বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের পতনের একসপ্তাহ পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানায় পুলিশিং কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরিসহ অভিযোগ গ্রহণ করা শুরু হয়েছে।
নগরের জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ বন্দর এলাকায় সড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এতে পূর্বের শৃঙ্খলা ফিরে আসে সড়কে। তবে সকালের দিকে সড়কে যানবাহন সংখ্যা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।
জিইসি মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা (টিআই) নাদিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, আমাদের উপর হামলা হয়েছিল, থানায় ও পুলিশ বক্সে হামলা হয়েছিল, আমাদের অনেক সদস্যের বাড়িঘরে পর্যন্ত হামলা হয়েছিল। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। আমরা সড়কে আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। তবে সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছি। এতে ছাত্ররাও আমাদের সহযোগিতা করছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, চকবাজার, বায়েজিদ, খুলশি, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, ডবলমুরিং, বাকলিয়া, কোতোয়ালি, সদরঘাট, হালিশহর, বন্দর, ইপিজেট, পতেঙ্গা, কর্ণফুলী থানায় কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ।
সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে দেখা যায়, কসমোপলিটন এলাকা থেকে সাধরণ ডায়েরি করতে থানায় এসেছেন সৈয়দ মিয়া নামের এক ব্যক্তি। মোবাইলে হুমকী দেওয়ার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন থানায়। কয়েকদিন আগে হুমকি দিলেও থানা বন্ধ থাকায় জিডি করতে পারেন নি।
সকালে পুলিশের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থীও দায়িত্ব পালন করছেন থানায়। পুলিশের মনোবল ফিরে আসার জন্য পুলিশের পাশাপাশি থানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কাজ করছে। একই সঙ্গে নগরের মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬টি থানায় কার্যক্রম চলছে।
পাঁচলাইশ থানা অফিসার ইনচার্জ সন্তোষ কুমার চাকমা খবরের কাগজকে বলেন, থানার কার্যক্রম শুরু করেছি। অনেক পুলিশ এখনও থানায় এসে পৌঁছতে পারেন নি। তবে সবার সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা হয়েছে সবাই থানায় যোগ দিবেন। এতদিন কার্যক্রম না চলায় অনেক কাজ জমে গেছে। তা এক সঙ্গে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট রাতে অগ্নিসংযোগ হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশ শূন্য হয়ে যায় মহানগরের সব থানা। অনেক থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, লুটপাট হয় থানার অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট।
এদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুনির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, আমি বিভিন্ন কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানো চেষ্টা করেছি। আমি বলেছি পুলিশ শিক্ষার্থীদের শস্ত্রু নয়, উধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে অর্ডার দিয়েছে আমরা সে অর্ডার পালন করেছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। আমরা কেন শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ ভাববো। শিক্ষার্থীরা আমাদের ভাই, প্রতিবেশি আত্মীয়স্বজন। আমাদের উর্ধ্বতনরা হুকুমের মাধ্যমে পুলিশ ছাত্র যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা এ দেশটা সুন্দরভাবে গড়তে চাই। দেশকে নতুনভাবে এগিয়ে নিতে চাই।
পুলিশ সদস্যরা বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। আগামীতে জনগণের পক্ষের হয়ে কাজ করতে চায় পুলিশ। কোন নেতা, এমপি মন্ত্রীর গোলাম হয়ে পুলিশ কাজ করতে চায় না। আমরা কোন রাজনৈতিন দলের হয়ে কাজ করতে চাই না।
দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষত অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চায় পুলিশ সদস্যরা।
মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, এতো দিন শিক্ষার্থীরা খুবই সুন্দরভাবে ট্রাফিক সেবা দিয়েছে কিন্তু থানার কার্যক্রম চালাতে পারিনি। সোমবার সকাল থেকে থানা কার্যক্রম চালু হয়েছে, ট্রাফিক পুলিশও তাদের দায়িত্বে ফিরেছে। এতে সহযোগিতা করছে শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে নেমেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নতি হয়েছে।
আবদুস সাত্তার/এমএ/