চট্টগ্রামের আলোচিত মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি পুলিশের সাবেক এসপি (পুলিশ সুপার) বাবুল আক্তার জামিন পেলেও কারাগার থেকে মুক্ত হননি। রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রধান ফটক দিয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যার পরও তিনি বের হননি। পরে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা ও ভাই নূরে আলম চলে যান।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবুল আক্তারকে জামিন দেন।
গত বছরের ১৩ মার্চ বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের নামে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত। এ মামলায় আসামিরা হলেন, বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম।
গত ২৭ নভেম্বর জামিন আদেশের পর রবিবার বিকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারগার থেকে মুক্ত হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টায়ও তিনি মুক্ত হননি। এদিন বিকাল ৪টায় কারা ফটকে আসেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা ও তার ভাই নূরে আলম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তারা ৫টার দিকে কারাগারে ভেতরে ঢুকেন। এর এক ঘন্টা পরে তারা বেরিয়ে আসেন। এসময় তাদেরকে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করলেও মুক্তা চুপ ছিলেন। তবে বাবুল আক্তারের ভাই নূরে আলম বলেন, তিনি আজ বের হচ্ছেন না। আগামীকাল হতে পারেন। আমরা এর বেশি কিছু জানিনা।
কারাগার থেকে কয়েকজন সুবেদার এসে সাংবাদিকদের জানান বাবুল আক্তার আজ বের হচ্ছেন না। তারা সাংবাদিকদের চলে যেতে অনুরোধ করেন।
ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া বলেন, আমি বাইরে আছি। আজ মুক্ত হচ্ছেন না বাবুল আক্তার। কবে হবেন তাও আমার জানা নেই।
এদিকে কারা ফটকে কেউ বলছেন বাবুল আক্তারের জামিন ফরম কারাগারে পৌঁছেনি। আবার কেউ বলছেন বেল ফরম পৌঁছলেও কারাগার কর্তৃপক্ষই আজ তাকে বের করছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অপরদিকে জানা গেছে, বাবুল আক্তারের জামিনের বিরুদ্ধে জামিন স্থগিত চেয়ে রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হকের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন মাহমুদা খানম মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। আদালত আগামী ৩ ডিসেম্বর তা আদেশের জন্য রাখেন আদালত। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান। বাবুল আক্তারের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মোহাম্মদ শিশির মনির। সে পর্যন্ত তিনি মুক্ত হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২০১৬ সালের ৫ জুন নগরের জিইসি এলাকায় ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। তখন তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাবুলের মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ওই দিনই মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা আরেকটি মামলা করেন। সেদিনই বাবুল আক্তারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাবুল ও শ্বশুরের করা দুটি মামলা তদন্ত করে পিবিআই। শ্বশুরের মামলায় ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার আগে বাবুল আক্তারের করা মামলায় ৯ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সেই মামলায় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্র ওই বছর ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। গত বছর ১৩ মার্চ বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। ৯ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
২০২১ সালের শুরুর দিকে বাবুল আক্তার মুক্তাকে বিয়ে করেন। এরপর বাবুল আক্তার মুক্তাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতে শুরু করেন। তারপর স্ত্রী হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার হলে তার আগের সংসারের দুই সন্তান ছেলে মাহমুদ মাহির ও মেয়ে তাবাসসুম তাজনীনকে নিয়ে কুমিল্লায় পৈতিক বাড়িতে চলে আসেন মুক্তা। জানা গেছে, বাবুল আক্তারের দুই সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়েও নানা-নানী ও দাদা-দাদীর মধ্যে ঢাকা ও মাগুরায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
মাহফুজ/এমএ/