উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কিছুদিন আগে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চার ইউনিয়নের অন্তত ৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। গত এক সপ্তাহ আগেও তিন দিনের ব্যবধানে পদ্মার পানি ৩৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ে। তলিয়ে যায় ফসলের খেত, ভেঙে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা। সম্প্রতি ওই পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার কারণে অনেকের মাঝে স্বস্তি এলেও পদ্মা পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাঙনরোধে তারা কাজ করছেন। ওই এলাকায় একটি স্থায়ী বাঁধ বানানোর জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা গ্রাম উদয়নগর বেশ কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কবলে পড়েছে। হারিয়েছে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার, শত শত একর আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি। ভেঙেছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এখন ভাঙন থেকে মাত্র ২৫-৩০ মিটার দূরে আছে একটি বিজিবি ক্যাম্প। এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পড়েছে উদয়নগর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে থাকা আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া রয়েছে দোকানপাট, হাটবাজার, মসজিদসহ নানা স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আর ৫০ মিটারের মতো নদী ভাঙলে বাংলাদেশ অংশে থাকা আরও দুটি আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। এ ছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে ইউনিয়নটির মানিকের চরের পশ্চিম পাশে।
কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশীদের সঙ্গে। জানান, এখন পর্যন্ত তিনি পাঁচবার নদীভাঙনের কবলে পড়েছেন। এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকা বিজিবি ক্যাম্পটিও হুমকির মুখে পড়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, এটা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙনের কারণে আজ সেটিও হারাতে বসেছি।’
খারিজাথাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখী খাতুন। কাছাকাছি থাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো ভেঙে যাওয়ায় তাকে দূরের স্কুলে যেতে হয়। যাতায়াতব্যবস্থা বলতে কেবলই নৌকা। খরচ বেশি হওয়ায় নিয়মিত স্কুলেও যেতে পারে না। তার পুরো গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দূরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বৈশাখী।
তসলিমা খাতুন নামে ওই এলাকার এক গৃহবধূ বলেন, ‘তিন মেয়ে নিয়ে থাকি। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সাপ ও কীটপতঙ্গের ভয়ে সন্তানদের বাড়িতে রাখি না। গবাদিপশু দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে একাই থাকি।’
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ‘নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উদয়নগর ও মানিকের চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমার সঙ্গে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।’
কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, ‘উদয়নগর বিওপির ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরে নদীর অবস্থান। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছি। চেষ্টা করছি সরকারি এই স্থাপনাসহ এখানে বসবাস করা দুই থেকে তিন হাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘ভাঙনরোধে আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে উদয়নগর ও মরিচার হাটখোলাপাড়া এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠাব।’
নদীর পানি কমার বিষয়ে পাবনা পাউবোর ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘শুক্রবার থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানির প্রবাহ ছিল ১২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার। সোমবার বেলা ৩টার সময় তা কমে হয়েছে ১২ দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার। এখন পানি কমতে থাকবে।’