ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

মনিরামপুর বিএনপি দখল দ্বন্দ্বে হামলা-ভাঙচুর

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ এএম
দখল দ্বন্দ্বে হামলা-ভাঙচুর
যশোর

দখলদারিত্ব নিয়ে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে একের পর এক হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপজেলার বাজারসহ আশপাশ এলাকা। গত কয়েক বছর ধরেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি বিরাজমান। এর আগে কমিটি গঠন নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলার বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল, অন্যপক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে দলটির সাধারণ নেতা-কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। এ অবস্থায় দুই পক্ষের লাগাম টানতে গত শনিবার রাতে উপজেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রতিশোধ প্রবণতা, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মূলত এই দ্বন্দ্ব। এ বিরোধ পৌঁছেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে।

একটি ওয়াজ মাহফিলে ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (৩০ অক্টোবর) রাতে পৌর শহরের রাজগঞ্জ মোড়ে বিএনপির দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় মো. মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাবপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান ভাঙচুর ও সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। 

বিষয়টি নিয়ে মুছা পক্ষের অনুসারীরা উপজেলা বাজারে শোডাউন করে অবস্থান নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার পর বাজারে অবস্থান ও শোডাউন করে ইকবাল গ্রুপ। এ সময় মুছার পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ইকবাল গ্রুপের লোকজন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সূত্র আরও জানায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা চলে গেলে ইকবাল পক্ষ ও মুছা পক্ষের নেতা-কর্মীরা পৌর শহরে মিছিল বের করে। এ সময় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আতঙ্কে সাধারণ লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাঙচুর, ফাঁকা গুলি ও বোমাবাজির ঘটনায় আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয় মনিরামপুর। 

মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ইকবাল গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আগে যারা ছাত্রলীগ করত এখন তারা বিএনপি নেতা ইকবালের ছেলের সঙ্গে রাজনীতি করছে। তারা একটি মাহফিলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। ইকবাল গ্রুপের ছেলেরা যাদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে তারা আবার আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইকবাল গ্রুপের লোকজন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সড়ক অবরোধ করে। ইকবাল গ্রুপের তাণ্ডবে পৌর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা ও জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল বলেন, ‘উপজেলা বাজারে গত কয়েকদিন ধরে যা হয়েছে, সব মুছার লোকজন করেছে। তারা বাজারে বোমাবাজি করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি তার লোকজন দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালাতে চেয়েছিল। সেটি প্রতিহত করতেই আমার লোকজন মাঠে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মো. মুছা স্বয়ং উপস্থিত থেকে অন্যের জমি দখল, গরু ছিনতাই করেছেন। অন্যের জমি দখল করে তিনি বিএনপির কার্যালয় করেছেন। আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সব মিথ্যা।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মুছা বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মনিরামপুরে যত অপকর্ম ঘটছে, সেগুলো বিএনপি নেতা ইকবালের লোকজন করছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা বাজারে যা ঘটছে সেটাও ইকবালের সরাসরি ইন্ধনে হচ্ছে। জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এসব অভিযোগ লিখিত আকারে পাঠানো হয়েছে।’

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের কার্যক্রম নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্র থেকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। আমরা উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত করেছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মনিরামপুর থানার ওসি পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো পক্ষই এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে দুই গ্রুপের হামলার ঘটনায় শহর উত্তপ্ত ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। 

যানজটে অতিষ্ঠ ফেনীবাসী

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
যানজটে অতিষ্ঠ ফেনীবাসী
ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডে প্রতিদিন এমন তীব্র যানজট দেখা যায়। ছবি: খবরের কাগজ

ফেনী শহরের যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। এতে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দীর্ঘসময় নষ্ট হচ্ছে যাত্রী ও পথচারীদের। এদিকে সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় অবৈধ যানচলাচল দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে সড়কের দুই পাশে অবৈধ ফুটপাত দখল করে বসছে হকাররা। এতে যানজট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তবে প্রশাসনের আশা, এই সমস্যার দ্রুতই সমাধান হবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর শহরের বিভিন্ন সড়কে চলতে শুরু করে অবৈধ যানবাহন। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো হঠাৎ দখলে নেয় শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো।

