বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ের বিনোদন কেন্দ্রগুলো পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে প্রভাব পড়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে খ্যাত পানাম নগরী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (জাদুঘর), বাংলার তাজমহল, পিরামিড, ফানল্যান্ড পার্কসহ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেই কোনো কোলাহল, নেই ব্যস্ততা। চারিদিক নিস্তব্ধ-নীরবতা। অলস সময় পার করছেন পর্যটন কেন্দ্রসহ হোটেল ও রেস্তোরাঁর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (জাদুঘর) প্রতিদিন ৮০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হতো। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বর্তমানে টিকিট বিক্রি হয় মাত্র ৩০ হাজার টাকার। ঐতিহ্যবাহী পানাম নগরী পরিদর্শনে যেখানে ৫০০ টিকিট বিক্রি হতো, সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০০ টিকিট বিক্রি হয়।
এদিকে বাংলার তাজমহল ও পিরামিডে বর্তমানে ২০ থেকে ৩০টি টিকিট বিক্রি হয়। যেখানে আগে ৫০০ থেকে ১ হাজার টিকিট বিক্রি হতো। এতে চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ঘুরতে আসা নাফিজা আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না। তাই পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে পানাম সিটিতে ঘুরতে এসেছি। এখানে আগে অনেক ভিড় থাকত। কিন্তু বর্তমানে তেমন লোকজন নেই।’
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আলী হাসান বলেন, ‘জাদুঘরে লোকজন নেই বললেই চলে। আসার পথে কোথায়ও কোনো প্রকার চাপ নেই। অনেক শান্তিতে ঘুরতে পেরেছি।’
অটোরিকশাচালক শামীম মিয়া বলেন, ‘আমরা আটোচালকরা প্রতিদিন গাড়ি চালিয়ে রোজগার করে সংসার চালাই। বর্তমানে জাদুঘর ও পানাম নগরীতে কোনো বাইরের লোক নেই। তাই যাত্রী পাচ্ছি না। বাইরের লোক ঘুরতে এলে আমাদের যাত্রী অনেক হয়। আয়ও ভালো হয়। বর্তমানে অনেক কষ্টে আছি।’
এদিকে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (জাদুঘর) অবস্থিত জামদানি শাড়ি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের চলমান অস্থিরতার কারণে পর্যটক নেই বললেই চলে। দুই দিনে মাত্র ৪টা শাড়ি বিক্রি করেছেন। পর্যটকের ওপর তাদের বেচাকেনা নির্ভর করে। পরিবারের খরচসহ কারিগরের খরচ ও দোকান ভাড়া দিতেও খুব কষ্ট হয়।’
লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের (জাদুঘর) উপপরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার বলেন, ‘দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে এখানে পর্যটক তুলনামূলকভাবে কম। ভ্রমণ পিপাসুরা জীবনের নিরাপত্তার কারণে হয়তো বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। আশা করি, অতি দ্রুতই পরিবেশ স্থিতিশীল হবে এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক আসতে শুরু করবে।’
জাদুঘরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পর্যটক কম থাকায় অলস সময় পার করছি। পর্যটকের চাপ না থাকায় বেশির ভাগ সময় মোবাইল ফোনে কেটে যায়।
ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে বিশ্বখ্যাত ‘পানাম নগরীর’ দায়িত্বে থাকা সহকারী কাস্টডিয়ান কর্মকর্তা সিয়াম চৌধুরী বলেন, ‘দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে পর্যটক কমে গেছে। আগে যেখানে ৫০০ টিকিট বিক্রি হতো, সেখানে এখন বিক্রি হয় মাত্র ১০০ টিকিট। তবে চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটক বাড়তে থাকবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে সোনারগাঁ বিশ্বে সুপরিচিত। তাই বিশ্বের নানা স্থান থেকে পর্যটক আসেন এখানে। কিন্তু দেশের অবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা কম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই আশা করা যায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।’