অবসর সময় কাটাতে কিংবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পাড়ে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। তাদের সুবিধার জন্য এক যুগ আগে নির্মাণ করা হয় কয়েকটি আধুনিক শৌচাগার। কিন্তু অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত শৌচাগারগুলো অজ্ঞাত কারণে আজও চালু করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত নদীর পাড়ে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা পড়ছেন বিপাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনার ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় নদীর তীর সংরক্ষণ (সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। সিরাজগঞ্জ শহরের মতি সাহেবের ঘাট থেকে কাজিপুর নৌকাঘাট পর্যন্ত ২.৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পে ব্যয় হয় ৩৩৫ কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালে এ বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়। যমুনা নদীর তলদেশে ১০০ থেকে ১২০ মিটার পর্যন্ত সিসি ব্লক দিয়ে গেঁথে তোলা হয় বাঁধটি।
উপরিভাগে নির্মাণ করা হয়েছে ২০ মিটার প্রশস্ত পাকা সড়ক। বাঁধটি নির্মাণের পর থেকেই সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ এটি দেখতে আসেন। একপর্যায়ে এটি মানুষের বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়। পরে ২০১০ সালে সেখানে শৌচাগার তৈরি করে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে যমুনার বুকে আড়াআড়িভাবে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। ক্রসবারগুলোর দৈর্ঘ্য এক থেকে প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটারের মতো। যেটা মূল বাঁধ থেকে লম্বালম্বিভাবে যমুনা নদীর মাঝখানে গিয়ে শেষ হয়েছে। শহরের উত্তরে শৈলবাড়ী ও খোকশাবাড়ী এলাকায় ১ ও ২ নম্বর ক্রসবার, মালশাপাড়া মহল্লায় ৩ নম্বর ও শহরের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে পাইকপাড়া এলাকায় ক্রসবার ৪ এর অবস্থান। এসব বাঁধও এখন বিনোদনপ্রেমীদের প্রিয় লোকেশনে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধগুলো এখন পর্যটকদের মূল বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে বেড়াতে আসা মানুষের ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ক্রসবারগুলোতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। নেই লাইটিং সিষ্টেম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস থেকে হাট পয়েন্ট পর্যন্ত সামান্য কিছু লাইটিংয়ের ব্যবস্থা ও আনসার দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। প্রায় এক যুগ আগে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার হাট পয়েন্ট এলাকায় তিনটি পয়েন্টে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করা হয়, কিন্তু আজও সেগুলোর তালা খোলা হয়নি।
নদীর পাড়ে বেড়াতে আসা আমিনুল ইসলাম জানান, হাট পয়েন্ট এলাকার শৌচাগারগুলো সব সময় বন্ধ পাওয়া যায়। সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো কাদের জন্য বানানো হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে এসে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন।
বগুড়া থেকে ঘুরতে আসা আদিল হোসেন জানান, যমুনার পাড়ে এমন দর্শনীয় জায়গা আমি আগে দেখিনি। এখানে বেড়াতে এসে ভালো লাগছে। সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে শৌচাগার না থাকায় খুবই অসুবিধা হচ্ছে।
শারমিন সুলতানা নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, নদীর পাড়ে বেড়াতে এসে মন ভালো হয়ে গেছে। এখানকার সবকিছুই ভালো। তবে শৌচাগার চালু না থাকায় একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এগুলো খুলে দিলে খুব ভালো হতো। হাট পয়েন্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। শুরু থেকেই দেখছি শৌচাগারগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, হাট পয়েন্ট এলাকায় ওয়াশ ব্লক বা শৌচাগারগুলো আমরা নির্মাণ করিনি। আমরা ক্রসবার-৩ এ দৃষ্টিনন্দন বাঁধ নির্মাণ করে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখানে বিদ্যুতের লাইন এখনো দেওয়া হয়নি। শিগগিরই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুর রউফ মুক্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার মন্তব্য জানা যায়নি।