অন্যদিকে ফুটপাত দখলে যায় প্রভাবশালীদের। দিনের শুরুর যানজট শেষ হয় না রাতেও। শহরের রেলগেট, ট্রাংক রোড, শহিদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক ও মহিপালে যানজটের দৃশ্য প্রতিদিনের। চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ যথাযথভাবে কাজ করলে নিয়ন্ত্রণে আসবে সড়কের শৃঙ্খলা। এ ছাড়া আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় বেপরোয়াভাবে চলছে অবৈধ যান।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরে নির্ধারিত বাস ও সিএনজি অটোরিকশা স্টপেজ না থাকায় যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করছে চালকরা। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনা। যে যার মতো করে গাড়ি চালাচ্ছেন। কেউ ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করছেন না।

নুর হোসেন নামে এক চালক জানান, শহরের জেল রোড থেকে শহিদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক ৫ মিনিটের রাস্তা। এটা পার হতে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে তার। শহরের আইনশৃঙ্খলা এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে, এর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

মোরশেদ আলম নামে এক পথচারী জানান, ‘গত দুই-তিন মাস ধরে শহরে যানজট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এর কারণ, গ্রাম থেকে বিভিন্ন ধরনের রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শহরমুখী হয়েছে। এ জন্য শহরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পৌর সভায় অবৈধ যান ও ফুটপাতে হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে।’

ছকিনা আক্তার রুনা নামে একজন বলেন, ‘মহিপাল থেকে সদর হাসপাতাল যাব। রাস্তায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বসেছিলাম। শহরের যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে মানুষ কিভাবে চলবে?’ শহরের রামপুরের বাসিন্দা ওসমান গনি রাসেল বলেন, ‘শহরের প্রাণকেন্দ্র শহিদ মিনার এখন হকারদের দখলে। শুধু শহিদ মিনার নয়, ট্রাংক রোডে বড় মসজিদ, শহিদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে হকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বহু গুণ। সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তার তিন ভাগের দুইভাগ দখল করে রাখে তারা। এসব বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

স্থানীয় সংগঠক ও লেখক ইমন-উল হক বলেন, ‘ফেনী শহর পুরোটা এখন হকারদের দখলে। ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনে মানুষ যেভাবে খুশি সেভাবে শহরের রাস্তাঘাট দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিয়ে বসেছে।’

জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) এস এম শওকত জানান, শহরে যানজট নিরসনে পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এর মধ্যে গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ৪৯৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। অবৈধ যানের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ফেনী পৌর সভার প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, ‘সড়কে বেপরোয়া কিছু যান চলাচল করছে, এটি সত্য। তবে খুব দ্রুত সময়ে পৌরসভা এসব অবৈধ যানের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে অভিযান চালাবে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা বসেছে। হকারদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।’

জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ। প্রতিনিয়ত অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে যানজট নিরসনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ চলছে।’

দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা হাসপাতাল চলে ১ জন চিকিৎসকে

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম
দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা হাসপাতাল চলে ১ জন চিকিৎসকে
দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। ছবি: খবরের কাগজ

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। এতে এ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো থাকলেও এগুলোর কার্যক্রম সচল নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালটি

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে হাসপাতালটি নির্মিত হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে এটি পরিচালিত হয়। ২০০১ সালে হাসপাতালটি রাজস্ব খাতে আনা হলে নেমে আসে জনদুর্ভোগ। ২০১১ সালের অক্টোবরে হাসপাতালটিতে ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসাসেবা চালু হয়। প্রথম কয়েক মাস ভালোভাবেই এর কার্যক্রম চললেও পরবর্তী সময়ে অচল হয়ে পড়ে সেটি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। বর্তমানে ইনডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। আউটডোর ও জরুরি চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও সেটা নামেমাত্র। ইউনিয়নের কেউ অসুস্থ হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।

