন। এসময় হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, মাথায় বাংলাদেশর পতাকা, কেউ কেউ ফুঁ দিচ্ছেন শাঁখে, কেউ একটানা শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। শ্লোগানে শ্লোগানে হাজারো মানুষ উত্তাল প্রতিবাদ করে তোলে রাঙামাটির রাজপথ। সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের অভিযোগে তা বন্ধে ৮ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। মা-বাবার হাত ধরে ছেলে-মেয়ে, মায়ের কোলে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে উপস্থিত হন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি কৃষ্ণ ভাবনা কেন্দ্র ইসকনের রাঙামাটির অধ্যক্ষ নিতাই নুপুর দাশ ব্রহ্মচারী, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজিত শীল, জাগরণের মঞ্চের রাজু শীল, দাবিনামা উত্থাপন করেন মিশু দে, উপস্থাপন করেন মিশু মল্লিক।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং জায়গা-জমি দখল করে নিচ্ছে। আমাদের ওপর আর যেন কোনো হামলা না হয়, তার নিশ্চয়তা ও যেসব হামলা হয়েছে, তার বিচার চাই আমরা। স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদেরও রক্ত ঝরেছে। আমরা অধিকার নিয়ে নির্ভয়ে বাঁচতে চাই।
রাঙামাটি পুরহিত সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পদক ও রিজার্ভ বাজার শ্রী শ্রী গিতাশ্রমের প্রধান পুরহিত, পুলক চক্রবর্তী বলেন, রাঙামাটি অসাম্প্রদায়িক জেলা। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে বাস করি। এখানে সেরকম কিছু ঘটেনি। কিছু ঘটার সুযোগও নাই। এই রাঙামাটির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশকে জানাতে চাই, সারা বাংলাদেশ রাঙামাটি জেলার মত হলে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে।
কাপ্তাই সাংস্কৃতিক কর্মী উদয় শংকর পাল বলেন, রাত জেগে মন্দির ও বাড়িঘর পাহাড়া দিতে হচ্ছে। নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হচ্ছে। কিন্তু এটা কতদিন করব? নিজেদের জীবিকার জন্য আমাদের বের হতে হবে না?
দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, হামলা বন্ধ, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বিচার দাবি জানিয়েছেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের রাঙামাটির সমন্বয়ক সৈকত বিশ্বাস অন্তু। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চাইতে পার্বত্য অঞ্চল ভিন্ন। এখানে আমরা সবাই সম্প্রীতিতে ছিলাম। কিন্তু আজকে আমাদের মঠ-মন্দিরগুলো রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। অন্যান্য ধর্মের ভাইয়েরা এসে পাহারা দিচ্ছেন। কেন আজকে আমাদের আতংকে থাকতে হবে। রাঙামাটিতেও আমাদের সনাতনী ভাইদের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। সেই ১৯৭১ সালের পর থেকে এখনও এই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা কী দেশের নাগরিক না? স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি? এদেশের স্বাধীনতায় আমাদের কোন ভূমিকা নাই? কিছু হলেই বলে দেশ ছাড়ো, দেশটা কী আমাদের না?
জিয়াউর রহমান জুয়েল/এমএ/