টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলায় অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলারই ৩৫টি গ্রাম রয়েছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোর থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি আসা শুরু হলে পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে মহারশি নদীর বাঁধ চার স্থানে ভেঙে ঝিনাইগাতী শহরের বহু দোকান এবং বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসেও পানি উঠেছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে সদর, গৌরীপুর, ধানশাইল, হতিবান্ধা ও মালিঝিকান্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবলবেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপদ পানি, স্যানিটেশনে সমস্যা হয়েছে। এ ছাড়াও চুলা জ্বালাতে না পেরে খাবারের কষ্টে আছে বহু মানুষ। বিশেষ করে শিশুখাদ্য ও পশুখাদ্যের সংকট তীব্র হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, টানা ভারী বর্ষণের ফলে ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি নদী মহারশির পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে কিছু সংস্কারকাজ শুরু হলেও তা শেষ করা যায়নি। বৃষ্টি থেমে গেছে, পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আপাতত নেই।
স্থানীয়রা জানায়, পানি বাড়ায় কোটি কোটি টাকার কৃষি আবাদ বিনষ্ট হয়ে কৃষকরা পথে বসেছে। এ ছাড়াও মাছের ঘের ডুবে গিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যাচ্ছে। গত ৫২ বছর ধরে তারা একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন কিন্তু বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও আজও তাদের সেই দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ এবং ১ হাজার হেক্টর জমির সবজিখেত সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বাঁধ নির্মাণে ইতোমধ্যে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু হয়েছে। পানি কমে গেলেই কাজ শুরু হবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘আমরা পানবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা নদীর তীরবর্তী এলাকায় আটকে পড়েছেন, তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এ ছাড়া শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কাউনিয়ায় বন্যায় সেতুর সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন
আমাদের রংপুরের প্রতিবেদক জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানির তোড়ে বালাপাড়া ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকায় ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের পাকা সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশ ভেঙে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
সরেজমিন মৌলভীবাজার এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, বিগত বন্যায় সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যায়। পরে স্থানীয়রা পাকা সেতুর দুই পাড়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল শুরু করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজার রহমান জানান, ইতোমধ্যে পাকা সেতুটি পশ্চিম পাশে হেলে গেছে। নদীর পানির তোড়ে সেতুর দুই পাড়ের বাঁশ ও কাঠের সাঁকো ভেঙে গেছে। ফলে বালাপাড়া, শহীদবাগ, হারাগাছ ইউনিয়ন ও লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, সেতুটি পরিদর্শন করেছি। ঢাকা থেকে একটি টিম আসার কথা, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য। যতদ্রুত সম্ভব অর্থ বরাদ্দসাপেক্ষে সেতুটির কাজ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, পরিদর্শন করে বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।