হাসপাতালটির মূল ফটকে প্রায় সময়ই তালা ঝুলানো থাকে। হঠাৎ কখনো খোলা থাকলেও ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, এর মাঠে গরু-ছাগল চড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরের অধিকাংশ দরজায় তালা ঝুলানোর কারণে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ইনডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকার কারণে আধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে।

হাসপাতালের কার্যক্রম সচল রাখতে ৪ জন মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন হলেও সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। চারজন সহকারী নার্স কর্মরত থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। ফার্মাসিস্ট পদে একজন থাকার কথা থাকলেও পদটি জনবলশূন্য

অপরদিকে আয়া পদটি শূন্য। সেখানে প্রয়োজন ২ জন নারী। অফিস সহায়ক পদে দুজন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কেউ কর্মরত নেই। সুইপার পদে দুজন প্রয়োজন হলেও কর্মরত আছেন ১ জন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকায় চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত এ ইউনিয়নের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। এখানে ডাক্তার এসে দুই ঘণ্টা থেকে চলে যান।’ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘হাসপাতালে যে যন্ত্রপাতি আছে। সেগুলো যদি চালু থাকে তা হলে আমাদের পাটগ্রাম যাওয়া লাগত না। এখানেই চিকিৎসা পাইতাম।’

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নূর আরেফিন প্রধান জানান, হাসপাতালটি প্রত্যন্ত এলাকায়। কিন্তু এর কার্যক্রমের মধ্যে শুধু আউটডোর চালু আছে। এখানে জনবলের অভাবে ইনডোর চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। এখানে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেওয়া উচিত।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান আলী বলেন, ‘দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা হাসপাতালে একজন চিকিৎসক আছেন। একজনের পক্ষে তো ইনডোর চালু রাখা সম্ভব না। আরও চিকিৎসক ও নার্স দরকার। অ্যাম্বুলেন্স আছে একটি। তবে চালক নেই। দীর্ঘদিন পরে থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাটারি ও টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে।’

সুস্থ হয়নি ঊরুতে গুলিবিদ্ধ তোফাজ্জল

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
সুস্থ হয়নি ঊরুতে গুলিবিদ্ধ তোফাজ্জল
তোফাজ্জল হোসেন

সুনামগঞ্জে ৪ আগস্টের সরকার পতনের বিক্ষোভে যোগ দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন ১৪ বছরের তোফাজ্জল হোসেন। রৌজ গার্ডেন রেস্টুরেন্টে কর্মরত তোফাজ্জল বাম ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হন এবং দীর্ঘ চিকিৎসার পরও সুস্থ হয়নি সে। আর্থিক সংকটে তার পরিবার চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। স্থানীয়দের সহায়তায় চিকিৎসা চললেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে পরিবারটি এখন দিশাহারা। তোফাজ্জলকে সুস্থ করে তুলতে সবার কাছে মানবিক সহায়তা চেয়েছেন তার স্বজনরা।

গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জ শহরও উত্তাল ছিল। সকাল থেকেই দিনটি ছিল থমথমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা দখলে নেয়। ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আর এদের সঙ্গে যোগ দেয় কিশোর তোফাজ্জল। এদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে যাওয়ার পথে কামারখাল এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ আক্রমণ করে। পুলিশ নির্বিচারে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। টিয়ারশেল আর রাবার বুলেটের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা।

পুলিশের বেপরোয়া টিয়ারশেল আর রাবার বুলেটের মুখে টিকতে না পেরে ছাত্র-জনতা পিছু হটতে থাকে। ছাত্র-জনতা, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশ্রামে থাকা রেস্টুরেন্টবয় তোফাজ্জল দেখতে পান যে তার মতো অনেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছেন। কালক্ষেপণ না করে তোফাজ্জলও মিছিলে যোগ দেন। এ সময় পুলিশ আরও হিংস্র হয়ে ওঠে। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের তীব্রতায় টিকতে না পেরে ছাত্র-জনতার একটি অংশ সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের কালেক্টরেট এলাকায় অবস্থান নেয়। পুলিশের টিয়ারশেলের ধোঁয়া আর ঝাঁজে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে কালেক্টরেট এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়।

