গোপালগঞ্জে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় জনতার সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না ও সময় টিভির ক্যামেরাপারসন এইচ এম মানিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়।
গুরুতর আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে, ৩ জনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা হাসপাতালে ও ৩ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দাবি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শহরের বেদগ্রাম মোড়ে জেলা বিএনপি আয়োজিত পথসভা শেষ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর বাড়ি টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় পথসভা শেষ করে গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ কর্মীরা। তাদের গাড়িবহর সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের ব্যানার-ফেস্টুন ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে বিবাদে জড়ান বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্নাসহ ৩৫ জন আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গেলে সময় টিভির ক্যামেরাপারসন এইচ এম মানিক আহত হন।
সংঘর্ষের ৩ ঘণ্টা পর ঘোনাপাড়া থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদারের লাশ উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। লাশ হাসপাতালে নেওয়ার পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামানসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সেখানে যান।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বেদগ্রামের পথসভা শেষ করে গাড়িবহর নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর বাড়ি টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় গাড়িবহরে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৩৫ জন আহত হন। এর মধ্যে শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়েছেন।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেলিন বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে ঘোনাপাড়া মোড়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের স্বেচ্ছাসেক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী রওশন আরা রত্নাসহ অনেকে আহত হয়েছেন।’
গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার ছোট বাচ্চাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক নেতা আহত হয়েছেন।’
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করবে তা জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে জানানো হয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েই এ সভা করেছি। কিন্তু তার পরও হামলা ঘটনা ঘটল। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হকের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। ফলে বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’