জামালপুর পৌর শহরে প্রচুর বহুতল ভবন থাকলেও সেগুলোতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক কাজে আসা পৌরবাসীকে মানুষের চলার পথের ওপরেই গাড়ি, মোটরসাইকেল রাখতে হয়। এ ছাড়া ফুটপাত দখল করে তার ওপর বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ দোকান। বাধ্য হয়ে সবাইকে রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়। এমনিতেই অপ্রশস্ত সড়ক তার ওপর গাড়ি পার্কিং আর ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে রাস্তা আরও সরু হয়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মানুষের হাঁটাচলা। সব মিলিয়ে পুরো শহর তখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় যানজট। ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
অধিকারকর্মীসহ স্থানীয়দের দাবি, বিকল্প স্থানে হকারদের পুনর্বাসন, গাড়ি পার্কিং নির্মাণ আর ফুটপাট দখলমুক্ত হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে। যদিও প্রশস্ত সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ এবং হকার্স মার্কেট স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র।
দেড় শ বছরের পুরোনো জামালপুর পৌর শহর। সময়ের সঙ্গে শহরের পরিধি বাড়লেও গ্রহণ করা হয়নি আধুনিক নগর পরিকল্পনা। শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে রয়েছে বেশির ভাগ ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি রয়েছে ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, একাধিক বাজার, বিভিন্ন বিপণি বিতান ও অন্যান্য দোকানপাট। তাই এখানে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ও যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। যানজটের কারণে দুর্ভোগের সঙ্গে সময়ের অপচয় হয়। বকুলতলা, ঢাকাইপট্টি, সকাল বাজার, তমালতলা, মেডিকেল রোড, দয়াময়ী মোড়, গেটপাড়, পাঁচরাস্তাসহ জামালপুর শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে একই চিত্র পাওয়া যায়।
কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের প্রতিবেদকের। তাদের একজন ফুয়াদ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমাদের রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়। হকারদের উচ্ছেদ করার পাশাপাশি গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা যেত।’ একই কথা বলেন আজাদ ও মিলি আক্তার নামে দুই পথচারী।
চাকরিজীবী ফয়সাল বলেন, ‘ব্যাংকে কিছু কাজ ছিল। পার্কিং না থাকায় নিজের গাড়ি ফুটপাতের ওপর রাখি। ফুটপাত বা সড়কের ওপর গাড়ি রাখা বেআইনি হলেও বাধ্য হয়ে পার্কিং করেছি। তবে এভাবে গাড়ি রাখাও নিরাপদ নয়। এতে গাড়ি চুরির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে।’
ফুটপাতের ওপর তৈজসপত্র, কাপড়, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান করে অনেকে ব্যবসা করেন। তাদের একজন মো. শাহজাহান বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। তখন সংসার চালাতে হিমশিম খাই। আমরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করি। দোকান নিয়ে ব্যবসা করার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। জীবন-জীবিকার তাগিদে ফুটপাতে ব্যবসা করি। সরকার যদি হকারদের জন্য মার্কেট করে দেয় তাহলে আমরা আর ফুটপাতে বসব না।’
‘মুক্ত হাঁটার পথ আন্দোলন’র আহ্বায়ক ইয়াসীন ইবনে মাসুদ বলেন, ‘যানজট এড়ানোর জন্য ফুটপাত জরুরি। কিন্তু পণ্য সাজিয়ে রাখা, হকারদের দোকান স্থাপন, গাড়ি পার্কিং করাসহ বিভিন্ন কারণে ফুটপাত দখল হয়ে থাকে। চাইলেও এর ওপর দিয়ে হাঁটা যায় না। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে ফুটপাতগুলোকে মুক্ত রাখা। এ ছাড়া যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে নতুন ফুটপাত তৈরি করা।’
জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, শহরের গেটপাড় এলাকায় রেলওয়ের ওভার পাস নির্মাণকাজ একেবারে শেষের দিকে। অন্যদিকে শহরের বুড়ির দোকান মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়ক প্রশস্ত করার কাজও চলমান রয়েছে। এরপর সেখান থেকে ফৌজাদারী মোড় হয়ে পাথালিয়া পর্যন্ত বাকি সড়কটুকু প্রশস্ত করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই কাজটি শেষ হওয়ার পর ড্রেনের ওপর আধুনিক মানের ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। হকারদের জন্য শহরের শত বছরের পুরোনো রানীগঞ্জ বাজারে হকার্স মার্কেট স্থাপনের কাজও চলমান রয়েছে।
পৌর মেয়র আরও বলেন, জামালপুর শহরে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও আমাদের মানসিকতার উন্নয়ন হয়নি। প্রতিটি ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গা রাখার জন্য ভবন মালিকদেরও মানসিকতার উন্নয়নের পরামর্শ দেন পৌর মেয়র।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর পৌর এলাকায় পাকা সড়ক রয়েছে ৯০ কিলোমিটার, আর ড্রেন আছে ৪৪ কিলোমিটার। ড্রেনের ওপরেই মূলত ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। এরই মধ্যে ড্রেনের ওপর সর্বনিম্ন তিন ফুট চওড়ার ৩০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ড্রেন ছাড়া সর্বনিম্ন ৫ ফুট চওড়ার ফুটপাত রয়েছে মাত্র ৮ কিলোমিটার।