প্রায় ৭ বছর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা ও আমিলাইষ ইউনিয়নের হিলমিলি অংশে ডলু নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় গাটিয়াডেঙ্গা সেতু। স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে ২০১৭ সালে সড়ক বিভাগ প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখনো নির্মাণ হয়নি সেটির সংযোগ সড়ক। এ কারণে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না। সেতুতে তাদের উঠতে হয় সিঁড়ি দিয়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে, সড়ক বিভাগ সেতুটি নির্মাণ করেছে। এ জন্য তারাই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করবে। অন্যদিকে সড়ক বিভাগ বলছে, সেতুর পাশে যে সড়ক আছে সেটি এলজিইডির। সেখানে সড়ক বিভাগের কোনো জায়গা নেই। সেজন্য এলজিইডি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা, কাঞ্চনা, আমিলাইষ, এওচিয়া ও পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্থানীয়দের দৈনন্দিন কাজ ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের জন্য ডলু নদী পার হওয়ার একমাত্র রাস্তা ছিল নির্মিত সেতুটির জায়গা। নৌকাই ছিল সেই এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন। শুষ্ক মৌসুমে নৌকায় পারাপারে তেমন ঝুঁকি না থাকলেও বর্ষায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো স্থানীয়দের। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মরহুম মো. নুরুল ইসলাম ও সাবেক আমিলাইষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোলাইমান তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে তদবির করে বেইলি ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আনেন।
পরে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী মনোনীত চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বেইলি ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দুটি সম্পূর্ণ ও দুটি অসম্পূর্ণ ৪টি পিলার নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ব্রিজের কাজ। পিলারগুলো পরে পানির স্রোতে প্রায় ক্ষয়ে যায়। একপর্যায়ে ঢালাই সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হলে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী সেতুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চন্দনাইশ উপজেলার কাজলি-কাশেম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালের শেষের দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ করে।
সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলেও শুধু সংযোগ সড়কের অভাবে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। সেতুটি নির্মাণের পর জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও সফল হননি। এভাবেই পার হয়েছে প্রায় ৭ বছর।
আমিলাইষ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক বিভাগ বলছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সংযোগ সড়ক করবে। এটা তাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের দরকার সংযোগ সড়ক। সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে স্থানীয়দের দুঃখ অনেকটা লাঘব হবে।’
একই এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ‘সেতু নির্মাণ হওয়ার আগে আমাদের জমিতে উৎপাদিত শাক-সবজি নৌকাযোগে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। আর এখন সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠে হেঁটে সেগুলো বাজারে নিয়ে যেতে হয়। সংযোগ সড়কের অভাবে গাড়ি চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। সেতুটি নির্মিত হওয়ার পরেও আমাদের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে।’
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে বলেন, ‘সড়ক বিভাগ সেতুটি নির্মাণ করেছে। এ কারণে সংযোগ সড়ক তারাই নির্মাণ করবে। এখানে এলজিইডির কিছুই করার নেই। সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি সম্পূর্ণ সড়ক বিভাগের আওতাধীন।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে সড়ক বিভাগ সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছে। তবে জায়গা-সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা থাকায় এখনো সেটি করা সম্ভব হয়নি। সেতুর পাশে যে সড়ক আছে, সেটি এলজিইডির। সেখানে সড়ক বিভাগের কোনো জায়গা নেই। সড়ক বিভাগের জায়গা না থাকায় আমরা কিছু করতে পারছি না। জায়গা অধিগ্রহণের কোনো পরিকল্পনাও সড়ক বিভাগের নেই। তাই এলজিইডি সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করবে।’