ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

সৌদিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবক নিহত

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫৭ পিএম
সৌদিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবক নিহত
রায়হান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রায়হান মিয়া (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পৌর শহরের জগন্নাথপুর এলাকার মো.মতিউর রহমানের এক মাত্র ছেলে। পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। 

বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে সৌদি প্রবাসী যুবক রায়হানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা শোকে মাতম করছে। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে এ ঘটনা ঘটেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জীবিকা নির্বাহের জন্য সৌদি আরবে পাড়ি জমান ভৈরবের যুবক রায়হান মিয়া। গত বছর ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে ছুটি কাটিয়ে ফিরে যান তিনি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবত সৌদি আরবে জীবিকা নির্বাহের জন্য অবস্থান করছেন তিনি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে সৌদি আরবে দাম্মাম শহরের একটি ভবনে সিলিন্ডার গ্যাস লিকেজের ঘটনা দেখতে গিয়ে বিস্ফোরণে রায়হান মিয়া গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিহত যুবকের বাবা মতিউর রহমান বলেন, আমার ছেলে তার ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলো ঠিক তখনই তার এক বন্ধু তাকে ফোন করে ভবনে সিলিন্ডার গ্যাস লিকেজের ঘটনা দেখতে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তারা দুজন সিলিন্ডার গ্যাস লিকেজ বন্ধ করতে চেষ্টা করছিলো। এ সময়েই বিস্ফোরণের আমার ছেলে গুরুতর আহত হয়ে প্রাণ হারায়। ঘটনার পর দিন আমরা জানতে পারি আমার সন্তান দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। 

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.হাসমত উল্লাহ বলেন, সৌদি আরবে সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে ভৈরবের যুবকের মৃত্যুর ঘটনাটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। 

মমেক হাসপাতাল টাকা ছাড়া মেলে না সেবা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৫ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ এএম
টাকা ছাড়া মেলে না সেবা
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সেবাপ্রত্যাশীরা। ইনসেটে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে এক নারী কর্মচারী (অ্যাপ্রোন পরা) টাকা নিচ্ছেন। ছবি: খবরের কাগজ

এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে প্রতিদিন তিনগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এর বাইরে আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন আরও তিন থেকে চার হাজার রোগী। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালটিতে রোগী ও তাদের স্বজনদের সেবা পেতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়েও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। অন্যথায় সেবা পাওয়া যায় না।

ভুক্তভোগীরা জানান, হাসপাতালে রোগী আনার পর ট্রলিতে উঠানো থেকেই শুরু হয় হয়রানি ও অনিয়ম। টাকা না দিলে ট্রলি পাওয়া যায় না। বেড পাওয়াসহ সব ক্ষেত্রে আয়া, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনারসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া আউটডোরে লম্বা লাইন থাকলেও বাড়তি টাকা গুনলেই তাৎক্ষণিক টিকিট পাওয়া যায়। ১০ টাকার এই টিকিটের জন্য দিতে হয় কমপক্ষে ১০০ টাকা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩৭টি ওয়ার্ডের বিপরীতে প্রতিদিন তিন শিফটে ৪১০ জন চিকিৎসক এবং এক হাজার ৭২ জন নার্স দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলা ছাড়াও সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী এবং গাজীপুরের রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের সামনে অনিয়ম হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। টাকা না দিলে কর্মচারীদের কাছ থেকে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা আমলে নেন না। অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় না। ফলে সব ধরনের অনিয়ম এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডগুলোর মেঝে এবং বারান্দাতে বহু রোগীকে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ নারী-পুরুষসহ শিশুরা।
 
হাসপাতালের আউটডোরেও একই অবস্থা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। তবে অনেকে লাইন ছাড়াই টিকিট নিতে অসাধু কর্মচারীদের কাছে যান। তাদেরকে নির্ধারিত মূল্যের অন্তত দশগুণ বেশি অর্থ দিয়ে টিকিট নিয়ে চিকিৎসকের কক্ষে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময়ও রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। দালাল ধরে গেলে সিরিয়াল ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

মো. মনির নামে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার এক তরুণ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সম্প্রতি হঠাৎ ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও ভালো না হওয়ায় বড় ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের আউটডোরে যাই। লম্বা লাইন দেখতে পেয়ে এক কর্মচারীকে সরকার নির্ধারিত ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা দিয়ে লাইন ছাড়াই টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাই।’ 

