আগে একশ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি বাজার করবার পারতাম। এহন এই টাকা দিয়ে বাজার করলে ব্যাগের কোণাও ভরে না। সারা দিনে যে টাকা রোজগার করি সব টাকা বাজারেই খরচ হইয়া যায়। সংসার আর চালাইবার পারতেছি না। দিন যত যাইতাছে, ততই সংসার চালাইতে কষ্ট হইতাছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর মেছুয়া বাজারে তরিতরকারি কিনতে এসে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর আরশেদ মিয়া।
তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘যখন যা কাজ পাই, সেই কাজ করে চার সদস্যের সংসার চালাই। কী দিন আইল! যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়তাছে, মনে হয় আমাদের মতো গরিব মানুষের একসময় না খেয়ে মরার মতো অবস্থা হইব।’
বাজার করে চলে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রুবেল আহমেদ। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়ছে। তবে আমাদের বেতন তো বাড়ছে না। বাজার করেই যদি সব টাকা খরচ হয়, তাহলে সংসারের আনুষঙ্গিক খরচ জোগাব কীভাবে? সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষইবা করব কীভাবে?’
বাজারগুলোতে প্রতিদিন অভিযান চালানোসহ মনিটরিং বাড়াতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে বাজার সিন্ডিকেট চক্রগুলোকে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের তরিতরকারির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। এ ছাড়া পটোল ৯০, শসা ৭০, বরবটি ১২০, করলা ১১০, চিচিঙ্গা ৬০, ধুন্দুল ৮০, টমেটো ২৫০, পুঁইশাক ৪০, গাজর ১৬০, ঝিঙে ৯০, লম্বা বেগুন ১০০, গোল বেগুন ১৬০, ফুলকপি ১২০, বাঁধাকপি ৫০, লাউ ৮০- ৯০ ও পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘তরিতরকারির দাম প্রতিদিনই উঠানামা করে। তবে সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতের কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এতে ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনে নিচ্ছেন। আমাদের কিছুই করার নেই।’
জাহিদ মিয়া নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘আমি সীমিত লাভ করেই বিক্রি করি। সিন্ডিকেট করে বেশি দাম রাখা হয় না। বেশি দামে কিনি বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এদিকে গত ৭ অক্টোবর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের এই ফোর্স গঠন করা হয়েছে। গঠন করা এই টাস্কফোর্স নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক ও পর্যালোচনা করবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
তবে সোমবার পর্যন্ত ময়মনসিংহের টাস্কফোর্সকে জেলার কোথাও অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। এর কারণ জানতে চাইলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েকদিন সরকারি ছুটি ছিল। তবে আগামীকাল থেকে অভিযান চালানো হবে।’
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘রবিবার নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তরিতরকারি, ডিমসহ অন্যান্য পণ্য খুচরা বিক্রেতা যে দামে কিনেছে, তার চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অভিযানটি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পুলিশের সহায়তায় নিজস্বভাবে করেছে। মঙ্গলবার থেকে গঠন করা টাস্কফোর্সের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে নিয়মিত অভিযান চালাবে।’
সালমান/