সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সাম্প্রদায়িক নিপীড়নকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে ভিন্ন খাতে উপস্থাপনের প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শত শত মানুষ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর:
ঢাকা: ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু মোর্চা, বাংলাদেশ হিন্দু গণজাগরণ মঞ্চ, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন (বাংলাদেশ), সনাতন অধিকার মঞ্চের ব্যানারে সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ মানুষ। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, হিন্দু জেগেছে’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’ ইত্যাদি।
পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সনাতন অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এতে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন অধিকার মঞ্চের সার্বিক তত্ত্বাবধানকারী সুমন কুমার রায়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন অনতিবিলম্বে বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ; জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পৃথক নির্বাচনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন; সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন; এ ছাড়া হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরকরণ; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; শারদীয় দুর্গাপূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন।
গোপালগঞ্জ: আট দফা দাবি বাস্তবায়নে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক লাখের বেশি মানুষ। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন কমিটি ও কালীবাড়ীর যৌথ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলা থেকে শত শত মানুষ মিছিল নিয়ে গোপালগঞ্জ কেন্দ্রীয় কালীবাড়ীতে এসে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষাভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। দুপুরের মধ্যে এক লাখের বেশি মানুষ সমবেত হন সেখানে।
পরে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। গোপালগঞ্জের কুয়াডাঙ্গা থেকে এলজিইডির মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানববন্ধন করা হয়।
নড়াইল: নড়াইল জেলার সনাতনী শিক্ষার্থী ও জাগ্রত সনাতন সমাজের আয়োজনে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের বাঁধাঘাট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
রাঙামাটি: বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে হিন্দুদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন রাঙামাটির সনাতনীরা। সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এতে অংশ নেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাঙামাটি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ব্যানারে এ সমাবেশ হয়। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে তা বন্ধে আট দফা দাবি জানানো হয়।
এর আগে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
রাঙামাটি পুরোহিত সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পদক ও রিজার্ভ বাজার শ্রী শ্রী গিতাশ্রমের প্রধান পুরোহিত পুলক চক্রবর্তী বলেন, ‘রাঙামাটি অসাম্প্রদায়িক জেলা। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে বাস করি। এখানে সে রকম কিছু ঘটেনি। কিছু ঘটার সুযোগও নেই। এই রাঙামাটির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশকে জানাতে চাই, সারা বাংলাদেশ রাঙামাটি জেলার মতো হলে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে।’
ঝালকাঠি: সোমবার বিকেলে সচেতন হিন্দু সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে অবস্থান নেন হিন্দুরা। এ সময় তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে নানা স্লোগান দেন। অবস্থান চলাকালে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল বিকেলে শহরের চৌমোহনা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি শহরের হবিগঞ্জ রোড, মৌলভীবাজার রোড, স্টেশন রোড, কলেজ রোড প্রদক্ষিণ করে। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে বক্তারা সারা দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
রাজশাহী: সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী কোর্ট শহিদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করা হয়। এতে বক্তারা বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দল তাদের ব্যবহার করে। তবে তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কেউ পাশে দাঁড়ায় না। গ্রামাঞ্চলে লোকচক্ষুর আড়ালে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হামলা চলছে। পুকুরের মাছ লুট হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল): সোমবার উপজেলা হিন্দু পরিবার, সনাতন সংঘ, গীতাস্কুল ও ভূঞাপুর হিন্দু যুব সংঘের আয়োজনে বেলা সাড়ে ১১টায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পৌরশহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে ছয় দফা দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লেখা স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়।
এ সয়ম উপস্থিত ছিলেন ভূঞাপুর হিন্দু সংঘের সাবেক সভাপতি রুহিদাস পাল, গীতাস্কুলের সভাপতি অভিজিৎ ঘোষ, সনাতন সংঘের সভাপতি সঞ্জয় পাল, সহসভাপতি সুদীপ্ত দেবনাথ প্রমুখ।