
নোয়াখালী সদরের ধর্মপুরের বাসিন্দা আবদুর রহমান। বন্যার কারণে বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় সন্তানসম্ভবা স্ত্রী নারগিস আক্তারসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত শুক্রবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আশ্রয় নেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) নারগিসের প্রসব বেদনা ওঠে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করেন। ডেকে আনেন ক্যাম্পাসে থাকা এক শিক্ষকের গাইনি চিকিৎসক স্ত্রীকে। তিনি এসে ব্যর্থ হন।
জানান, হাসপাতালে নিতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা তখন নারগিসকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ফুটফুটে একটি ছেলের জন্ম দেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সন্তানসহ মাকে আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়। তারা দুজনই এখন সুস্থ। শিক্ষার্থীরা নবজাতকের নাম দিয়েছেন আজমাইন রহমান প্লাবন।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা নারীর সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে গতকাল রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আঁখিনুর জাহান নীলা নতুন পোশাক ও খাবার নিয়ে তাকে দেখতে যান। প্রতিকূল পরিবেশে নির্বিঘ্নে সন্তান প্রসব করতে পেরে খুশি নারগিস। তিনিসহ তার স্বামী স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আর পুরো ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।
নবজাতকের বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রীর কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ স্মৃতি কখনোই ভুলবার নয়। তাদের (শিক্ষার্থী) সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক তৈরি হলো। আবারও প্রমাণিত হলো, মানুষ মানুষের জন্য। আমার স্ত্রী ও ছেলে ভালো আছে। তাদের জন্য দোয়া করবেন। ইউএনও ম্যাডামও আমার ছেলেকে দেখতে এসেছেন। আমি তার কাছেও কৃতজ্ঞ।’
প্লাবনের মা নারগিস আক্তার বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা হলে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাকে আর আমার বাচ্চাকে আদর-যত্ন করে আগলে রেখেছেন। বন্যার সময় শরীর খারাপ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। শিক্ষার্থীদেরকে আল্লাহ যেন ফেরেশতা হিসেবে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। তাদের অবদান আমি কখনো ভুলব না।’
শিক্ষার্থী জোবাইদা খানম মারিয়া বলেন, ‘আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় নারগিস আক্তারের প্রসব বেদনার খবর পাই। আমাদের বন্ধু নাহিদ ও শাহীনুরের মাধ্যমে তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে তিনি ছেলে শিশুর জন্ম দেন।’
তামান্না ফেরদৌস তাম্মী নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আজকে মা ও নবজাতককে আমাদের হলে নিয়ে এসেছি। বাবুটার একটা নাম আমরা নিজেদের ইচ্ছামতো দিতে পেরেছি। আমাদের অনেক ভালো লাগছে। প্লাবনের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সবসময় যোগাযোগ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আঁখিনূর জাহান নীলা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে প্লাবনসহ দুটি শিশু ছিল। খবর পেয়ে আমি তাদেরকে দেখতে গিয়েছি। শিক্ষার্থীরা খুবই ভালো কাজ করেছেন। তারা প্রশংসার দাবিদার। আমরা যে বাংলাদেশ এতদিন চেয়েছিলাম, শিক্ষার্থীরা মনে হয় আমাদেরকে সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়েরসহ দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৫ হাজার বন্যা দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই আমাদের মেহমান। আমরা সবার খোঁজ খবর নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।