ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাজার

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাজার
ঢাকাসহ সারাদেশে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন মুসল্লিরা। ছবি: খবরের কাগজ

দুর্বৃত্তদের হামলার শঙ্কায় সুনামগঞ্জের শাহ্ আরেফিন আস্তানায় গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রশাসন। এদিকে সিরাজগঞ্জে মাজার ভাঙচুর করে কবর খুঁড়ে হাড়গোড় তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মসজিদসহ মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া ঢাকার ধামরাইয়ে বুচাই পাগলার মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় শাহ্ আরেফিন আস্তানায় গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা আস্তানা এলাকায় হামলা করতে পারে, এই আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আস্তানা এলাকায় এ সংক্রান্ত একটি ব্যানার টাঙিয়েছে আস্তানা পরিচালনা কমিটি। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আস্তানা এলাকায় সব প্রকার গান-বাজনা, মাদক সেবন, সাপ্তাহিক ওরসসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হলো। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে এলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে সংস্কৃতিপ্রেমীরা, আস্তানা এলাকায় মাদকসেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে একমত হলেও গান-বাজনা ও জিকির-আজকার নিষিদ্ধ করার বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছেন। 

শাহ্ আরেফিন আস্তানায় দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে গান-বাজনার সঙ্গে জড়িত আছেন বাউল জাকির দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘গান-বাজনার মধ্যে অসামাজিক কিছু দেখছি না। এসব আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ। মনের টানে আমার মতো অনেক ফকির-সন্ন্যাসী-বাউল এখানে গান-বাজনা করতে আসেন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ।’ 

শাহ্ আরেফিন আস্তানা কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন মাজার ও আস্তানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে আস্তানা কর্তৃপক্ষ সতর্কতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি মাজারে হামলা-ভাঙচুর চালানোর পর তিনটি কবর খুঁড়ে সেখান থেকে হাড়গোড়-মাথার খুলি তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে মাজারের জরুরি কাগজপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। এমনকি মাজারের দানবাক্স ও ট্যাংক ভেঙে টাকা লুট করা হয়েছে। গত সোমবার সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে ‘হজরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরীফে’ এ ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাইকিং করে এবং এক দল লোক জমায়েত হয়ে এমন তাণ্ডব চালালেও কেউ তাতে বাধা দেয়নি। এমনকি কেউ এগিয়েও আসেনি। 

গত বুধবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুর করা মাজারের তিনটি কবর খোঁড়া রয়েছে। তার ভেতরে থাকা মানুষের হাড়, মাথার খুলি দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে গেছে। দুইটি খানকা ঘর ও একটি রান্নাঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাজারের নানা সরঞ্জাম। এ ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত থানায় গিয়ে কেউই এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছে সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির।

এ বিষয়ে মাজারের খাদেম শিলন্দা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার সকালে শিয়ালকোল বাজারে এক দল দুর্বৃত্ত একত্রিত হয়ে মাজার ভাঙচুরের ঘোষণা দেয়। ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তারা মিছিল নিয়ে মাজারে তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা শাবল, হ্যামার, দুরমুজ, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মাজারের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করেন। কবর ভেঙে ভেতরে থাকা দেহাবশেষ বস্তায় ভরে নিয়ে যায় তারা। এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা মাজারে আগত লোকজনকে ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে নিষেধ করেন। 

মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হজরত আলী বলেন, ‘২০ বছর ধরে এখানে মাজারের কার্যক্রম চললেও কেউ কোনো দিন বাধা দেয়নি। অথচ এখন প্রকাশ্যে মাজারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা চাই।’

এ বিষয়ে ওসি হুমায়ুন কবির খবরের কাগজকে বলেন, ‘মাজার ভাঙচুরের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউই থানায় এসে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ১১ নম্বর সেক্টরে ৮০ বছরের পুরোনো মসজিদসহ লেংটার মাজারে হামলা চালিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় মসজিদ ও মাজারের ভবন ভেকু মেশিনের সাহায্যে ভেঙে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আগুন দিয়ে মাজারের বহু চিহ্ন পুড়িয়ে মুছে ফেলে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এ হামলা চালানো হয়। 

