ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত
ছবি: খবরের কাগজ

সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সাম্প্রদায়িক নিপীড়নকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে ভিন্ন খাতে উপস্থাপনের প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শত শত মানুষ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর:

ঢাকা: ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু মোর্চা, বাংলাদেশ হিন্দু গণজাগরণ মঞ্চ, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন (বাংলাদেশ), সনাতন অধিকার মঞ্চের ব্যানারে সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ মানুষ। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, হিন্দু জেগেছে’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’ ইত্যাদি। 

পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সনাতন অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এতে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন অধিকার মঞ্চের সার্বিক তত্ত্বাবধানকারী সুমন কুমার রায়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন অনতিবিলম্বে বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ; জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পৃথক নির্বাচনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন; সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন; এ ছাড়া হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরকরণ; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; শারদীয় দুর্গাপূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা। 

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন।

গোপালগঞ্জ: আট দফা দাবি বাস্তবায়নে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক লাখের বেশি মানুষ। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন কমিটি ও কালীবাড়ীর যৌথ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

সোমবার সকাল ১০টা থেকে গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলা থেকে শত শত মানুষ মিছিল নিয়ে গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীয় কালীবাড়ীতে এসে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষাভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। দুপুরের মধ্যে এক লাখের বেশি মানুষ সমবেত হন সেখানে। 

পরে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। গোপালগঞ্জের কুয়াডাঙ্গা থেকে এলজিইডির মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানববন্ধন করা হয়। 

নড়াইল: নড়াইল জেলার সনাতনী শিক্ষার্থী ও জাগ্রত সনাতন সমাজের আয়োজনে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের বাঁধাঘাট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

রাঙামাটি: বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে হিন্দুদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন রাঙামাটির সনাতনীরা। সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এতে অংশ নেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাঙামাটি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ব্যানারে এ সমাবেশ হয়। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে তা বন্ধে আট দফা দাবি জানানো হয়। 

এর আগে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। 

রাঙামাটি পুরোহিত সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পদক ও রিজার্ভ বাজার শ্রী শ্রী গিতাশ্রমের প্রধান পুরোহিত পুলক চক্রবর্তী বলেন, ‘রাঙামাটি অসাম্প্রদায়িক জেলা। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে বাস করি। এখানে সে রকম কিছু ঘটেনি। কিছু ঘটার সুযোগও নেই। এই রাঙামাটির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশকে জানাতে চাই, সারা বাংলাদেশ রাঙামাটি জেলার মতো হলে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে।’

ঝালকাঠি: সোমবার বিকেলে সচেতন হিন্দু সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে অবস্থান নেন হিন্দুরা। এ সময় তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে নানা স্লোগান দেন। অবস্থান চলাকালে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল বিকেলে শহরের চৌমোহনা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি শহরের হবিগঞ্জ রোড, মৌলভীবাজার রোড, স্টেশন রোড, কলেজ রোড প্রদক্ষিণ করে। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে বক্তারা সারা দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

রাজশাহী: সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী কোর্ট শহিদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করা হয়। এতে বক্তারা বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দল তাদের ব্যবহার করে। তবে তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কেউ পাশে দাঁড়ায় না। গ্রামাঞ্চলে লোকচক্ষুর আড়ালে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হামলা চলছে। পুকুরের মাছ লুট হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল): সোমবার উপজেলা হিন্দু পরিবার, সনাতন সংঘ, গীতাস্কুল ও ভূঞাপুর হিন্দু যুব সংঘের আয়োজনে বেলা সাড়ে ১১টায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পৌরশহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে ছয় দফা দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লেখা স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়।

এ সয়ম উপস্থিত ছিলেন ভূঞাপুর হিন্দু সংঘের সাবেক সভাপতি রুহিদাস পাল, গীতাস্কুলের সভাপতি অভিজিৎ ঘোষ, সনাতন সংঘের সভাপতি সঞ্জয় পাল, সহসভাপতি সুদীপ্ত দেবনাথ প্রমুখ।

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, মোলা বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০১ পিএম
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, মোলা বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত
ছবি : খবরের কাগজ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে মোংলা বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বহাল রয়েছে। 

শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত উপকূলে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোংলায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

মোংলা বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, ভারী বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বন্দরে অবস্থানরত দুটি সারবাহী জাহাজের পণ্য খালাস ও পরিবহনের কাজ। তবে স্বাভাবিক রয়েছে অন্য ৫টি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামা।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাস আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। 

