দখলদারিত্ব নিয়ে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে একের পর এক হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপজেলার বাজারসহ আশপাশ এলাকা। গত কয়েক বছর ধরেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি বিরাজমান। এর আগে কমিটি গঠন নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলার বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল, অন্যপক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে দলটির সাধারণ নেতা-কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। এ অবস্থায় দুই পক্ষের লাগাম টানতে গত শনিবার রাতে উপজেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রতিশোধ প্রবণতা, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মূলত এই দ্বন্দ্ব। এ বিরোধ পৌঁছেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে।
একটি ওয়াজ মাহফিলে ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (৩০ অক্টোবর) রাতে পৌর শহরের রাজগঞ্জ মোড়ে বিএনপির দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় মো. মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাবপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান ভাঙচুর ও সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে মুছা পক্ষের অনুসারীরা উপজেলা বাজারে শোডাউন করে অবস্থান নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার পর বাজারে অবস্থান ও শোডাউন করে ইকবাল গ্রুপ। এ সময় মুছার পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ইকবাল গ্রুপের লোকজন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সূত্র আরও জানায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে ইকবাল পক্ষ ও মুছা পক্ষের নেতা-কর্মীরা পৌর শহরে মিছিল বের করে। এ সময় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আতঙ্কে সাধারণ লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাঙচুর, ফাঁকা গুলি ও বোমাবাজির ঘটনায় আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয় মনিরামপুর।
মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ইকবাল গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আগে যারা ছাত্রলীগ করত এখন তারা বিএনপি নেতা ইকবালের ছেলের সঙ্গে রাজনীতি করছে। তারা একটি মাহফিলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। ইকবাল গ্রুপের ছেলেরা যাদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে তারা আবার আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইকবাল গ্রুপের লোকজন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সড়ক অবরোধ করে। ইকবাল গ্রুপের তাণ্ডবে পৌর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা ও জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল বলেন, ‘উপজেলা বাজারে গত কয়েকদিন ধরে যা হয়েছে, সব মুছার লোকজন করেছে। তারা বাজারে বোমাবাজি করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি তার লোকজন দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালাতে চেয়েছিল। সেটি প্রতিহত করতেই আমার লোকজন মাঠে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মো. মুছা স্বয়ং উপস্থিত থেকে অন্যের জমি দখল, গরু ছিনতাই করেছেন। অন্যের জমি দখল করে তিনি বিএনপির কার্যালয় করেছেন। আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সব মিথ্যা।’
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মুছা বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মনিরামপুরে যত অপকর্ম ঘটছে, সেগুলো বিএনপি নেতা ইকবালের লোকজন করছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা বাজারে যা ঘটছে সেটাও ইকবালের সরাসরি ইন্ধনে হচ্ছে। জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এসব অভিযোগ লিখিত আকারে পাঠানো হয়েছে।’
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের কার্যক্রম নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্র থেকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। আমরা উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত করেছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মনিরামপুর থানার ওসি পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো পক্ষই এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে দুই গ্রুপের হামলার ঘটনায় শহর উত্তপ্ত ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।