ছবি: খবরের কাগজ
সিলেটে গত দুইদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও ভারতের পাহাড়ি ঢল থামেনি। যার ফলে সিলেট জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণের ফলে দ্রুত বাড়ছে সীমান্ত নদী কুশিয়ারার পানি। আর এই কুশিয়ারা নদী বয়ে গেছে সিলেটের জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা দিয়ে। তাই এই তিন উপজেলায় ইতোমধ্যে নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে বাঁধ ভেঙে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এলাকার লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে এবং এই দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ভারতের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার বাঁধে আরও ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। রবিবার (১ জুন) রাত থেকে সোমবার (২ জুন) সকাল পর্যন্ত জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামে প্রায় ১০০ ফুট, বাখরশাল গ্রামে ৫০ ফুট এবং খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকায় ৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে যায়। এছাড়া আরও ২৫ থেকে ৩০টি স্থানে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। যার ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৫০টি গ্রাম।
অপরদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর গ্রাম এলাকায় কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে ওই অঞ্চলের একাধিক গ্রাম ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার আশঙ্কায় বিয়ানীবাজারে ৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিরণ মাহমুদকে প্রধান করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
সুরমা, কুশিয়ারা নদী ছাড়াও সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সারি, সারিগোয়াইন, ডাউকি, ধলাই ও লোভা নদীতে পানি বাড়ছে। ফলে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ উদ্বেবেগের সাথে দিনানিপাত করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা তিনটায় কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ উপজেলার আমলশিদ পয়েন্ট বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৬.৬ মিলিমিটার।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ও সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে বিশেষ করে শিলচরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে যার ফলে সেই পানি আমাদের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে নামছে। এজন্য সিলেটের কয়েকটি উপজেলার মানুষজন বন্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেহেতু সিলেটেও বৃষ্টিপাত কমে গেছে, আশা করছি আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে।
শাকিলা ববি/মাহফুজ