চট্টগ্রাম মহানগরের ৪১টি ওয়ার্ডের ৪১০০ জন শীর্ষ গৃহকরখেলাপিদের তালিকা তৈরির জন্য রাজস্ব বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগর ভবনে চসিকের রাজস্ব ও প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে সভায় তিনি এসব সিদ্ধান্ত জানান।
প্রাথমিকভাবে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ওয়ার্ডের শীর্ষ ১০০ জন করে গৃহকরখেলাপিদের তালিকা ১ সপ্তাহের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আগামী রবিবার থেকে তিনি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাবেন। খেলাপিদের বকেয়া কর প্রদানের আহ্বান জানাবেন। কোনো স্থাপনা মালিক আর্থিকসংকটে থাকলে বিশেষ বিবেচনা করা হবে। তবে গায়ের জোর দেখিয়ে কেউ কর না দিলে আইনের আওতায় আনা হবে। গৃহকর বাড়ানোর পরিবর্তে যারা কর দিচ্ছে না তাদের কাছ থেকে আদায় নিশ্চিত করতে হবে। কর প্রদান অটোমেশনের মাধ্যমে নাগরিকদের কর প্রদান সহজ করারও ঘোষণা দেন তিনি।
চসিক মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশনের যেসব মার্কেট, হাট-বাজার-ঘাট আছে তা থেকেও রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। হাট-ঘাট নিয়ে মামলা থাকলে তাও নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেবেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার পাশাপাশি নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকৌশল বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগের নাগরিক সেবামূলক কাজের মান বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে শাহাদাত বলেন, কাজের মান ঠিক না হলে ঠিকাদার বিল পাবে না। চট্টগ্রাম নগরীর অবকাঠামোগত সক্ষমতার সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জড়িত। এ জন্য প্রকৌশল কাজের মান বাড়াতে হবে। ঠিকাদাররা যেসব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছেন, তা পরীক্ষা করা হবে।
চসিকের আয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মেয়র বলেন, চসিক বর্জ্য থেকে আয় করতে পারে। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে সার বানানো যায়। প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে প্লাস্টিকের দানা বানানো যায়। এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বন্দরনগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি করপোরেশন আর্থিকভাবে লাভবান হবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে আবর্জনা থাকলে তার দায় তাকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেনস বাতিল করা হবে। বৈঠকে বারইপাড়া খাল প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন মেয়র। এ ছাড়া সড়কে আলোকায়ন নিশ্চিত করা এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ব্যবহারেরও নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, রাজস্ব কর্মকর্তা অফিসার মো. সাব্বির রহমান সানি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি মো. আনিসুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম, আনোয়ার জাহান, রিফাতুল করিম, তাসমিয়া তাহসিন, নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর প্রমুখ।
বিপ্লব উদ্যানে হবে গ্রিন পার্ক
এদিকে চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে নতুন অবকাঠামো ভেঙে নাগরিকদের জন্য গ্রিন পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বৃহস্পতিবার নগরীর দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং সচিব আশরাফুল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্লব উদ্যান এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র।
পরিদর্শন শেষে ডা. শাহাদাত বলেন, বিপ্লব উদ্যানের নতুন মার্কেটের জন্য করা স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ বিপ্লব উদ্যান থেকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, যেটা ঠিক এর পেছনেই ছিল সেখান থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বলেছিলেন, আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করছি। জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তানি আর্মির মেজর ছিলেন। বিদ্রোহ করার কারণে তার কোর্ট মার্শাল হতে পারত। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সেদিন তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। সেটার জন্য এ বিপ্লব উদ্যান ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান।
মেয়র বলেন, বিপ্লব উদ্যানে মার্কেটের জন্য যে স্থাপনাগুলো করা হচ্ছে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে। এখানে কোনো নতুন স্থাপনা হবে না। এখানে সবুজের সমারোহ হবে। এখানে আবারও পাখি ডাকবে। মানুষ হাঁটবে ও অক্সিজেন নেবে। মালিক সমিতির যিনি সেক্রেটারি আছেন আমি তাকে নির্দেশ দিচ্ছি, এখানে নবনির্মিত লোহার কাঠামাগুলো ভেঙে দেবেন। আমরা এখানে একটি গ্রিন পার্ক করব।
উল্লেখ্য, চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব দেন রিফর্ম লিমিটেড ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে। সেখানে দোতলা একটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়। যার পুরোটাই খাবারের দোকান। চুক্তিতে ছিল, উদ্যানের পূর্ব পাশে প্রত্যেকটি ১৫০ বর্গফুটের মোট ২৫টি দোকান নির্মাণ করা যাবে। কিন্তু প্রতিটি দোকান করা হয় ২০০ বর্গফুটের।