ছাত্র-জনতার আরেক অংশ শহরের আরপিন নগর গলির ভেতর ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এতেও রক্ষা হয়নি ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়া তোফাজ্জল হোসেনের। আরপিন নগর কবরস্থান এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের গুলি তার বাম ঊরুতে বিদ্ধ হয়। সেখানে কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তোফাজ্জলের বাড়ি সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটি সাফেলা গ্রামে। সম্প্রতি তার বাড়ি গিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। ওই দিনের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তোফাজ্জল জানান, ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলের মুখে টিকতে না পেরে অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনিও আরপিন নগর গলির ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় তিনি আরপিন নগর কবরস্থান এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ তাকে গুলি করে। গুলি তার বাম ঊরুতে বিদ্ধ হয়। তোফাজ্জল আরও জানান, ঊরুতে গুলি লাগার পর তিনি মাটিতে গড়াগড়ি করলেও পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে নেওয়ার মতো কেউ এগিয়ে আসেনি। মাটিতে গড়াগড়ির একপর্যায়ে রৌজ গার্ডেনের বাবুর্চি লিলু মিয়া তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে কয়েক দফা চিকিৎসা চলে তোফাজ্জলের। প্রথম দফা তার ঊরু থেকে দুই থেকে তিনটি গুলি বের করেন চিকিৎসকরা। পরে বাড়িতে চলে আসেন তোফাজ্জল। কয়েক দিন পর ঊরুতে ব্যথা হলে আবারও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এ সময় তার ঊরু থেকে আরও কয়েকটি গুলি বের করেন চিকিৎসক। এর পর আরেক দফা ঊরুতে ব্যথা শুরু হলে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন তোফাজ্জল। তৃতীয় দফা সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

তোফাজ্জল জানান, সিলেট ওসমানী মেডিকেলে যাওয়ার পর তার ঊরু থেকে আরও তিনটি গুলি বের করেন চিকিৎসকরা। এরপর ডান ঊরু থেকে মাংস নিয়ে বাম ঊরুতে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়।

তোফাজ্জল আরও জানান, তিনি উপজেলার ইয়াকুব উল্লাহ পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পরিবারের অর্থকষ্ট লাঘবে তিনি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন।

সেদিন আহত তোফাজ্জলকে উদ্ধারের ভয়ঙ্কর বর্ণনা দেন রৌজ গার্ডেনের বাবুর্চি লিলু মিয়া। তিনি শুনতে পান তার রেস্টুরেন্টের বয় তোফাজ্জল পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। এ খবর শুনে তিনি বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তাকে তিনি খুঁজে পান শহরের আরপিন নগর কবরস্থানের পাশের সড়কে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তোফাজ্জল তখন চিৎকার করছিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাকে উদ্ধার করে রেস্টুরেন্টের অন্যান্য বয়ের সহযোগিতায় সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে পাঠান।

তোফাজ্জলের মা মোছা. লুৎফা বেগম জানান, তার স্বামী একজন দিনমজুর। সংসার চলে না। তোফাজ্জল পরিবারের বড় ছেলে, তাই তাকে গত মে মাসে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সুনামগঞ্জ রৌজ গার্ডেন রেস্টুরেন্টে চাকরিতে পাঠানো হয়।

তোফাজ্জলের বাবা মো. আকবর আলী জানান, দুই মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে তার পরিবার। দিনমজুরি করে সংসার চলে না। তাই বড় ছেলে তোফাজ্জলকে সুনামগঞ্জ রৌজ গার্ডেন রেস্টুরেন্টে চাকরি দিয়েছেন। ছোট ছেলে রায়হান আহমদ গ্রামের (সাফেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি পড়ে)। বড় মেয়ে আকলিমা আক্তার সুমাইয়া (১৮) ও ছোট মেয়ে মাহমুদা বেগমকে (১৬) জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি পঞ্চগ্রাম মহিলা মাদ্রাসায় (আবাসিক) পড়তে দিয়েছেন। বড় মেয়ে এবার দশম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, ‘তোফাজ্জল এতদিন সংসারে সহায়তা করেছে। সবার ভরণপোষণে আমার সঙ্গে আর্থিক দায়িত্ব পালন করেছে। এখন তোফাজ্জলই পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’

