ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ভুয়া এনজিওর ঋণের ফাঁদ, প্রতারণার শিকার নারীরা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩১ এএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
ভুয়া এনজিওর ঋণের ফাঁদ, প্রতারণার শিকার নারীরা
ময়মনসিংহের ভালুকায় ভুয়া এনজিওর প্রতারণার শিকার কয়েকজন নারী। ইনসেটে প্রতারণার অভিযোগ আসা রুনা খাতুন। খবরের কাগজ

নিজ এলাকায় এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচিত রুনা খাতুন। আশপাশের বিভিন্ন এলাকাতেও একই পরিচয়ে তিনি অনেকের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। টার্গেট একটাই, গ্রামের সহজসরল নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এই নারী ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি একেক এলাকায় নিজেকে একেক এনজিওর মাঠকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। কখনো সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বিমা করপোরেশন, কখনো ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আবার কখনো অন্য ভুয়া এনজিওর নাম ব্যবহার করেন। প্রতারণার কাজটি ঠিকঠাকভাবে করতে সঙ্গে রাখেন কিস্তি আদায়ের বই। তার এই ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকে।

সম্প্রতি এই নারীর প্রতারণার কৌশল বুঝতে পারেন চর কালীবাড়ি এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী। তাদের কেউ ৫০ হাজার, কেউ ১ লাখ, আবার কেউ ২ লাখ টাকা ঋণ নিতে সদস্য ফরমে নাম লিখে টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আবার কেউ জামানত হিসেবে দিয়েছিলেন নগদ টাকা। কিন্তু কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও কেউ ঋণ নিতে পারেননি। গ্রামের সহজসরল নারীরা যখন ক্ষিপ্ত তখন নতুন করে অন্য নারীদের সদস্য বানাতে গেলে আটক হন এনজিওকর্মী পরিচয় দেওয়া রুনা। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

সদর উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রুনার মতো অনেকেই এনজিওকর্মী পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কখনো কখনো তারা ভাড়ায় ছোটখাটো একটি কক্ষ নিয়ে অফিস বানিয়ে নিয়মিত বসেন। চাকচিক্য অফিস দেখে না বুঝেই গ্রামের সহজসরল নারীরা তাদের ফাঁদে পা বাড়ান। কম সুদে ঋণ দেওয়ার নামে ওই নারীদের কাছ থেকে সদস্য ফরম পূরণ বাবদ ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। আবার কখনো অগ্রীম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে পরবর্তী মাসেই ঋণ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে কয়েক মাসে ওই এলাকা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা সটকে পড়েন। ভুক্তভোগী নারীদের তখন কিছুই করার থাকে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভালুকার ভরাডোবা ইউনিয়নের নিশিন্দা গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে একটি ভূঁইফোড় এনজিও পরিচালনা করতেন ত্রিশাল উপজেলার কানর গ্রামের হাসান মিয়া, তার স্ত্রী রুনা, একই উপজেলার আইলদা গ্রামের শাহজাহান মিয়া ও তার স্ত্রী লিপি। তারা সমিতি থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেবেন বলে সঞ্চয় বাবদ স্থানীয়দের টাকা জমাতে বলেন। মোটা অঙ্কের ঋণের আশায় জামিনা খাতুন, মলিনা খাতুন, নুরজাহান, ববিতা, মুর্শিদা খাতুন, শরিফা আক্তার, নাসিমা আক্তার ও জোছনা আক্তারসহ অনেকেই সঞ্চয় বাবদ টাকা জমা দিতে থাকেন। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সবার সঞ্চয় বাবদ ৮ লাখ টাকা জমা হলে প্রতারক চক্রটি উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনায় উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম তরফদারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গফরগাঁওয়ে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ‘সোশ্যাল বেনিফিট অর্গানাইজেশন’ (এসবিও) নামে একটি ভুয়া এনজিও অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পৌর শহরের শিলাসী দপ্তরিবাড়ী এলাকায় অফিস খুলে বসেছিল কথিত এনজিওটি। সবজি ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তাদের ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার আশ্বাসে সাত শতাংশ হারে সঞ্চয় আদায় করে প্রতারক চক্র। পরে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগীরা।

