সূর্য যত পশ্চিমে হেলে যেতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রদীপ জ্বালিয়ে উন্মুক্ত ময়দানে সারিবদ্ধভাবে বসে যান সবাই। চলে মন্ত্রোচ্চারণ। তারপর সবার কল্যাণ কামনা করে প্রার্থনা করেন পুণ্যার্থীরা। এমন প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারে রাখের উপবাস অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে জেলার সৈয়ারপুরে লোকনাথ সেবাশ্রমে সনাতন ধর্মগুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর হাজারও অনুসারী ও ভক্তরা আরাধনায় নিমগ্ন থেকে এই রাখের উপবাস পালন করেন।
এ সময় মন্দিরের আঙিনায় প্রত্যেক ভক্তের বসার জন্য নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া হয়, যাতে আগত পুণ্যার্থীরা শৃঙ্খলার সঙ্গে মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব, দুধ, ফুল, ধান-দূর্বা, ধূপদানি ও কলাগাছের খোল নিয়ে বসতে পারেন।
আয়োজকরা জানান, দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রার্থনার প্রস্তুতি এবং পুণ্যার্থীদের আগমন। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের ঘণ্টা বেজে উঠলে উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে সবাই প্রদীপ জ্বালাতে শুরু করেন।
এ সময় বাজনা, উলুধ্বনি, ধূপের ধোঁয়া সব মিলিয়ে আশ্রমে পৌরাণিক মহাজাগতিক অবস্থা বিরাজ করে। পরে ভক্তরা জ্বলন্ত প্রদীপ ও ধূপদানি মনু নদের জলে বিসর্জন করেন। প্রদীপ বিসর্জন শেষ হলে সারাদিনের উপবাস ভাঙার মধ্য দিয়ে শেষ হয় সব আনুষ্ঠানিকতা।
ব্রত উদযাপনে আসা পুণ্যার্থী সুস্মিতা রায় বলেন, উপবাস থেকে ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যার পূর্বেই ধূপ-প্রদীপ নিয়ে বসতে হয়। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে সংযম, মনোব্রতের মাধ্যমে একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ জ্বলা শেষ হলে মন্দির থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে পুণ্যার্থীরা উপবাস ভাঙেন।
আয়োজক সুব্রত সরকার রাজ বলেন, ২০০২ সাল থেকে মৌলভীবাজারের এই আশ্রমে শুরু হয় রাখের উপবাস। বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে সনাতন ধর্মগুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অনুসারী ও ভক্তরা এই ব্রত পালন করেন। ১৫ কার্তিকের পর বাকি সময় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ ব্রত পালন করা হয়।
লোকনাথ সেবাশ্রমের পুরোহিত রিংকু ভট্টাচার্য জানান, কোথাও কোথাও এ উৎসবের নাম রাখের উপবাস, কার্তিক ব্রত, গোসাইর উপবাস কিংবা ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বালনের উৎসবও বলে।
লোকনাথ সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায় বলেন, রাখের উপবাস উপলক্ষে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমাগম হয়েছে লোকনাথ সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে। এবার প্রায় দুই শ পুণ্যার্থী ব্রত পালন করেছেন। অনুষ্ঠান সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে।
পুলক পুরকায়স্থ/মেহেদী/অমিয়/