![কিশোরগঞ্জে কড়া পাহারার মধ্যেও প্রতিমা ভাঙচুর](uploads/2024/10/03/kishoreganj-puja-1727939483.jpg)
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার শ্রীশ্রী জিউর আখড়ায় দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোরে বড় বাজার মণিপুরঘাট রোডে অবস্থিত এই আখড়ায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের এই আখড়ায় প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। রাতে নিরাপত্তার কারণে পাহারায় ছিলেন স্থানীয় গোপীনাথ সংঘের ছেলেরা। রাত চারটা পর্যন্ত সংগঠনের পাঁচ সদস্য জেগে ছিলেন। এরপর থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুর করে।
নিরাপত্তার স্বার্থে পূজা উপলক্ষে মন্দিরে সিসি ক্যামেরা গতকাল বুধবার লাগানোর কথা থাকলেও বৃষ্টির জন্য তা লাগানো হয়নি।
এ ছাড়াও সনাতনীদের ধর্মীয় উপসনালয়গুলোতে নিরাপত্তার জন্য গত দুই মাস ধরে পাহারা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়।
এলাকার স্থানীয় ও আখড়ার লোকজন খবরের কাগজকে বলেন, পূজার বাকি মাত্র সাত দিন। ৫ আগস্টের পর থেকে কিশোরগঞ্জে রাতে হিন্দু-মুসলিম মিলে শহরের মন্দির, আখড়াগুলো পাহারা দেওয়া হয়। দিনে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পাহারা দেয়। সারারাত বৃষ্টিতে প্রতিমা পাহারা দিলেও ভোরে কে বা কারা ভাঙচুর করে গেছে তা আমরা জানতে পারিনি।
এলাকাবাসীসহ গোপীনাথ মন্দির পূজা উদযাপন কমিটি প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের কাছে এর বিচার দাবি করেছেন।
গোপীনাথ সংঘের সদস্য অপু কান্তি রায় খবরের কাগজকে বলেন, চারটা পর্যন্ত আমি মন্দির পাহারায় ছিলাম। বৃষ্টি নামার পর ভোরে ঘুমিয়ে পড়ি। রচনাঘরে আমরা পাঁচজন ঘুমিয়েছিলাম। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে পিন্টু সাহা দেখতে পায় মূর্তি ভাঙা। এরপর ফোন দিয়ে জানালে মন্দিরে সবাই ছুটে আসেন।
গোপীনাথ সংঘের সহসভাপতি সুমন চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আমাদের এলাকায় এই ঘটনা কখনো ঘটেনি। পূজা করতে দূরে যেতে হয় বলে এলাকায় প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে। সবার আনন্দ মাটি হয়ে গেছে এ ঘটনায়। প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি।
শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়ার পুরোহিত প্রবাল গোঁসাই বলেন, মন্দিরের পাশের ঘরের নিরঞ্জন আমাকে ভোর পাঁচটার সময় কল দিয়ে জানায় যে মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার ৮৫ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জ শহরে কোনোদিনও মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তদন্ত অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি চাই।
গোপীনাথ সংঘ ও গোপীনাথ মন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার সাহা বলেন, মন্দিরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিদিন পাহারায় ২০ থেকে ৫০ জনের টিম থাকে। গতকাল পাঁচজন এই মন্দিরে প্রতিমা পাহারা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে এসব করা হয়েছে। আমরা কাউকেই সন্দেহ করছি না বা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি কারা মূর্তি ভাঙচুর করেছে। আমরা শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই দুপুর ১২টার পর প্রতিবাদ মিছিলের উদ্যোগ নিয়েছি।
গোপীনাথ সংঘ ও গোপীনাথ মন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লিটন সরকার বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা এলাকাবাসী মিলে পূজার আয়োজন করেছি। আমদের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর আগে কোনোদিন এমন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এই অসাম্প্রদায়িক শহরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা যারা করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা পুলিশ প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের কাছে বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি আমরা এই দেশের নাগরিক। তা হলে কেন আমার মন্দির পাহারা দিতে হয়।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, আমরা তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি বসেছি। দুষ্কৃতকারী যেই হোক না কেন, আমরা আইনের আওতায় আনব।
তাসলিমা আক্তার/অমিয়/