মাজারের খাদেম জাকির হোসেন জানান, প্রায় একশত বছর আগে পূর্বাচলের ১১ নম্বর সেক্টরে হজরত হোসেন আলী শাহ্ আস্তানা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি মারা গেলে ওই জায়গায় লাশ দাফন করে মাজার হিসেবে গড়ে তোলা হয়। জীবদ্দশায় হজরত হোসেন আলী শাহ্ উলঙ্গ থাকার কারণে খাদেমরা লেংটার মাজার বলে সাইনবোর্ড দেন। 

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, মঙ্গলবার রাতে কয়েক শতাধিক দুর্বৃত্ত মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় মাজারের পাশে থাকা মসজিদে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রূপগঞ্জ থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
 
ধামরাই (ঢাকা): ঢাকার ধামরাইয়ে প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি মিলে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাবা বুচাই চান পাগলার মাজার। মাজার ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত বৈদ্য ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মুসল্লিদের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়। গত বুধবার দুপুরের দিকে উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাটুলিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। জানা যায়, বুচাই চান পাগলার মাজারটি ভাঙতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারও মুসল্লি, বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে আসা ছাত্র অংশ নেন। 

উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাটুলিয়া এলাকার বুচাই চান পাগল বা লেংটা পাগল নামে ডাকা হতো। বুচাই পাগল ২০০০ সালে মারা যান। পরে তাকে কালামপুর বালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সানোড়া ইউনিয়নের বাটুলিয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন বুচাই পাগলার কবরটি বাঁধাই করে দেন। ধীরে ধীরে সেখানে বুচাই চান পাগলার কবরটি মাজার হিসেবে গড়ে তুলেন। স্থানীয় লোকজন মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মাসব্যাপী মেলা ও ওরস পালন করেন। 

মাজার ভাঙতে আসা মুসল্লিরা জানান, মাজারে মাদকসেবনসহ নানা ধরনের অসাজিক কার্যকলাপ চলে। মাজারে সিজদা করা হয়। নারী-পুরুষ একে অপরকে ধরে আলিঙ্গন করে। শুধু বুচাই পাগলার মাজারে নয়, মাজার কমিটির লোকজনকে পায়ে পরে সিজদা করে, যা সম্পূর্ণ হারাম, শিরক (মহাপাপ)। তাই দীর্ঘ দিন ধরেই মাজারটি বন্ধ করার জন্য মুসল্লিরা বলে এলেও কোনো কাজ হয়নি।

কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৫ এএম
কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
বৃষ্টি না হলেও বন্যার পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ছবি : খবরের কাগজ

শেরপুরে কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি। এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ত্রাণ কার্যক্রম চললেও অনেক জায়গায় তা পৌঁছায়নি। বন্যায় এখন পর্যন্ত এ জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ফুলপুর ও ধোবাউড়া উপজেলায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার-সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যারা গবাদিপশু পালন করেন, তারা সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

শেরপুরে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির উদ্যোগে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপার ইউনিয়ন, সূর্যনগর, কাশেমপুর বাজারসহ বেশ কিছু দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে ব্রহ্মপুত্র, দশানি ও মৃগী নদীর পানি সামান্য বেড়েছে। এসব নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজারেরও বেশি। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

ময়মনসিংহে গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ধোবাউড়ায় গত কয়েক দিন একটানা পানি বাড়লেও বৃষ্টি না থাকায় বর্তমানে কিছু এলাকায় পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কোথাও সামান্য কমেছে। একই অবস্থা হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলায়। পানিতে বহু মানুষ ঘরবন্দি থাকায় ব্যাপক কষ্টে দিনযাপন করছেন। এ ছাড়া তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিন উপজেলার স্থানীয়রা জানান, টানা বর্ষণে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে ও পাহাড়ি ঢলে গ্রাম প্লাবিত হয়। গতকাল সকাল থেকে পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।

হালুয়াঘাট সাখুয়াই ইউনিয়নের সাখুয়াই গ্রামের আজিজুল রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিন এই ইউনিয়নে পানি কম থাকলেও নিচু এলাকা হওয়ায় এখন বাড়ছে। ইতোমধ্যে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না। রান্না করে খাবার খাওয়ার মতোও অবস্থা নেই। খুব কষ্টে আছি।’

ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নের গুজিয়ারকান্দা গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যেই পানি গড়িয়ে পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। গতকাল সকাল থেকে পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বাইরে বের হওয়ার মতো অবস্থা নেই। আমি এখনো ত্রাণসামগ্রী পাইনি। আমার দুটি গরু সাঁতরিয়ে একটু উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এগুলোকেও খাবার দিতে পারছি না।’