টানা ভারী বর্ষণে এখানকার জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির পানিতে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতাসহ চিংড়ি ঘের তলিয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় স্থানীয়রা। 

বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় লোকজনের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। শহরে দোকাটপাট খুলেছে কম। বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

রিফাত মাহামুদ/জোবাইদা/অমিয়

হাতিয়ায় লাইটার জাহাজ থেকে পড়ে নিখোঁজ ১

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৯ পিএম
হাতিয়ায় লাইটার জাহাজ থেকে পড়ে নিখোঁজ ১
লাইটার জাহাজ থেকে পড়ে নিখোঁজ মো. রাকিব হোসেন

হাতিয়ার ভাসানচরের কাছে লাইটার জাহাজ থেকে পড়ে মো. রাকিব হোসেন (১৮) নামে একজন নিখোঁজ হয়েছেন।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে হাতিয়ার নলচিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সফিকুর রহমান খান।

নিখোঁজ রাকিব হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত দুলাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি এফবি সানি-৫ নামে জাহাজে খালাসি হিসাবে কর্মরত ছিল।

জাহাজের কোয়াটার মাস্টার মামুন খবরের কাগজকে বলেন, ‘জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে গম নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। ভাসানচরের পূর্ব পাশে এলে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়েন। এ সময় রাকিব জাহাজের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে ঢেউয়ের আঘাতে সাগরে পড়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সাগর উত্তাল থাকায় তাকে ভালোভাবে খোঁজাও যায়নি। পরে জাহাজ নিয়ে তারা ভাসানচর চলে আসেন।’

রাকিবের মামাতো ভাই রাসেল জানান, রাকিব সাগরে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি মোবাইলে জাহাজ থেকে পরিবারকে জানিয়েছেন। তার বাবা বেঁচে নেই। তারা দুই ভাই অন্যজনও জাহাজের সুকানি হিসাবে কাজ করেন। এই সংবাদে রাকিবের বাড়িতে মাতম চলছে।

নলচিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সফিকুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এফবি সানি-৫ জাহাজের কোয়াটার মাস্টার মামুনের সঙ্গে কথা হয়েছে। নিখোঁজ রাকিবের সন্ধানে আমরাও চেষ্টা করছি। ভাসানচর কোস্টগার্ডকে জানানো হয়েছে। সকাল থেকে নদী উত্তাল রয়েছে। যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ। এতে নিখোঁজ রাকিবকে উদ্ধারে নদীতে যাওয়া যাচ্ছে না।’

সাকিব/ইসরাত চৈতী/

সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিপুল পরিমাণ রুপিসহ যুবক আটক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিপুল পরিমাণ রুপিসহ যুবক আটক
রুপিসহ আটক মোহাম্মদ হৃদয় মিয়া। ছবি: খবরের কাগজ

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তে ১৯ লাখ ৫০ হাজার রুপিসহ বাংলাদেশি এক যুবককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিজিবি। 

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তের বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে এই ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। 

আটক যুবকের নাম মোহাম্মদ হৃদয় মিয়া (২৫)। তার বাড়ি উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভাওয়ালীপাড়া গ্রামে। 

বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট ব্যাটালিয়নের অধীনে বাংলাবাজার বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবুল বাসার আজাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১২৩৫/৪-এস মেইন পিলারের ৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় অবৈধভাবে ভারত গিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ হৃদয় মিয়াকে আটক করা হয়। পরে তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে তল্লাশি করে ১৯ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয়।

ভারতীয় মুদ্রা থাকার বিষয়ে বিজিবিকে হৃদয় জানায়, বাদরেন নামে এক ভারতীয়র কাছে মাছ বিক্রি করে এই রুপি নিয়ে ফিরছিলেন তিনি।

৪৮ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতীয় রুপিসহ আটক যুবককে দোয়ারাবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছে।’

উজ্জ্বল মেহেদী/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদ
ছবি : খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আত্মগোপনে থাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন ট্রেড লাইসেন্স এবং নাগরিক সনদ। প্যাডে এখনো শেখ হাসিনা সরকারের থিম স্লোগান ব্যবহার করছেন। যাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের যোগাযোগ রয়েছে, তাদের কেউ কেউ সনদ পাচ্ছেন। তবে এই সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, মেয়র এবং চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশির ভাগ ইউপি সদস্যরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। যোগাযোগ রাখছেন না কেউই। চেয়ারম্যানদের ব্যবহৃত মোবাইলও বন্ধ। 

এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকসেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। জরুরি প্রয়োজনেও পাচ্ছেন না কোনো সনদ। তবে যাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে, তারাই এ সেবা পাচ্ছেন। 

উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান। ৩৮ দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি। থাকছেন না কুমিরা এলাকার নিজ বাড়িতেও। তবুও এক ব্যবসায়ীকে গত ১ সেপ্টেম্বর একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন তিনি। অজ্ঞাত জায়গা থেকেই এই ট্রেড লাইসেন্সটি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে পরিষদে না এসেও ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদি ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারেন, তাহলে পরিষদে কেন আসছেন না, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মধ্যে।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের কিউআর কোডসংবলিত একটি ট্রেড লাইসেন্স নুর-সু বিতান নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দেন চেয়ারম্যান। এর লাইসেন্স নম্বর-১৪৭৫। প্রোপ্রাইটরের নাম মোহাম্মদ নুরুল আবছার। তিনি কুমিরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে। লাইসেন্স ফি বাবদ তিনি যে টাকা নিয়েছেন সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কি না নিশ্চিত নয় ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীরা। লাইসেন্সের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

এদিকে প্যাডের ওপর লেখা ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র, ‘শেখ হাসিনার দর্শন, সব মানুষের উন্নয়ন’। যদিও শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। কুমিরার চেয়ারম্যান এখনো কেন শেখ হাসিনা সরকারের থিম ব্যবহার করছেন। এটি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক।

এ বিষয়ে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শোভন কান্তি ভৌমিক বলেন, ‘পরিষদে চেয়ারম্যান আসতে পারছেন না, সেটা তো সবাই জানেন। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্য সনদপত্র স্বাক্ষর করে পাঠান তিনি। তবে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সেবা যাতে অব্যাহত থাকে সেই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা আছে। একটু দেরি হলেও নাগরিকসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিষদে কয়েকজন ইউপি সদস্য মাঝে মধ্যে আসেন।’

এদিকে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্যও একই রকম। ৫ আগস্টের পর থেকেই পরিষদে আসেননি বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ্ মিয়াজি। ওয়ারিশ সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সনদে স্বাক্ষর দেন চেয়ারম্যান। সেবাগ্রহীতা ও পরিষদের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে তিনি সম্ভবত শহরেই বসবাস করছেন। এই পরিষদে শুধু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা সমাজসেবক কর্মকর্তা লুৎফুনন্নেছা বেগম।

উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম গত জুন মাসে হজে গিয়েছিলেন। তিনি যাওয়ার আগে দুটি প্যাডে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছিলাম। এর মধ্যে একটি প্যাড শেষ আরেকটি আছে। তবে স্বাক্ষর আগের হলেও বর্তমানের তারিখ দেওয়া হচ্ছে। পরিষদে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে আছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম।’

কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, সৈয়দপুর ও ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাদের পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

মূল হামলাকারীরা অধরা নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরবেন না চিকিৎসকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ এএম
নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরবেন না চিকিৎসকরা
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় স্থবির চিকিৎসাসেবা। সংগৃহীত

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার পরেও মূল হামলাকারী আসিফ হাসনাত জিহাদ ও আবু জিদানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামলাটি করেন হামলার শিকার কক্সবাজার ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সজীব কাজী। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে দুজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। 

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোগীর মৃত্যুর পর জিহাদ, তামিম, তাহসিন ও জিদান সিসিইউতে প্রবেশ করে প্রথমে চিকিৎসকের কক্ষ ভাঙচুর চালায়। পরে চিকিৎসক সজীবকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে চারতলা থেকে নিচে নামিয়ে মারধর করতে থাকেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাকিরা। এ সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার তাহসিন মোহাম্মদ রেজা, তামিম মোহাম্মদ রেজা, আসিফ হাসনাত জিহাদ ও আবু জিদান। তাদের মধ্যে জিহাদ, জিদান ও তাহসিন ছাত্রদলের কর্মী। তাদের ছাত্রদলের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া তামিম শিবিরের সমর্থক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মছিউর রহমান বলেন, ‘সব আসামিকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

মামলায় আসামিদের নাম কেন উল্লেখ নেই জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিন ঞো বলেন,  ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করলেও তাদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আমরা তাদের সহযোগিত করছি। মূল আসামিরা গ্রেপ্তার  না হওয়া পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক কাজে ফিরবে না।’

হামলাকারীরা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী হওয়ায় কোনো চাপে ছিলেন কি না জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘কে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা নেতা, তা আমার দেখার বিষয় না। জড়িত কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া সরকারি সম্পত্তি নষ্টের দায়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হবে।’ 

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে পুলিশ। ইতোমধ্যে হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবা চালু থাকলেও তা চলছে খুব সীমিত। এতে রোগীরা বিপাকে পড়েছে।