নান্দাইলেও ঘটেছে এমন ঘটনা। পৌর এলাকার সুমী হোটেলে দুই ব্যক্তি এনজিওকর্মী পরিচয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন। ধীরে ধীরে সখ্য গড়ে তোলেন হোটেলের মালিক সোহেল মিয়ার সঙ্গে। ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান এনজিওকর্মী পরিচয়দানকারী প্রতারক চক্রের ওই দুই সদস্য।

ময়মনসিংহ সদরের চর কালীবাড়ি এলাকার ভুক্তভোগী আসমা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, জীবন বিমা করপোরেশনের নাম ব্যবহার করে রুনা আমার কাছে এসে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে এজন্য আমাকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। এক লাখ টাকা ঋণ পেতে তিনি আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে নেন। কিন্তু কয়েক মাস পার হলেও ঋণ পাইনি। সম্প্রতি আমার পাশের বাড়িতে তিনি অন্য নারীদের সদস্য করতে এলে আমিসহ ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী তাকে আটক করি। এ সময় তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন।

দীনা খাতুন নামে আরেকজন বলেন, ‘স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে। ঘুচবে অভাব নামের যন্ত্রণা। এমন প্রলোভনে আমাকেও সদস্য করেন রুনা। কিন্তু আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার মতো শতাধিক নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

রুনা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের প্রতিবেদকের। তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘আমি কোনো এনজিওর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী না। সম্প্রতি যারা জানতে পেরেছেন, তারা আমাকে আটকে রেখেছিলেন। পুলিশে দেওয়ার আগ মুহূর্তে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পাই।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, অনেকে নিবন্ধন ছাড়াই নাম দিয়ে এনজিওর মালিক পরিচয়ে কর্মী নিয়োগ করে টাকা লেনদেন করেন। আবার অনেকে গ্রামের সহজসরল নারীদের টার্গেট করে ঋণ দেওয়ার নাম করে লাপাত্তা হয়ে যান। তাদের সম্পর্কে আমাদের কাছে তেমন তথ্য নেই। তবে কোনো নিবন্ধনকৃত সংস্থার নামে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে সংস্থার নিবন্ধন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চট্টগ্রামের আড়তে ডিম বেচাকেনা বন্ধ

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
চট্টগ্রামের আড়তে ডিম বেচাকেনা বন্ধ
ছবি: খবরের কাগজ

সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে না পারা, রসিদ না দেওয়া, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানার কারণে গতকাল সোমবার থেকে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। যতক্ষণ পর্যন্ত না সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে পারছেন, ততক্ষণ ডিম বেচাকেনা বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন তারা। 

চট্টগ্রামের আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রামে ডিমের বড় আড়ত, পাহাড়তলী বাজার। এ বাজারে ১৫ জন আড়তদার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিম কিনে বিক্রি করে থাকেন। সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ হয় টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলা থেকে। এ ছাড়া রাজধানীর তেজগাঁও থেকেও পাহাড়তলী বাজারে ডিম আসে। এতে প্রতিটি ট্রাকে ১ লাখ ৪৪ হাজার পিস ডিম থাকে। আগে এক গাড়ি ডিম কিনতে খরচ হতো ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। বর্তমানে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। এত বড় অঙ্কের টাকা জোগান দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পোলট্রি ফার্মগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। তারা রসিদে সরকার নির্ধারিত দর দেখালেও বাস্তবে বিক্রি করছেন বেশি দামে। পোলট্রি ফার্ম, আড়ত বা মধ্যস্বত্বভোগীদের আইনের আওতায় না এনে সরকার পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। তাই প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কর লিটন খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতি পিস ডিমের সরকার নির্ধারিত দাম ১১ টাকা ০১ পয়সা। অথচ গত রবিবার আমাদের প্রতি পিস আনতে হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়। আমরা ওই দামেই ডিমগুলো বিক্রি করেছি। এতে প্রতিটি ডিমে ১০ থেকে ২০ পয়সা লোকসান দিয়েছি। শুধু সরকারি দামে ডিম কিনতে পারছি না বলেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখানে আমাদের দোষটা কোথায়?’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যাদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করি, তারা রসিদ দিতে চায় না। উল্টো তারা বলে, রসিদ ছাড়া নিলে নেন, নইলে নাই। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে এলে আমরা রসিদ দেখাতে পারি না। এর ফলে আমাদের জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাদের সভাপতিসহ আরও দুই ব্যবসায়ীকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে। এসব হয়রানি থেকে বাঁচতে, আমরা বাধ্য হয়ে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রেখেছি।’ 

