‘আমার জীবনে এমন ভয়াবহ বন্যা আর কখনো দেখেনি। আমার বাপ-দাদারাও দেখেছে বলে মনে হয় না। এক বন্যা আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমার মাটির ঘরটি বন্যায় একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পরিবার নিয়ে কী খাব, কোথায় ঘুমাব কিছু বুঝতেছি না। শুধু পরনের কাপড় নিয়ে কোনোভাবে জান নিয়ে বের হয়েছি।’ আহাজারি করে এসব কথা বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জীবন চন্দ্র দে।
উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা জীবন চন্দ্র দে ও তাপস চন্দ্র। সম্পর্কে দুই ভাই একই ঘরে বাস করতেন। সম্প্রতি বন্যায় বসতঘরে থাকা কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারেনি তারা। কোনোভাবে জীবন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন জীবন, তাপস এবং তাদের পরিবার। তবে বন্যার পানি কমার পর বাড়ি ফিরে দেখতে পান নিজেদের ঘরটি মাটির সঙ্গে একেবারে মিশে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, সেখানে সব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব।
জীবন ও তাপসের মতো এমন অনেকেই এখন সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় অনেকেই ঘরে ফিরছেন। কিন্তু বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বসতঘর। ঘরবাড়ি হারানোর পাশাপাশি হারিয়েছেন সহায়-সম্বলও। ঘরের কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র বের করার সুযোগ হয়নি তাদের।
আর্তনাদ করে জীবন চন্দ্র দে বলেন, ‘জীবনে কখনো কল্পনা করিনি নিজের বসতঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে। পরনের কাপড় ছাড়া কোনো কিছু নিয়ে যেতে পারিনি। ঘরবাড়ি, চাষাবাদের জমি- সব বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় কাজকর্ম করার মতো কিছু নেই। কখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরব, কীভাবে আবার নিজের বসতঘরে উঠব, কিছুই বুঝতেছি না। সরকার আমাদের সহায়তা না করলে আমরা আর বেঁচে থাকতে পারব না।’
জীবনের বড় ভাই তাপস বলেন, ‘আমরা দুই ভাই একসঙ্গে থাকি। মাটির ঘর হওয়ায় বন্যার পানিতে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। আমরা দিনমজুর। দুই ভাই কোনোভাবে চাষাবাদ করে দিন কাটাতাম। বন্যায় মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন পথে বসার মতো অবস্থা।’
কী খাবেন, কী পরবেন আর কোথায় থাকবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অজানা। তাদের মতো এমন অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তাদের আকুতি, সরকার যেন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘আমরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাব।’