শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে অনেক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য নিহত হন। আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন।
সোমবার (১২ আগস্ট) কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, বাগেরহাট, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, ফেনী, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশ তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া জেলার সদর মডেল থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী পুলিশ সদস্যদের তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এ সময় জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন এই পুলিশিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই ভবনটি জেলা সদর পুলিশ ফাঁড়ির জন্য তৈরি করা হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে সদর মডেল থানায় কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। ভবনের সংস্কার চলছে। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে থানার কার্যক্রম এখানে চলবে। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে।’
মেহেরপুর: দীর্ঘ কর্মবিরতির পর এবার মাঠে ফিরল পুলিশ। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বহর বের হয়। এ সময় তারা শহরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আহসান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল করিমসহ বিভিন্ন থানার ওসি টহলে অংশ নেন।
পুলিশ মাঠে নামায় আবারও স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণ। শহরের কলেজ মোড়ের বাসিন্দা কোবিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরাপত্তার কাজে দেখতে না পেয়ে অনেকেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। গত কয়েক দিনে চোর-ডাকাতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’
বাগেরহাট: বাগেরহাটে কাজে ফিরেছে পুলিশের সব ইউনিট। গতকাল সকাল থেকে জেলার ৯টি থানায় পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। এ ছাড়া জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। জেলা পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, মো. রাসেলুর রহমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সদর মডেল থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। বিভিন্ন সেবাপ্রত্যাশীরা থানায় আসছেন। আমরা তাদের সেবা দিচ্ছি। পুলিশ সব সময় জনগণের পাশে রয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর: দীর্ঘ আট দিন পর শৃঙ্খলা ফেরাতে লক্ষ্মীপুরের সড়কে নেমেছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। গতকাল সকাল থেকে জেলা সদরের উত্তর তেমুহানী, দক্ষিণ তেমুহানী, ঝুমুর মোড়সহ শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা যায় তাদের। এদিকে জেলার ছয়টি থানার মধ্যে চারটি থানায় পুরোদমে দাপ্তরিক কাজ, মামলা ও তদন্ত কার্যক্রমসহ নাগরিক সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানা-পুলিশ কাজ শুরু করেছে। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, ‘জেলার ছয়টি থানায় পুলিশ কাজে ফিরেছে। দাপ্তরিক কাজ, মামলার তদন্ত এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিতে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।’
ভোলা: কয়েক দিন ধরে চলা কর্মবিরতি শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে ফিরেছে ভোলা জেলা পুলিশ। শুরু হয়েছে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম। জেলার থানাগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের আইনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ ডায়েরি (জিডি), হারানো জিডি, মামলা নেওয়াসহ থানাগুলোতে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এক সপ্তাহ পর কাজ শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশ। তাদের সঙ্গে আছেন শিক্ষার্থীরাও। অধিকাংশ সড়কে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে। এ ছাড়া কিছু পয়েন্টে এখনো শিক্ষার্থীরাই মূল ভূমিকা পালন করছেন। জেলা পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামানের পক্ষ থেকে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
ফেনী: ফেনীতে ছাত্র-জনতা ও রাজনীতিবিদদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে ফাঁড়িতে প্রবেশ করে পুলিশ। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ফাঁড়ির কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়। গতকাল সকালে জেলা শহরের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়ো হন। এ সময় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কিছু বিপথগামী সদস্যের কারণে আজ আমরা এ ধরনের একটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি। ভবিষ্যতে আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে। সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।’
নড়াইল: মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে কাজে যোগ দিলেন নড়াইল জেলার পুলিশ সদস্যরা। গতকাল নড়াইল পুলিশ লাইনস থেকে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করেন পুলিশ সদস্যরা। শোভাযাত্রাটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।