পোলট্রি ফার্মের কারণে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, পোলট্রি ফার্মগুলো যেভাবে দাম বাড়ায়, একজন প্রান্তিক খামারি সেভাবে পারে না। এখানে একটা শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে।

এদিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আড়তদাররা বলছেন, খামারি বিক্রি করার কথা ১০ টাকা ৫৮ পয়সা। কিন্তু এর মাঝে আবার মধ্যস্বত্বভোগী আছে। তাদের কাছ থেকে কেনার পর আমরা বিক্রি করার কথা ১১ টাকা ০১ পয়সায়। কিন্তু আমরাই তো সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে পারছি না। এ কারণে আমাদের এখানে গত রবিবার থেকে বেচাবিক্রি বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ আমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি করেছি। তাই চট্টগ্রামের আড়তদারকে ১৩ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হয়। খুচরায় তো দাম আরও বেড়ে যায়। তাই চট্টগ্রামের আড়তদাররা সোমবার থেকে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন। এখন সরকারের কাছ থেকে কি ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, তারা সেই অপেক্ষায় রয়েছেন।’ 

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সারা দেশে দিনে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। বাজারে এখন সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। তাই এখনো মানুষ ডিমের ওপর নির্ভরশীল। ডিমের দাম বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এদিকে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের আড়তদাররা বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিম বেচাকেনা বন্ধ রাখা তো সমাধান না, এটা অন্যায়। তারা যদি সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারে, তাহলে তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। এ ছাড়া ‘ডিম কেনার সময় রসিদ দিচ্ছে না’ এমন সমস্যার কথা তারা তো বলে না। বিষয়টি অন্তত ক্যাবকে জানাতে পারত। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হলে তারা ব্যবসা বন্ধ করে দেবে, এটার অর্থ হলো তারা আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছে। চট্টগ্রামের আড়তদাররা সরকারকে সহযোগিতা না করে বরং বাধা দিচ্ছে। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীদের বোঝাপড়া অবশ্যই আছে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের টিম পাহাড়তলীতে অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা বেচাকেনার রসিদে গরমিল পাচ্ছি। বাড়তি দামে ডিম বিক্রির প্রমাণ পাচ্ছি। পাশাপাশি পাহাড়তলীর আড়তদাররা ডিম কেনার সময় রসিদ নিচ্ছেন না, সংরক্ষণ করছেন না। তাই আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মদপানে ২ জনের মৃত্যু, অসুস্থ ৩

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১০ এএম
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মদপানে ২ জনের মৃত্যু, অসুস্থ ৩

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চর-ভাঙ্গুড়া গ্রামে অতিরিক্ত মদপানে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও তিনজন অসুস্থ হয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব পরবর্তী আনন্দে বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত মদপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপজেলার চর-ভাঙ্গুড়া গ্রামের ঘোষ পাড়ার পাঁচ যুবক।

এদের মধ্যে সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে দশটার দিকে রামচন্দ্র ঘোষের ছেলে রবিন ঘোষ (২৫) মারা গেছেন। এর এক ঘন্টা আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মানিক চৌধুরীর ছেলে হৃদয় চৌধুরী (১৭) মারা যান।

সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উজ্জল হোসেন বলেন, গুরুতর অসুস্থ ঐ তিন ব্যক্তিকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করছে।'