তিনি জানান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মনাজ্জির হোসেনের সহযোগিতায় চিকিৎসা খরচ চালানো হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও আরও কিছু আর্থিক সহযোগিতা তারা পেয়েছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। ছেলে যেন সুস্থ হয়ে ওঠে সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মনাজ্জির হোসেন জানান, জেলা বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলো চিকিৎসার জন্য তোফাজ্জলকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে। সূত্র: বাসস

ইঁদুরের জমানো ধানে ভাগ বসিয়ে সংসার চালান আয়মনা!

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ এএম
ইঁদুরের জমানো ধানে ভাগ বসিয়ে সংসার চালান আয়মনা!
রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার শালঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আয়মনা বেওয়া ইঁদুরের গর্তে ধান খুঁজছেন। ছবি: খবরের কাগজ

হেমন্তের এই সময়ে কৃষক-কৃষানিরা যখন আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তখন সকাল-সন্ধ্যা ইঁদুরের গর্ত খুঁজছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার শালঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আয়মনা বেওয়া। গর্ত খুঁজে পেলেই শুরু করছেন খোঁড়াখুঁড়ি, বের করছেন ইঁদুরের জমানো ধানের শীষ। এ ধান বিক্রির টাকা দিয়েই বছরের অর্ধেকটা সময় সংসার চলে ৫৮ বছর বয়সী হতদরিদ্র এই নারীর।

নিজের কষ্টের কথা জানিয়ে আয়মনা বেওয়া বলেন, ‘অনেক আগেই স্বামী হারিয়েছি। একমাত্র ছেলে থেকেও নেই। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতায় খোঁজ নেয় না ছেলে। তাই বৃদ্ধ বয়সেও নিজেকেই জীবিকার সন্ধান করতে হয়। ফলে প্রতিদিন সকালে মানুষের বাড়িতে কাজে যাই। আর আমন ধানের মৌসুম এলে বাসাবাড়ির কাজের ফাঁকে সকাল-বিকেল মাঠে গিয়ে ইঁদুরের গর্ত খুঁজি। সেই গর্ত থেকে কুড়ানো ধানে আমার বছরের অর্ধেকটা সময় পার হয়ে যায়। এ ছাড়াও এ ধান দিয়েই শীতের পিঠাও খাওয়া হয়। আর বছরের বাকি অর্ধেক দিনমজুরের কাজ করেই চলে একার সংসার।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে ইঁদুরের কারণে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যে পরিমাণ ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে, তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৫৪ লাখ মানুষের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। এদিকে ইঁদুরের জ্বালায় প্রতিবছর অতিষ্ঠ থাকেন বলে জানান কৃষকরা।

দুর্গাপুর পৌর এলাকার শালঘরিয়া গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, ‘আমন মৌসুমে কৃষকরা ধান কেটে রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলার আগেই ইঁদুর পাকা শীষ কেটে গর্তে নিয়ে রাখে। ইঁদুরের রাখা ধানের সেই শীষ খুঁজে বের করেন আয়মনা বেওয়াসহ আরও অনেকে। এ ধান বিক্রি করেই অর্ধেক বছর পার হয় তাদের। এটাই হচ্ছে তাদের নবান্ন উৎসব। তাই তাদের ধান সংগ্রহে আমরা বাধা দিই না।’

জানা যায়, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় প্রতিবছরই আমন মৌসুমে ধান কাটার পর খেতগুলোতে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে শীষ সংগ্রহ করেন আয়মনা বেওয়া। জীবিকার তাগিদে প্রতি পদে নানা ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয় তাকে। ইঁদুরের গর্তে সাপ পোকামাকড়ের ভয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আয়মনা বেওয়া বলেন, ‘পেটের খিদের চেয়ে ভয় আর নাই। তাই গর্ত থেকে ধান সংগ্রহের সময় এগুলো মাথায় থাকে না। শুধু বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চলে না। তাই খুন্তি কোদাল চালাই। বস্তা নিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করি। সেই ধান বিক্রির টাকা দিয়ে চলে বছরের প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস।’

