সাতক্ষীরায় টানা চার দিনের বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর, ঘের। ডুবে গেছে আমন ধানের খেত।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত জেলায় ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৫ হাজারের বেশি মৎস্য ঘের ও তিন হাজারের বেশি পুকুর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।
এ অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার রাজার বাগান, মুনজিতপুর, বদ্দীপুর কলোনি, পুরাতন সাতক্ষীরা, ইটাগাছা, কামালনগর, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, রইচপুর, কুকরালী রাজারবাগ, মধ্য কাটিয়া, বাকাল, সুলতানপুর, কলেজ মোড়, গদাইবিল, মাছখোলাসহ বিভিন্ন এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এ ছাড়া সদর উপজেলার ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আলিপুর, ভোমরাসহ তালা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের। বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী বসুন্ধরা, রাজনগর, শিবনগর, এগারোআনি, নগরঘাটা রথখোলা-সহ অসংখ্য এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার বিকালে বেড়িবাঁধটি পানির তোড়ে প্রায় ৩০ ফুট ভেঙে যায়। স্থানীয়দের উদ্যোগে মেরামতের চেষ্টা করা হলেও পরে একই স্থানে আবারও ভেঙে যায়। এতে হাজার হাজার বিঘা ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ডুবে গেছে অসংখ্য আমন খেত।
সাতক্ষীরার রাজারবাগান এলাকার আজিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। গত চার দিন টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে রাস্তাঘাটসহ নিচু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রথখোলা এলাকার মুনাইমু মিজান বলেন, আমাদের এলাকার বাসাবাড়িতেও পানি উঠেছে। মানুষ সাপ-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেসব এলাকায় জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা নেই, সেসব এলাকায় টানা বৃষ্টির কারণে দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ বৃষ্টির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ নেই।’
নাজমুল শাহাদাৎ/ইসরাত চৈতী/অমিয়/