খুলনার ময়ূর নদের ওপর নির্মাণাধীন গল্লামারী সেতুর কাজ ২০২৫ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এখানে পুরোনো দুটি সেতু ভেঙে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন চার লেনের সেতু নির্মাণ করা হবে। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুরোনো একটি সেতু ভেঙে শুধুমাত্র নদের দুই পাড়ে কংক্রিটের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এখনো এই অংশে স্টিলের সেতুর স্ট্রাকচার স্থাপন, পুরোনো আরেকটি সেতু ভেঙে সেখানেও স্টিলের স্ট্রাকচার বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ওই পথে চলাচলকারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে রাস্তাজুড়ে নির্মাণসামগ্রী রাখা, অস্থায়ী কাঁচাবাজার-স্থাপনা ও সেতুর দুই পাশের ফেন্সিং ডিভাইডারের কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। ফলে ব্যস্ততম শহরের এই প্রবেশদ্বারে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট।
যানজটের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসার জন্য শহরে আসা রোগীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র হয় যে, কয়েক মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
এ অবস্থায় সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের প্রতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, সেতুর নির্মাণ কাজ স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। আগামী জানুয়ারির পর যানচলাচল শুরু হবে।
জানা গেছে, যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ আমলে ময়ূর নদের ওপর নির্মিত পুরোনো সেতুর পাশে ২০১৬ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পানির স্তরলাগোয়া সেতুটিতে মারাত্মক নকশা ত্রুটি ধরা পড়ে। অন্যদিকে শহরের অংশে যানজট আরও তীব্র হলে সড়ক বিভাগ পুরোনো এই দুই সেতু ভেঙে সেখানে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের দৃষ্টিনন্দন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ২০২৩ সালের নভেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে।
কিন্তু মাঝপথে নির্মাণ কাজ থমকে যাওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে বলে দাবি করেন নাগরিক নেতারা।
‘খুলনা নাগরিক সমাজ’র সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘এখানে আগের একটি সেতু নির্মাণে নকশা ত্রুটিতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। ফলে মাত্র ৩/৪ বছরের ব্যবধানে সেতুটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। ওই সেতুটি নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহি ও আইনের আওতায় আনতে হবে।’
অন্যদিকে নির্মাণাধীন সেতুর কাজের অগ্রগতি ও যানজট নিরসন সংক্রান্ত এক সভায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সাধারণ লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কারণে সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।’
ভুক্তভোগীরা গল্লামারী সেতুর দুই পাশের ফেন্সিং ও ডিভাইডার অপসারণ করে সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধি, সেতুতে ওঠা-নামার সংযোগ সড়কে রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, অস্থায়ী কাঁচাবাজার-স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা শহরে ইজিবাইকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, এগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা প্রয়োজন। এ ছাড়া গল্লামারী সেতুর উপর দিয়ে পরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে ভিন্ন রুট ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সেতুর দুই পাশের কমপক্ষে ৫০ মিটারের মধ্যে যানবাহন পার্কিং করা থেকে বিরত রাখতে ট্রাফিক বিভাগের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘নির্মাণকাজ আসলে থেমে যায়নি। পুরোনো একটি সেতু ভেঙে ওই অংশে নদের দুই পাশে কংক্রিটের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন সেখানে স্টিলের তৈরি সেতুর স্ট্রাকচার এনে বসানো হবে। সেতুর স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজও চলছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে ওই অংশে সেতুর স্ট্রাকচার বসানো হলে সেখানে যান চলাচল শুরু হবে। এরপর পাশে থাকা অন্য সেতুটি ভেঙে সেখানে স্টিলের সেতুর আরেকটি স্ট্রাকচার বসানো হবে।’
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশা করছি।