‘বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে, কিন্তু আল্লাহ যে আমার হাতে লেখে রাখিছে আপনাক। এটার কী হবে কন? আপনি মানকার (আরেক বিএনপি নেতা) সঙ্গে যোগাযোগ করে কী করবেন, মানকা বাঁচাতে পারবে? ভাগ মিলতিছে না। আপনি আমার এই নম্বরে বিকাশ, নগদ সব আছে ১ লাখ টাকা পাঠায়ে দ্যান।’
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল আলমকে ফোন করে এভাবেই চাঁদা দাবি করেছেন স্থানীয় উপজেলা বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন।
তাদের দুজনের মধ্যে কথপোকথনের ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ফোনকল রেকর্ড আসে খবরের কাগজের হাতে। বদলগাছী থানায় সম্প্রতি করা একটি বিস্ফোরক মামলার বাদী বিএনপি নেতা সৌখিন। সেই মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে সামসুল আলম অভিযোগ করেন। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সৌখিন।
সামসুল আলমের বাড়ি বদলগাছী উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। তিনি বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ। সৌখিনের বাড়ি পাশের চাংলা গ্রামে।
জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গোবরচাঁপা হাটের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সেখান থেকে অবিস্ফোরিত ৬টি ককটেল উদ্ধার করে থানার পুলিশ। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের ৪০ নেতা-কর্মীর নামে বিস্ফোরক মামলা করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী বদলগাছী উপজেলা বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক বাবর আলীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু মামলার পর থেকেই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তবে এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি। সৌখিন ও সামসুলের ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি এলাকায় চাউর হয়।
সাবেক উপজেলা চ্যোরম্যান সামসুল আলম বলেন, ‘বিএনপি নেতা সৌখিন চাঁদা দাবি করে বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজিয়ে তিনি থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় আমাকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এরপর মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘সম্প্রতি সামসুলের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। ঘটনাটি অনেক আগের। উপজেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পর। সে সময় শোনা যাচ্ছিল, বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক নামে এক বিএনপি নেতাকে সামসুল আলম দুই লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন। আমি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি।’
তবে এ বিষয়ে আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক বলেন, ‘সৌখিন মিথ্যা বলেছেন। আমার বিরুদ্ধে কেউ চাঁদাবাজির কোনো ঘটনার প্রমাণ দেখাতে পারবে না। যারা এসব মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি চৌধুরী টিপু বলেন, সৌখিন ও সামসুলের কল রেকর্ডের ঘটনা অনেক আগের। তবে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যে এ ধরনের কাজ করবে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী জানান, চাঁদা দাবির ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। ৪ নভেম্বর গোবরচাঁপা হাটের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে এজাহার নেওয়া হবে।