সানজিদা ইসলাম (বামে) ,নুরহাবা আক্তার নিশু (মধ্যে), শশী আক্তার নিহা (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় তিন কিশোরী শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। এতে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিনজনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিখোঁজ হওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছেন।
পৃথক এ তিন ঘটনাকে অপহরণ হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলেও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। পুলিশের ধারণা স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ঘর থেকে পালিয়ে যেতে পারে। কারণ অপহরণ করার মতো ঘটনা পুলিশের নজরে আসেনি। তাই স্বেচ্ছায় স্কুল থেকে বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে যেতে পারে শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি রুজু করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর (বুধবার) উপজেলা সদরের দুই কিশোরী নিখোঁজ হন। ৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন ভুজপুর থেকে অপর কিশোরী। তিনটি ঘটনায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে থানায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি পাইলট গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম (১৪)। সে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হাসানের কন্যা। তার পরিবারের দাবি বুধবার সকাল ৯টায় ফটিকছড়ি গার্লস স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় বিবিরহাট বাস স্টেশন থেকে সে কোনোভাবে নিখোঁজ হয়। তার বাবা মোহাম্মদ হাসান খবরের কাগজকে বলেন, আমার মেয়েকে কেউ অপহরণ করেছে। আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলেছে। কিন্তু এখনও আমার মেয়ের খোঁজ দিতে পারেনি। আমরাও আত্নীয় স্বজনদের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি সন্ধান মেলেনি।
ফটিকছড়ির হাইদচকিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শশী আক্তার নিহা (১৪)। সেও পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে সে স্কুলে যায়। এরপর কোথায় কীভাবে স্কুল থেকে নিখোঁজ হয় তা কেউ জানে না। পাইন্দং ইউনিয়নের দর্জি বাড়ীর মোহাম্মদ আরিফের কন্যা। তিনি দুবাই প্রবাসী। তার বাবার বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম খবরের কাগজকে বলেন, নিহা প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিকভাবে স্কুলে যায়। কিন্তু বিকাল ৩টার দিকে আমরা জানতে পারি সে বাড়ি আসেনি। তখন আমরা খোঁজাখুজি শুরু করি। আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। কিন্তু এখনও আমার ভাতিজির সন্ধান পাইনি।
ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানা এলাকার হেয়াঁকো গ্রিন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরহাবা আক্তার নিশু (১৫) নিখোঁজ হন। বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশে গিয়ে সে নিঁখোজ হয়েছে বলে জানা গেছে। সে ওই এলাকার নুরুল হুদার কন্যা। তিনি ৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়েছে বলে জানান তার বাবা। থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর পুলিশ এখনও সন্ধান দিতে পারেনি।
নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, আমার মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরেনি। আমি আমার মেয়ের সন্ধান চাই। সে যদি কারো সঙ্গে পালিয়ে গিয়েও থাকে আমি সেই তথ্যটি হলেও পেতে চাই। তখন মনকে স্বান্তনা দিতে পারবো এই ভেবে যে, আমার মেয়ে বেঁচে আছে। কিন্তু পুলিশ কোনো কাজই করছে না।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ফটিকছড়ি সদর থেকে দুই কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণের কথা বলা হলেও অপহরণের তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা তদন্ত করে দেখেছি। হয়ত বন্ধুর সঙ্গে স্বেচ্চায় চলে যেতে পারে, এমনটি মনে হচ্ছে আমার। আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে অবস্থান জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত অব্যাহত আছে। এ দুই ঘটনায় ফটিকছড়ি থানায় জিডি হয়েছে।
অপর কিশোরীর ঘটনায় ভূজপুর থানায় জিডি হয়েছে। ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরজুন খবরের কাগজকে বলেন, শিক্ষার্থী নুরহাবা আক্তার নিশু নিখোঁজের ঘটনায় আমরা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করেছি। কিন্তু এ ঘটনায় কোনো অগ্রহতি আমরা করতে পারিনি।
আবদুস সাত্তার/মাহফুজ/এমএ/