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা পারভীন লাবণী বলেন, ‘ইঁদুরের গর্তে সাপ ও বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এভাবে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও অনেকে পেটের তাগিদে এ কাজ করে থাকেন। আর এতে যে কারও জীবন মৃত্যুর মুখেও পড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের ক্ষতি থেকে বাঁচতে ইঁদুর নিধনের ফাঁদ এবং রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন করা সম্ভব। এতে কৃষকরা উপকৃত হবেন।’

ধামরাইয়ের ট্রমা সেন্টারটি নিজেই ট্রমায়

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৮ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ এএম
ধামরাইয়ের ট্রমা সেন্টারটি নিজেই ট্রমায়
ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি ১২ বছর ধরে অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে। ছবি: খবরের কাগজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ঢাকার ধামরাইয়ে তৈরি করা হয় ট্রমা সেন্টার। কিন্তু ১২ বছর পার হলেও আজও ট্রমা সেন্টারটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে। দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে সেটি। ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে। সেই সঙ্গে জানালা ও লোহার গেটগুলোতে মরিচা ধরেছে। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টাকার ট্রমা সেন্টারটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধামরাই পৌরশহরের ইসলামপুর এলাকায় উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরেই তৈরি করা হয়েছে ট্রমা সেন্টারটি। ভবনের মূল ফটকে ঝুলছে তালা। ফটকের সামনে কয়েকটি ভাঙা চেয়ার ও একটি টেবিল নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। সামনে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। লোহার কলাপসিবল গেটে মরিচা পড়েছে। ভবনটির ভেতরের বিভিন্ন অংশে ধুলোবালির পুরো আস্তরণ জমে আছে। ভবনের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে লতাপাতা গজিয়ে উঠেছে। ছাদে বেড়ে উঠেছে ছোট আকৃতির গাছ।

ভবনটির দ্বিতীয়তলার কার্নিশে ৫টি এসির বাইরের অংশে জমেছে ধুলোবালি। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ভবনের পেছনে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে বলে জানান স্থানীয়রা। দেখভালের লোক না থাকায় ট্রমা সেন্টারটি এখন যেন নিজেই রোগী হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় ৩ তলা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। কিন্তু ওই সময় এর সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়নি, দেওয়া হয়নি বৈদ্যুতিক সংযোগ। লিংক করিডোরের কাজ এখনো অসমাপ্ত। ভবনের সামনের সড়কে কার্পেটিং করা হয়নি। সেই অবস্থায় ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য ওই সময়ের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানায় গণপূর্ত বিভাগ।

কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গণপূর্ত বিভাগকে একাধিকবার অসম্পন্ন কাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি গণপূর্ত বিভাগ।

অপরদিকে ট্রমা সেন্টারটিতে প্রায় ১২ বছর আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। অথচ বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেই বিল আসে ১২ লাখ টাকার মতো। একদিকে ট্রমা সেন্টারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝে পায়নি, অপরদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে বিলের মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে।

পায়ে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘসময় ধরে ভবনটি পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ট্রমা সেন্টারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিলে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

হাসপাতালের পাশে বসবাস করেন জসিম মিয়া বলেন, ‘১২ বছর ধরে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করে ফেলে রেখেছে। সমস্যা কী আমরা জানি না। সন্ধ্যা হলেই সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের আর ঢাকায় যেতে হবে না। এখানেই চিকিৎসা নিতে পারবে।’

ইমরান হোসেন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কবে চালু হবে তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। কোটি টাকার ভবনটি দ্রুত চালু করা দরকার।’

ট্রমা সেন্টারটি বুঝে পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছিলেন সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে জানাবেন বলে কেটে যায় বছরের পর বছর।

বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে বিদ্যুৎ বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের একত্রে কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেন্টারটি চালু করার জন্য ভাবছেন। দ্রুত এটি চালু জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’