পার্থ হাসান/জোবাইদা/

শাপলা তুলতে গিয়ে দুই শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
শাপলা তুলতে গিয়ে দুই শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ডোবায় শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার দীঘি ইউনিয়নের কায়রা গ্রামের রাস্তার পাশে ডোবায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তারা হলো সদর উপজেলার দীঘি ইউনিয়নের কাগজিনগর গ্রামের বাবু কাজীর মেয়ে আনহা আক্তার (৭) ও একই ইউনিয়নের খরসাতাই গ্রামের রফিক সরদারের মেয়ে স্নেহা আক্তার (৭)। তারা দুজনেই স্থানীয় কয়রা মাদ্রাসাতুল ওহি আল ইসলামি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল দুপুরে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়রা গ্রামের রাস্তার পাশে ডোবায় শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায় স্নেহা ও আনহা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে নিহতদের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উদ্বোধনের আগেই বেহাল সড়ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০২ এএম
উদ্বোধনের আগেই বেহাল সড়ক
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় খাগরিয়া ইউনিয়নের ভোর বাজারের বেহাল সড়ক। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় খাগরিয়া ইউনিয়নের ভোর বাজার সড়কটি উদ্বোধনের আগেই বেহাল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গার কার্পেটিং উঠে ৩ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় গর্ত। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, বিটুমিনের পরিমাণ কম ও নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করায় অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, বৃষ্টির কারণে সড়কের কিছু জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে আবার সেগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটির ৩ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পান চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাওয়াককুল এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আবার ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিবাতল এলাকার করাতকল থেকে ভোর বাজার পর্যন্ত সড়কের পিচ উঠে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে আছে। এসব গর্তে জমা বৃষ্টির পানি এড়িয়ে যানবাহন চলাচল করছে। আবার কয়েকটি জায়গায় একসঙ্গে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোর ওপর দিয়েই গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। এ ছাড়া দেখা যায়, কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত সড়কটি উদ্বোধন করা হয়নি। উদ্বোধনের আগেই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সড়কের কাজে নয়ছয় হয়েছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে অনিয়ম করেছে।

গর্তগুলো মেরামত করা হলেও সড়কটি বেশি দিন চলাচলের উপযোগী থাকবে বলে মনে হয় না। তারপরও দ্রুত সড়কটি মেরামতের পাশাপাশি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আলী আজগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কে কার্পেটিং করেছে এখনো ৩ মাস পূর্ণ হয়নি। তার আগেই সড়কের বেশির ভাগ অংশজুড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ভালোভাবে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।’

স্থানীয় মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বৃষ্টির মধ্যে সড়কে কার্পেটিং কাজ করেছে। তাই দুই-তিন মাস না যেতেই পিচ উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিটুমিনের পরিমাণ কম ব্যবহার করায় পিচ উঠে যাচ্ছে। সড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ছিল বলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ধারণা করছি।’ 

সড়কের কাজে নিয়োজিত মেসার্স তাওয়াককুল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. হাসান বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে।’

এলজিইডির সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেশিনের মাধ্যমে উপকরণ সংমিশ্রণ করে সড়কে কার্পেটিং করেছে। মেশিনে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ায় সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত উপকরণের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। তাই বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে সড়কের পিচ উঠে যাচ্ছে। পরে সেটি বুঝতে পেরে আমরা সাতকানিয়া উপজেলায় চলমান প্রতিটি সড়ক কার্পেটিং কাজে উপকরণ সংমিশ্রণ মেশিন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি।’

এলজিইডির কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৃষ্টির পানি জমে সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত করে দেবে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৩ লাখ টাকা বিল এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। তারা ঠিকঠাক মতো কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারলে আর বিল পাবে না। এ ছাড়া কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর আগামী ১ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে।’

ফরিদপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত ২৭

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
ফরিদপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত ২৭
ফরিদপুর সদর উপজেলার মল্লিকপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ। ছবি : খবরের কাগজ

ফরিদপুর সদর উপজেলার মল্লিকপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

আহতদের মধ্যে ২৭ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
 
করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে খবরের কাগজকে জানান, ঢাকা থেকে ঝিনাইদহগামী গ্রিন এক্সপ্রেসের সঙ্গে বিপরীত দিকে সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা খাগড়াছড়ি পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

নিহতদের সবাই খাগড়াছড়ি পরিবহনের যাত্রী বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেন হাইওয়ে থানার ওসি।

আহত ২৭ জনকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

সঞ্জিব দাস/অমিয়/