সময়টা শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা। হেমন্তের সকালের সূর্যটা সবেমাত্র প্রখরতা ছড়াতে শুরু করল। তবে মেঘেদের ছোটাছুটি থাকায় আকাশটা ঘোমট বেঁধে ছিল। যেন বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। এরই মধ্যেই চট্টগ্রাম মহানগরের নিউ মার্কেট সংলগ্ন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল এণ্ড কলেজ প্রাঙ্গনে একে একে আসতে শুরু করল শিক্ষার্থীরা। কেউ অভিভাবকের সঙ্গে, কেউবা আবার বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে। সবার চোখে মুখে সে কী উচ্ছ্বাস, আনন্দ। সারিবদ্ধভাবে সবাই আসন গ্রহণ করল। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান। এরপর অতিথিদের বক্তব্য। তারপরই শুরু হলো কাঙ্খিত সেই মুহুর্তের পালা।
এক এক করে শিক্ষার্থীরা ডাক পাচ্ছে মঞ্চে। তাইতো লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই কানে কানে কথা বলছে। কার পুরস্কার কী হতে পারে এসব যেন তাদের ভাবনার বিষয় হয়ে পড়েছে। দেশবরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ মঞ্চ অলঙ্কিত করেছেন অতিথিরা। তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করছেন শুভেচ্ছা অভিনন্দন ও সেরা পাঠক পুরস্কার। পুরস্কার পেয়েই শিক্ষার্থীরা বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন। কেননা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে নানা বিষয়ে পছন্দের সব বই, ক্রেষ্ট আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সনদ। যেখানে লেখা আছে তাদের বই পড়ে কৃতিত্ব অর্জনের কথা।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোন আয়োজিত স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ-২০২৪ এ এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। যেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর মিলন ঘটেছে। পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে নগরের ৯৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মিউনিসিপ্যাল স্কুল এণ্ড কলেজের মাঠ।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সমাজকর্মী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি পারভীন মাহমুদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী, রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল, গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।
কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বইপড়া কর্মসূচিতে কৃতিত্বের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরের ৫ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ছেচল্লিশ বছর ধরে সারাদেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানাবিধ উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।বর্তমানে সারাদেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বইপড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা। গতবছরও সমসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সবসময় আলোকিত মানুষ তৈরি করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, সুন্দর স্বপ্নে ভরা বই আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এসব বই একেকটি জ্ঞানের আধার। উন্নত জাতি গঠনে নতুন নতুন জ্ঞানের প্রয়োজন। জ্ঞান ছাড়া একটি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরাপাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতি পর্বে একজন অভিভাবককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন।
এম কে মনির/মাহফুজ/এমএ/