বন্ধুর মেয়ে কলেজে পড়া অবস্থায় পানিতে ডুবে মারা যায়। বিষয়টি খুব পীড়া দেয় শিক্ষক ফরিদুল হককে। সেই থেকে চিন্তা করেন সাঁতার না জানা মানুষকে কীভাবে সাঁতার শেখানো যায়। তখন থেকে আজ প্রায় ১৮ বছর ধরে বাচ্চাদের সাঁতার শেখাচ্ছেন মাগুরার হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক ফরিদুল হক। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ছেলেমেয়েকে সাঁতার শিখিয়েছেন এই শিক্ষক। তবে তার এই সাঁতার শেখানোর জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেন না। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত তার কাছে সাঁতার শেখানোর জন্য অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন।
তার কাছে সাঁতার শিখতে আসা ছেলেমেয়েরা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সাঁতার শিখে যায়। শুধু শীতের মৌসুমে সাঁতার শেখানো বন্ধ রাখেন তিনি। তবে সাঁতার শেখাতে গিয়ে পুকুরসংকটের কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাকে। জেলা শহরে পর্যাপ্ত পুকুর ও সুইমিংপুল না থাকায় মাগুরা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের পুকুরটি তার একমাত্র সাঁতার শেখানোর স্থান। তবে সম্প্রতি এই পুকুরটি কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনায় নিমজ্জিত হওয়ায় সেখানে সাঁতার শেখাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন এই শিক্ষক। পুকুরের পানি দুর্গন্ধ থাকায় অনেক অভিভাবকই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে আসতে চাচ্ছেন না সেখানে।
সম্প্রতি সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী কলেজের পুকুরে সকাল সাড়ে ৬টায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে ধরে ধরে সাঁতার শেখাচ্ছেন। দুর্গন্ধের জন্য অভিভাবকরা নাকে রুমাল দিয়ে রেখেছেন।
অভিভাবক দীপ্তি রানি কর বলেন, ‘শহরের বাচ্চারা সাঁতার জানে কম। তাই আমার বাচ্চাকে সাঁতার শেখার জন্য নিয়ে এসেছি। তবে এখানে পুকুরের পরিবেশ খুবই খারাপ। পানি অত্যন্ত নোংরা। সেখান থেকে পচা দুর্গন্ধ আসছে। আর এই পচা পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে বাচ্চার গায়ে চুলকানিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক বাচ্চা পচা পানি খেয়ে ফেলার কারণে পেটেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এটি যদি সংস্কার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, তা হলে বাচ্চাদের সাঁতার শেখতে সুবিধা হয়।’
সাঁতার শিখতে আসা শেলী সুলতানা রাইসা বলেন, ‘পুকুরের পানি অনেক নোংরা থাকায় আমাদের সাঁতার কাটতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। ময়লাগুলো সরিয়ে পুকুর পরিষ্কার করে দিলে আমাদের সাঁতার কাটতে সুবিধা হয়।’ অপর শিক্ষার্থী জাকোয়ান কবির বলেন, ‘পুকুরটি অনেক বড় হলোও পদ্মপাতা ও কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। ফলে এই পাতাগুলো পচে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে গিয়েছে। সেটা আমাদের শরীরে লেগে চুলকানিসহ নানা সমস্যা হচ্ছে।’
সাঁতার প্রশিক্ষক শিক্ষক ফরিদুল হক বলেন, ‘সাঁতার না জানার কারণে ২০ বছর আগে আমার বন্ধুর মেয়ে কলেজে পড়া অবস্থায় পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। বন্ধুর মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে তখন খুব কষ্ট দিয়েছিল। এ ছাড়া একটা হিসাবে আমি দেখেছি, আমাদের দেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মানুষ পানিতে পড়ে মারা যায়। তখন আমি চিন্তা করি কীভাবে সবাইকে সাঁতার শেখানো যায়। সেই থেকে আজ প্রায় ১৮ বছর ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে সাঁতার শেখাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমার কাছ থেকে প্রায় ১ হাজারের ওপরে ছেলেমেয়ে সাঁতার শিখেছে।’