বাড়তি টাকা দেওয়া ঠিক হলো কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেকে অসাধু কর্মচারী কিংবা দালালদের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলে বাড়তি টাকা দিয়ে সুবিধা নেন। তাই আমিও দিয়েছি।’

আকাশ নামে আরেকজন বলেন, ‘কিছুদিন আমার মাকে কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করেছিলাম। ওই ওয়ার্ডে রনি ও এমদাদ নামে দুই কর্মচারীকে টাকা দিয়ে খুশি রাখতে হয়। টাকা না দিলে ভেতরে গিয়ে মাকে দেখতে দেওয়া হয় না। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়েছে। মায়ের ছুটি হওয়ার পর হাসপাতালের উপপরিচালকসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানানো হলে তদন্তে প্রমাণ মিললে চাকরিচ্যুত করা হবে জানানো হয়। কিন্তু পরে আর তদন্তও করা হয়নি, চাকরিচ্যুতও করা হয়নি। ফলে তাদের মতো অসাধু কর্মচারীরা রোগীদের যথাযথ সেবা না দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত থাকে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সভাপতি আলী ইউসুফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রলিতে রোগী আনা-নেওয়া, সিট পাওয়া, লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ এবং বিভিন্ন টেস্ট দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার ক্ষেত্রে রোগীদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের অসাধু কর্মচারীরা এই অনৈতিক কাজে জড়িত। বাড়তি সুবিধা আদায়ের আশায় রোগী ও তাদের স্বজনদের ইচ্ছাও দুর্নীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত, রোগীদের ভোগান্তি কমানোর দিকে মনোযোগী হওয়া।’

রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসকদের চেষ্টার কমতি নেই উল্লেখ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। রোগী ও তাদের স্বজনদেরও সচেতন হওয়া দরকার।

যশোরে বিজ্ঞান উৎসব রেলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধের কৌশল দেখাল শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
রেলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধের কৌশল দেখাল শিক্ষার্থীরা
যশোর জিলা স্কুলে বিজ্ঞান উৎসব। ছবি: খবরের কাগজ

যশোর জিলা স্কুলে ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানী রাধা গোবিন্দ চন্দ্র স্মারক বিজ্ঞান উৎসব’-এ মেতে ওঠে খুদে বিজ্ঞানপ্রেমীরা। তারা ডিজিটাল সিটি, রেললাইনে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ, ফায়ার ফাইটিং রোবটসহ ১৫টি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে জেসিবি বিজ্ঞান ক্লাব।

এতে যশোর কালেক্টরেট স্কুলের একদল শিক্ষার্থী প্রদর্শন করে, রেললাইনে অসাবধানতায় কাটা পড়ে মৃত্যু ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোধের কৌশল। তারা লেজার ও সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের দেখিয়েছে, কীভাবে রেললাইনে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা যায়।

এর আগে মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিজ্ঞান উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। বিজ্ঞান উৎসবে জেলার ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রজেক্ট প্রদর্শন করে। এ ছাড়া  উৎসবে দেয়াল পত্রিকা, অলিম্পিয়াড, আইকিউ টেস্ট, বিজ্ঞানভিত্তিক কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেয় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।  

এদিকে বিজ্ঞান উৎসবে যশোর জিলা স্কুলের সম্মিলিত প্রজেক্ট ছিল ‘ডিজিটাল সিটি’। দলের সদস্যরা জানায়, ‘সিটি থাকবে সিসিটিভির আওতায়, আগুন লাগলে সংকেত দেবে ‘ফায়ার এলার্ম’। থাকবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরি। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবে ডিসপ্লে বোর্ড। সেখানে খেলা, খবরসহ যেকোনো তথ্য সহজেই দেখা যাবে। 

যশোর জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবরিক রহমান বলে, ‘আমাদের ক্লাসের কয়েক বন্ধু মিলে উদ্ভাবন করেছি ‘ফায়ার ফাইটিং রোবট’। যেসব জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছাতে পারেন না, সেখানে এ রোবট দ্রুত এবং নিরাপদে অগ্নিকাণ্ড স্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ করবে।’

