আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো ঢাকার ধামরাই, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সাতকানিয়া উপজেলার স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবা-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। দু-একজন ছাড়া কোনো জনপ্রতিনিধি ফেরেননি নিজ কর্মস্থলে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরের দিকে ধামরাই পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্বৃত্তদের হামলায় মেয়র গোলাম কবিরের ব্যবহৃত গাড়ি, ময়লা বহনের ট্রাক ও ভ্যান ধ্বংস হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর মেয়র, কাউন্সিলর কেউই আসেন না। এতে সেবা নিতে আসা লোকজনরা জনপ্রতিনিধিদের না পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে’।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পৌরসভার কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। মেয়র, কাউন্সিলর কেউই নেই। আমরা কয়েকজন এসে দরজা খুলে বসে থাকি। কারণ অফিস খুলতে হবে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট না থাকায় নাগরিক সেবাও বন্ধ।’
এদিকে গত সোমবার সরেজমিনে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, সেখানে উদ্যোক্তা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারিরা উপস্থিত থাকলেও নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ২টি পৌরসভার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, নিজ কক্ষে কর্মহীন বসে আছেন উদ্যোক্তা (ডিজিটাল তথ্য সেবা) মো. নিজাম উদ্দিন। এ সময় তার কক্ষে কোনো সেবাপ্রার্থীর দেখা মেলেনি।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও উদ্যোক্তা-প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও, নেই জনপ্রতিনিধিরা। গত ৫ আগস্টের পর তারা সবাই আত্মগোপনে আছেন। এতে সাধারণ মানুষ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বারৈয়ারহাট পৌরসভা কার্যালয় পরিদর্শন করেছি। সেখানে উদ্যোক্তা কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়েছে, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা হয়েছে। দ্রুত পৌরসভার কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়ও একই দৃশ্য দেখা গেছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাই খুব শিগগিরই জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসবেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এরপরও যদি তারা কর্মস্থলে না আসেন, তা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা পলাতক আছেন। এ ছাড়াও সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিলর গেছেন আত্মগোপনে। গত সাত দিন ধরে বেশির ভাগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গা-ঢাকা দেওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যাবতীয় কার্যক্রম।
সাতকানিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদ হোসাইন বলেন, ‘দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনেকেই আত্মগোপনে আছেন। এতে নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘গত সোমবার থেকে সব ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত তারা কার্যক্রম শুরু করবেন। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে সবাই কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন।’