-1730607094.jpg)
সুন্দরবনের নদ-নদী ও বিভিন্ন খাল থেকে বন বিভাগের অভিযানে অনেক নৌকা, ট্রলার জব্দ করা হয়। জব্দ হওয়া এসব নৌযান বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশন ও ফাঁড়িতে রাখা হয়। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের এমন কয়েকটি স্টেশন ও ফাঁড়িতে জব্দ থাকা অন্তত দুই হাজার ছোট-বড় নৌকা ও ট্রলার দিনের পর দিন পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা দ্রুত নিলামের কোনো উদ্যোগ বন বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় না। এতে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, জব্দ নৌযানগুলো মামলার আলামত হওয়ায় সেগুলো সরানো যায় না।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিসসূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কবাদক স্টেশন রয়েছে। এই চারটি স্টেশনের আওতাধীন বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের আওতায় কলাগাছিয়া, কাঠেরশ্বর, পুষ্পকাটি ও মান্দারবাড়িয়া, কদমতলার আওতাধীন মুন্সীগঞ্জ, চুনকুড়ি, নটাবেঁকি ও হলদেবুনিয়া; কৈখালী স্টেশনের আওতাধীন টেংরাখালী, মরগাং ও কাঁচিকাটা এবং কবাদক স্টেশনের আওতায় দোবেকি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। ১২টি টহল ফাঁড়ির মধ্যে রয়েছে পুষ্পকাটি, মান্দারবাড়িয়া, নটাবেঁকি, হলদেবুনিয়া নামের চারটি অভয়ারণ্য।
সূত্র আরও জানায়, বনজীবীরা বিভিন্ন সময় বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে চুরি করে বনে ঢোকেন। আবার অনুমতি নিয়ে ঢুকে অবৈধভাবে অভয়ারণ্যে গিয়ে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করেন। আবার কখনো মধু আহরণ করেন। অনেকে চুরি করে ঢোকেন কাঠ কিংবা গোলপাতা কাটতে। বন বিভাগের অভিযানে তাদের অনেকে নৌকা, ট্রলারসহ ধরা পড়েন। আবার অনেকে নৌকা ফেলে পালিয়ে যান। পরে জব্দ করা এসব নৌকা ও ট্রলার রাখা হয় বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ছোট একটি ডিঙি নৌকা তৈরি করতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাঝারি সাইজের নৌকায় খরচ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। আর বড় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়।
সুন্দরবনসংলগ্ন গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনিমুখো গ্রামের রহমত আলী গাজী (৫৫) দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সুন্দরবনে বিভিন্ন কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘অধিক লাভের আশায় কিছুসংখ্যক জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল চুরি করে সুন্দরবনে ঢোকেন। অধিকাংশ জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল গরিব।’
তিনি বলেন, ‘মালিকবিহীন নৌকাগুলো নিলামে দিলে সরকার অনেক টাকার রাজস্ব আয় করতে পারত। অন্যদিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা না গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা নিয়ে মালিকদের কাছে নৌকাগুলো ফেরত দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ হলে ওই সব নৌকা নষ্ট হতো না।’
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনের নদ-নদী থেকে বিভিন্ন সময় জব্দ করার পর চারটি স্টেশন কিংবা ১২টি টহল ফাঁড়িতে জব্দ নৌকা ও ট্রলারগুলো রাখা হয়। সাধারণত একটি নৌকা বা ট্রলার চার-পাঁচ মাস খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকলে এর কাঠ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রলারের ইঞ্জিন লোনাপানিতে বিকল হয়ে যায়।’
তিনি জানান, জব্দ করা এসব নৌকা-ট্রলারের সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে এসব স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতে বর্তমানে দুই-তিন হাজার নৌকা ও ট্রলার জব্দ থাকার কথা। কোনো কোনো মামলা পাঁচ-ছয় বছর ধরে চলে। তত দিনে নৌকা কিংবা ট্রলারগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আর মালিকবিহীন নৌকার নিলাম করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। যখন অনুমতি মেলে এর আগে নৌকা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নিলাম দেওয়ার সুযোগ থাকে না কিংবা দিলে কেউ অংশগ্রহণ করেন না। সব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে যেসব নৌকা ও ট্রলার জব্দ করা হয়, তা স্টেশনগুলোতে রাখা হয়। পরে নৌকা ও ট্রলারগুলোর মামলা নিষ্পত্তি জটিলতার কারণে এগুলো স্টেশনেই নষ্ট হয়ে যায়।