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘তরুণ সমাজের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধা ও দক্ষতায় অন্য জাতির চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। সঠিক দিক-নির্দেশনা ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে বিজ্ঞান চিন্তায় উজ্জীবিত এই প্রজন্ম দেশকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়। ভবিষ্যতে এই খুদে বিজ্ঞানীদের মধ্য থেকেই উদ্ভাবক বেরিয়ে আসবে।’ 

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরও বলেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানী রাধা গোবিন্দ চন্দ্র যশোরের মানুষ। কিন্তু এই প্রজন্মের কেউই তাকে চিনে না। এমনকি তার বাড়িটাও দখল হয়ে আছে। বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে বিজ্ঞান জাদুঘর করার দাবি জানাচ্ছি।’ 

জেসিবি ক্লাবের সভাপতি সাজিন আহম্মেদ জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির পেট্টোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আমিনুর রহমান, যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেনসহ আরও অনেকে।

ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১১ এএম
মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানিহাট বাজারের পাশে ময়লার ভাগাড়। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানিহাট গরুর বাজার। এর পাশ দিয়ে চলে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। জায়গাটি এখন রীতিমতো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পথচারী ও অফিসগামী মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে গাড়ির চাপ বাড়লে এ পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন গাড়িতে থাকা চালক, স্টাফ ও যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। স্থানীয়রা বলছেন, দিন যত যাচ্ছে, ভাগাড়ের আকার তত বড় হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্দিষ্ট করে কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কেরানিহাট গরু বাজারসংলগ্ন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল অংশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা, খাবার হোটেলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে হোটেল-রেস্টুরেস্ট মালিকদের পাশাপাশি মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরাও সেখানে বিভিন্ন বর্জ্য ফেলছেন। এ কাজে পিছিয়ে নেই অন্য ব্যবসায়ীরাও।

এ মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ময়লার স্তূপের পাশেই মহাসড়ক। যানজট সৃষ্টি হলে পচা বর্জ্যের দুর্গন্ধে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।’ 

পথচারী জসিম উদ্দিন, জালাল আহমদ, মো. নাছিরসহ অনেকের ভাষ্য, এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করলে বা আশপাশের এলাকায় বসবাস করলে দুর্গন্ধে টেকা যায় না। বিশেষ করে মুরগি ও মাছের নাড়িভুঁড়ির দুর্গন্ধে মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নাক-মুখে রুমাল চেপে যাতায়াত করেন। 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আবদুর রহিম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ময়লা-আবর্জনাসহ বৃষ্টির পানি কৃষিজমিতে গিয়ে পড়ে। এত কিছুর পরও সমস্যাটি সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছেন না।

জনার কেঁওচিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান জানায়, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন তাকে নাকে রুমাল ও টিস্যু চেপে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। দিনদিন ময়লার স্তূপটির পরিধি বড় হচ্ছে। শিগগিরই এ স্তূপ না সরালে এ পথ দিয়ে যাতায়াত করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে মিশে আশপাশের জমি ও ডোবায় পড়ছে। এ পানির মাধ্যমে পানিবাহিত ও ভাইরাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। এ ছাড়া চর্মরোগ হওয়ার ঝুঁকি তো আছেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব ময়লার ভাগাড়টি সরিয়ে ফেলা উচিত।’

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মঈনুদ্দিন ফয়সাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জায়গাটি পরিদর্শন করব। এরপর ময়লার ভাগাড়টি সরিয়ে ফেলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেব।’

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, সুনির্দিষ্ট করে কেউ এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেননি। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ময়লা-আবর্জনা ফেলার অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাঁশের সাঁকোয় মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ এএম
বাঁশের সাঁকোয় মৃত্যুঝুঁকি
ডুবে যাওয়া সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে ডাকাতিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যশোর সদরের বোলপুর থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

নদের ওপর থাকা একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই অনেকে পা পিছলে নদে পড়ে যায়। সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় সাঁকোটি ডুবে গেছে। এ ছাড়া সাঁকোর ওপরে থাকা দুপাশের হাতলও ভেঙে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো যারা ব্যবহার করেন না, তাদের আট কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। বলছি যশোর সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বোলপুর গ্রামের কথা। গ্রাম দুটির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ী ভৈরব নদ। এখানেই বেহাল সাঁকোটির অবস্থান।

