ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হলে কমিশনারকে সরাসরি ফোন করার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ক্রেতা থেকে ভ্যাট সংগ্রহ করে তা সরকারকে দেয়। এতে অনেক ব্যবসায়ী সরকারের টাকা দিতে চান না। এ জন্য ভ্যাট কর্মকর্তাকে কঠোর হতে হয়।
তবে কোনো ব্যবসায়ী যদি হয়রানির শিকার হন তাহলে আমার দপ্তর সবসময় খোলা রয়েছে, আমার মোবাইল নম্বরও খোলা আছে। কোথাও হয়রানি অনিয়ম দুর্নীতি দেখলে আমাকে জানাবেন। অনেক সময় ভ্যাটের কর্মকর্তারাও হয়রানি করে অবৈধ আয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের চাপ সৃষ্টি করে। এখন সেই সুযোগ আর থাকবে না। দেশে এমন আইন করা হবে যাতে ব্যবসায়ীরা খুশি মনে সরকারকে ভ্যাট দেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের উদ্যোগে আলোচনা সভার সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলে তিনি।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের দেওয়া রাজস্ব থেকেই সরকার উন্নয়ন করে। আগে বড় বড় মেগা প্রকল্প করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোতে কোন জবাবদিহিতা ছিল না। সাধারণ মানুষের কল্যাণ ছিল না। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য রাজস্ব অর্থ খরচ করা হলে মানুষের মধ্যে এতো হাহাকার থাকতো না।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। জুলাই বিপ্লবের পর এ সুযোগ এসেছে প্রয়োজনে আমার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন।
দেশকে এখন সঠিক পথে চলতে হবে। কিন্তু ভ্যাট গ্রহণ করে সরকারকে না দিলে আমিও আওয়াজ তুলবো আপনাদের বিরুদ্ধে। আমি লন্ডনের বেগম পাড়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে কী আছে আমি জানি। আমার টাকা বেগম পাড়ায় কেন যাবে। আপনাদের টাকায় সরকার যথাযথ উন্নয়ন করুক এটা সকলের দাবি।
রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত বলেন, ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করে বিএনপি। বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ভ্যাট ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের উন্নয়নে প্রত্যেক করদাতার উচিত পণ্য বা সেবা ক্রয়ের পর ভ্যাট চালান গ্রহণ করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আহরিত ভ্যাটের শতভাগ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান নিশ্চিত করা।
ভ্যাট প্রশাসন সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান ভ্যাট প্রশাসনের সংস্কার করতে হবে এবং ভ্যাট আহরণের ক্ষেত্রে ভ্যাট কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উচিত।
পাশাপাশি তিনি ভ্যাট হারের ক্ষেত্রেও সামঞ্জস্য বিধানের কথা বলেন। রাজস্ব প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে করদাতাদের অংশগ্রহণকে তিনি স্বাগত জানান।
ভ্যাট দিবসের আলোচনায় বক্তারা বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো উন্নয়ন। উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি হলো রাজস্ব। বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মকৌশল রয়েছে। উন্নয়নকে সঠিক পথে চলমান রাখার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। তাই কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি সঠিকভাবে নীতি প্রণয়ন এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্যতম অগ্রাধিকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট ব্যবস্থার প্রশাসনিক সংস্কার পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনসহ সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের উপর যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা সময়োচিত এবং ভ্যাট ব্যবস্থার প্রকৃত সুফল পেতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার ড. মো. সামছুল আরেফিন, ভ্যাট আপিল কমিশনার মো. মাহফুজুল হক ভূঁঞা, চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন প্রমুখ।
আবদুস সাত্তার/নাবিল/এমএ/