কিশোরগঞ্জে দুই ডিমের আড়তে অভিযান, জরিমানা

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
কিশোরগঞ্জে দুই ডিমের আড়তে অভিযান, জরিমানা
ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ছবি : খবরের কাগজ

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় কিশোরগঞ্জে দুই ডিমের আড়তকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সোমবার (৭ অক্টোবর) জেলা সদর ও কটিয়াদি উপজেলায় এসব অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক। 

এ সময় জেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এ কে এম সিয়াম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন জেলা আনসার ব্যাটালিয়নের একটি টিম।

হৃদয় রঞ্জন বণিক জানান, পাইকারি পর্যায়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি ও ব্যবসায়ীরা মূল্যতালিকা প্রদর্শন করছেন না। এসব অপরাধে সদর উপজেলার বিন্নাটি বাজারে আল-মদিনা এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা এবং কটিয়াদি উপজেলার আচমিতা বাজারের মায়ের দোয়া ডিমের আড়তকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। 

তাসলিমা আক্তার/সালমান/ 

সীমান্তে বেড়েছে অনুপ্রবেশ, সক্রিয় মানবপাচার

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম
সীমান্তে বেড়েছে অনুপ্রবেশ, সক্রিয় মানবপাচার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

হবিগঞ্জের মাধবপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু মানুষ এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন। মাধবপুর সীমান্ত হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের প্রবণতা এখন সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের আনাগোনাও বেড়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তে জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবপাচারকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার সঙ্গে ভারতের প্রায় ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার এই সীমান্ত এলাকাটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশিদের জন্য শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসা ছাড়া সব ধরনের ভিসা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছে ভারত। এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকেই হবিগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের মাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে সহজ পথ হিসেবে ভারতে গমনেচ্ছুরা মাধবপুর সীমান্ত এলাকাকে বেছে নিচ্ছেন। 

মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, আন্দিউরা ও তেলিয়াপাড়া সীমান্ত ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকেই ওই এলাকায় অপরিচিত মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও প্রায় সময় ওই এলাকায় দেখা যাচ্ছে।

মাধবপুর সীমান্তের নিরাপত্তা ও টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে সরাইল বিজিবি ব্যাটালিয়ন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে অনুপ্রবেশের সময় ২৫ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। তেলিয়াপাড়া সীমান্ত এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইদানীং সীমান্ত এলাকায় অপরিচিত মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে এখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান।’

এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর মাধবপুরের সুরমা সীমান্ত এলাকা থেকে একটি বিলাসবহুল গাড়িসহ দুজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে জানা যায়, গাড়িটি কুমিল্লার সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনার দেবর রুবেল মিয়ায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুবেল মিয়া কুমিল্লার মানুষ হলেও মাধবপুরে তার বাড়ি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের মধ্যে রুবেল মিয়ার এ পথ দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ায় আলোচনা রয়েছে।

সক্রিয় মানবপাচার চক্র

ভারতে অনুপ্রবেশে মানুষের আগ্রহকে পুঁজি করে সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়েছে। চক্রগুলো সীমান্ত পাড়ি দিতে ইচ্ছুক মানুষদের চুক্তির ভিত্তিতে সীমান্ত পাড় করে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চক্রের এক সদস্য জানান, সীমান্ত পাড় করা হয় বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে। ভারতে যাওয়ার কারণ এবং আর্থিক সামর্থ্যের ওপর এটি নির্ভর করে। যেমন কেউ যদি কাজের জন্য যায় তা হলে এক রেট, ঘুরতে গেলে এক রেট, আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে যেতে চাইলে এক রেট। সেটি জনপ্রতি তিন থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে।

মানবপাচারের হাতিয়ার শিশু

সরাইল ২৫ বিজিবি ব্যাটালিনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘পাচারকারীরা পাচারের ধরন পাল্টেছে। বিশেষ করে তারা এখন শিশুদের ব্যবহার করছে। তারা মনে করে শিশু সঙ্গে থাকলে আটক করা হবে না। তাই যাদের পাচার করা হয় তাদের সঙ্গে এক বা একাধিক শিশু রাখার চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মাধবপুর সীমান্ত থেকে যাদের আটক করেছি তাদের মাধবপুর থানায় হস্তান্তর করেছি। পরে দেখা যায় থানায় কিছু লোক গিয়ে বলেন, শিশুদের অপরাধ কী। ওদের ছেড়ে দেন। বিভিন্ন কথা বলে আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।’