স্থানীয়রা জানান, ডাকাতিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে স্কুল ফান্ডের টাকায় সাঁকোটি নির্মাণ করে। এরপর তারা কয়েক দফা সাঁকোটি সংস্কার করে। বিগত ১৬ বছর ধরে এলাকাবাসী এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ কাটছে না। অভিযোগ আছে, সাবেক এক সংসদ সদস্য সাঁকো নির্মাণের জন্য ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠজনরা সেই টাকার সঠিক ব্যবহার করেননি। উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ভোগের বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে পানির নিচে ডুবে থাকা ভাঙাচোরা সাঁকোটি দিয়ে তাদের ডাকাতিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। আসা-যাওয়ার পথে তাদের জুতা হাতে নিয়ে ও প্যান্ট-পাজামা গোটাতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ পা পিছলে নদে পড়ে যায়। এ সময় পোশাক আর বইখাতা ভিজে যায়। ফলে স্কুলে যাওয়ার পথে এমন ঘটনা ঘটলে সে দিন আর ক্লাসে যাওয়া হয় না। অবশ্য দু-একজন ভেজা অবস্থায় বিদ্যালয়ে হাজির হয়। এতে তাদের অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা থাকে।

ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার রুমি বলে, ‘সাঁকোটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। এ কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না। এ রকম অবস্থা আমার মতো অনেক ছাত্র-ছাত্রীর। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতাম।’

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিম ও তৌফিক জানায়, অনেক সময় স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে গিয়ে জামা-কাপড় ও বই-খাতা ভিজে যায়। শামুকে পা কাটে। এভাবে চলাচল করতে চরম অসুবিধা হয়। এখন সাঁকোর অবস্থা আরও খারাপ।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, আমরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকায় সাঁকোটি নির্মাণ করি। কিন্তু এ বছর প্রবল বৃষ্টিতে পানির স্রোতে ও কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙে যায়, ডুবে যায়। ফলে বোলপুর গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক কামরুল আহসান বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দাবি করা হলেও সরকারি অর্থায়নে এখানে কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ঝুঁকি কমছে না। কেউ সাঁকো পার হতে না চাইলে তাকে ৭-৮ কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে আসতে হয়। যা খুবই কষ্টকর। সাঁকো পার হয়ে আসার সময় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে।’

এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, যশোর সদরের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ২০১৮ সালে এ সাঁকো নির্মাণের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্তু এমপির পিএস আবু মোসা মধু ও কাশিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইনতাজ আলী এবং আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ওই অর্থ হস্তান্তর না করে নিজেদের মতো দায়সারা সাঁকো মেরামত করেন। যা কোনো কাজে আসেনি। অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।

যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা এলাকাবাসী লিখিত আবেদন দিলে সমাধানের ব্যবস্থা নেব।

৪ মাসের ঘুমন্ত শিশুকে জলাশয়ে ফেলে হত্যা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ এএম
৪ মাসের ঘুমন্ত শিশুকে জলাশয়ে ফেলে হত্যা

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে জলাশয় থেকে ৪ মাস বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে শিশুটিকে তার ফুফু ঘুমন্ত অবস্থায় জলাশয়ে ফেলে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত শিশু মাহমুদা আক্তার মীম, চরগাঁও গ্রামের ওমান প্রবাসী আওলাদ হোসেন ও মিনারা বেগমের মেয়ে।

গতকাল বৃহস্পতিবার নবীগঞ্জ থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, বুধবার সন্ধ্যায় নিহত শিশুর ফুফু পপি বেগম ও দাদি মরিয়ম বিবিকে হবিগঞ্জ আদালতে সোপর্দ করা হলে মরিয়ম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে মিনারা আক্তার এ দুজনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। 

জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি জানান, মিনারা আক্তারের সঙ্গে তার শাশুড়ি মরিয়ম বিবি ও ননদ পপি বেগমের পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরে গত মঙ্গলবার ভোরে পপি একা ঘুমিয়ে থাকা মিনারার ৪ মাস বয়সী মেয়ে মীমকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে জলাশয়ে ফেলে দেন। তখন মিনারা রান্নাঘরে ছিলেন। কাজ শেষে ঘরে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে তিনি চিৎকার শুরু করেন। পরে বাড়ির পাশের জলাশয় থেকে শিশুটির ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। মরিয়ম বিবি আদালতকে বলেন, ‘এই কাজ আমার মেয়েই করেছে।’