যশোরে পাঁচ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) কাজ না পাওয়া নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর উপস্থিতিতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছোটলু জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের আপন ভাই। তিনি ‘এ কে শরফুদ্দৌলা’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের জন্য ছয়টি গ্রুপে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এতে ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয়। ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠান কয়েকটি গ্রুপের কাজ পেলেও সব পায়নি। বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালে তিনি একদল যুবককে নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদের কক্ষে যান। সব কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ এবং ওই সময় উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটলু তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে কক্ষ ত্যাগ করেন। এর পর ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ। প্রবেশ করেই তিনি তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুনকে শাসাতে থাকেন। এর মধ্যে ছোটলুর নেতৃত্বে আরও ৭-৮ জন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে ছোটলু ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ডা. হারুনকে চেয়ার থেকে নামিয়ে আনতে হাবিবুল্লাহকে নির্দেশ দেন ছোটলু। হাবিবুল্লাহ তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে নামিয়ে আনতে যান।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আ ন ম বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে আমি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যাই। এ সময় বিএনপি নেতা ছোটলুর নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দুজন তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে আনতে যান। পরে তত্ত্বাবধায়ক আত্মরক্ষার্থে একজনের কলার চেপে ধরেন। এ সময় ডা. হারুন ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা এগিয়ে এলে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা চলে যান।’
ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সম্প্রতি একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক বিএনপি নেতা ছোটলু সেই টেন্ডারের কয়েকটি গ্রুপে দরপত্র জমা দেন। সব কটি না পাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হন। পরবর্তী সময়ে তার উপস্থিতিতে লোকজন আমাকে চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে আসে। তখন আমিও সম্মান রক্ষার্থে সেই ছেলেটিকে আটকাতে চেষ্টা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’
এদিকে হাসপাতালের ঘটনার বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কল রিসিভ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে কী ঘটেছে না ঘটেছে, এখন বলা যাচ্ছে না।’ এ কথা বলেই ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।