ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে সীমান্ত এলাকা আখাউড়া পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় নমনীয় ঋণে প্রকল্পটির কাজ করছে দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিজ দেশে চলে যাওয়ায় প্রকল্পটি এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এমনকি এ কাজের জন্য তাদের নির্ধারিত কার্যালয়েও কেউ নেই। ফলে সেখান থেকে চুরির ঘটনা ঘটছে। বিকল্প যে সড়ক দিয়ে নিয়মিত যান চলাচল করে সেটির অবস্থাও ভালো নয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই পথ যান চলাচলের অনুযোপযোগী হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীসহ চালকদের ভোগান্তির শেষ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে করিডরের অংশ হিসেবে একটি সড়ক নির্মাণের চিন্তা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরে সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৮ বছরে এসে ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫৭ শতাংশ!
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়ার ধরখার পর্যন্ত অংশে বেশির ভাগ জায়গায় একদিকে দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ওই সব জায়গা খুলে দেওয়ায় অনেকটা স্বস্তি নিয়েই যান চলাচল করছে। কিন্তু যেসব জায়গায় এখনো একদিকের কাজ হয়নি বা একদিকের কাজ হলেও সড়ক সংযোগস্থলের কাজ বাকি রয়েছে সেসব জায়গায় ভোগান্তি বিরাজ করছে। প্রায়ই এসব জায়গায় গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে পড়ছে কিংবা দুর্ঘটনায় গাড়ি আটকে যাচ্ছে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় ৫০.৫৮ কিলোমিটার চারলেন সড়ক, ১৬টি সেতু, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস, তিনটি আন্ডারপাস, ১০টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করার কথা। ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে মহামারি করোনাসহ নানা কারণে সেটি পিছিয়ে পড়ে।
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পটির কাজ আবার পুরোদমে শুরু করে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এর অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের গোল চত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত একপাশে দুই লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়। প্যাকেজ-২-এর অধীনে বিশ্বরোড থেকে ধরখার পর্যন্ত এক পাশের কাজ অনেকাংশেই শেষ হয়। তবে কাজ চলমান অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাইপাস, ঘাটুরা বিরাসার, পৈরতলা, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় মহাসড়কের একপাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
সুলতানপুর এলাকায় কথা হয় বাসচালক আরজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ দুর্ভোগ যে কবে শেষ হবে তা বলা মুশকিল। নানা কারণে এতদিন কাজের দেরি হয়েছে। এখন কিছু কাজ হওয়ার পর শুনছি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনই চলে গেছেন। আমরা চাই সরকার এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিক।’
আরেক চালক আলমগীর মিয়া বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায়ই যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।’
নাসিরনগর থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা উন্নয়ন করতে গিয়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। একটি জাতীয় রাস্তা নির্মাণ করতে এত সময় লাগে?’
আশুগঞ্জ-আখাউড়া ফোরলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ভারতীয়রা নিরাপত্তার কথা বলে নিজ দেশে চলে গেছেন। তাদের সাড়ে তিন শর বেশি লোকের একজনও এখানে নেই। কবে তারা ফিরে আসবেন এ বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
তিনি আরও জানান, প্যাকেজ-১-এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ছিল, সেহেতু বিকল্প সড়ক মেরামতের দায়িত্বও তাদের। এখন তারা না থাকায় কিছু করাও যাচ্ছে না।