টহল জোরদার-তালিকা তৈরি

মাধবপুরের ধর্মঘর, তেলিয়াপাড়া, আন্দিউড়া ও হরষপুর সীমান্তে টহল জোরদার করেছে ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন (সরাইল)। একই সঙ্গে ওই এলাকায় সক্রিয় থাকা পাচারকারী চক্রের একটি তালিকাও তারা তৈরি করেছে।

২৫ বিজিবি ব্যাটালিনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘বিজিবিতে জনবলসংকট রয়েছে। তবু যেহেতু অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়েছে তাই সীমান্তে আগের চেয়ে দ্বিগুণ জনবল বাড়ানো হয়েছে। তারা সব সময় সীমান্তে কড়া নজর রাখছেন।’

নরসিংদী ও গাজীপুরের মানুষ মাধবপুর সীমান্তকে ব্যবহার করে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে চায় জানিয়ে বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এরই মধ্যে মানবপাচারে সক্রিয় দালালদের একটি তালিকা আমরা তৈরি করেছি। এই তালিকাতে মাধবপুরের ৯ জন আছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।’

চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে ভিক্ষু সংঘ: জেলা প্রশাসক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম
চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে ভিক্ষু সংঘ: জেলা প্রশাসক
রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক

পার্বত্য তিন জেলায় বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে এবার কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সময় নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন। 

সোমবার (৭ অক্টেবর) দুপুরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক।

সভায় পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের উপস্থিত ছিলেন। 

ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেলা কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

এর আগে রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি বনরূপা মৈত্রী বিহারে সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে তিন পার্বত্য জেলায় এবার কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ।

পরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত শুভ কঠিন চীবর দান উদযাপনের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা হয়। এতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান সভাপতিত্ব করেন। সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দেন উপস্থিত সুধীজন।

সভায় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন- পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপত্তা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এবারের কঠিন চীবর দান উৎসবে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতার জেরে তৈরি হওয়া নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতা দূর করতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। 

সভায় বক্তব্য রাখেন এএসইউ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল মামুন সুমন, পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেন ও সেনা জোনের প্রতিনিধি। 

এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি নিরূপা দেওয়ান, বনরূপা মৈত্রী বিহারের সাধারণ সম্পাদক পূর্ণ চন্দ্র দেওয়ান, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দিপু, জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আব্দুল আলীম, জাতীয় পার্টির সভাপতি হারুন মাতবর, নির্মল বড়ুয়া, ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন প্রমূখ। 

সভায় পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিবছর যেভাবে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এবার আরও শক্তিশালী ও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাঙামাটিতে নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা নেই। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব মোতায়েন করার ব্যবস্থা করা হবে। তবে খাগড়াছড়ির বিষয়টিকে রাঙামাটিতে টেনে আনার দরকার নেই। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন- নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে পার্বত্য তিন জেলায় এবারের কঠিন চীবর দান উৎসব না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। আমরা ভিক্ষু সংঘের ধর্মীয় গুরুদের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠক করেছি। তারা সময় নিয়েছেন বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য।

জিয়াউর রহমান/অমিয়/

মাগুরায় সড়ক থেকে অজ্ঞাত নারীর দেহাংশ উদ্ধার

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
মাগুরায় সড়ক থেকে অজ্ঞাত নারীর দেহাংশ উদ্ধার
ছবি : খবরের কাগজ

মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও গাড়ির চাকায় একাধিকবার পিষ্ট অজ্ঞাত এক নারীর (৪০) দেহাংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোরে যশোর-মাগুরা রোড়ের ভায়না টেক্সটাইল মিলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী শাহীন শেখ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী চলাফেরা করছিলেন। সকালে দোকানে এসে দেখি রাস্তার মাঝখানে ওই নারীর লাশ পড়ে আছে। এ সময় রাস্তা দিয়ে চলাচল করা একাধিক গাড়ি তাকে পিষে দেয়। 

মাগুরা রামনগর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক গৌতম চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, একাধিক গাড়ির চাপায় লাশ রাস্তায় মিশে গেছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার করি। তার পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা প্রক্রিয়াধীন।

কাশেমুর শ্রাবণ/জোবাইদা/অমিয়/