বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ভেঙে ডিন নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে। আইন অনুযায়ী, বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সাদেকুর রহমানের ডিনের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়টি আমলে না নিয়ে অন্য বিভাগের কনিষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্ব দেন। পরে সেটি স্থগিত করে অন্য আরেকজন কনিষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্ব দেন উপাচার্য।
জানা যায়, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রথমে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে ওই নোটিশ বাতিল বলে প্রকাশ করে একই দিনে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইসরাত জাহানকে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর ডিনদের সঙ্গে মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী রেজিস্টারের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও উপাচার্য তাকে মিটিংয়ে রাখেননি। ডিনদের মিটিংয়ে সাবেক ডিনদের উপস্থিতির প্রয়োজন না থাকলেও উপাচার্য শুচিতা শরমিন সাবেক কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন ড. মো. মহসিন উদ্দীনকে উপস্থিত রাখেন। সেখানে অধিকাংশ ডিন সাদেকুর রহমানের কথা জানালেও মহসিন উদ্দীন জ্যোতির্ময় বিশ্বাসকে সেই পদে সমর্থন দেন। উপাচার্য সেই অনুযায়ী জ্যোতির্ময়কে প্রথমে অনুমোদন দেন। পরে বিভাগ অনুযায়ী তালিকা করলে জ্যোতির্ময় বিশ্বাস সেই দায়িত্ব পাননি। সেক্ষেত্রে ইসরাত জাহান দায়িত্ব পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২২ (৫) ধারা অনুসারে কোনো অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালনে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে দুই বছর মেয়াদি ডিন নিযুক্ত হবেন। আরও শর্ত থাকে যে, কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করে থাকলে ওই বিভাগের পরবর্তী অধ্যাপকরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন পদে নিযুক্তের সুযোগ পাবেন। সেই অনুসারে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সাদেকুর রহমানকে ডিনের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। তবে আইন ভেঙে পরবর্তী লোকপ্রশাসন বিভাগের ইসরাত জাহানকে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিন নিয়োগে প্রথমে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকে ডেকে যোগদান করানোর দেড় ঘণ্টা পর সেটা বাতিল করা হয়। এটা ঠিক না। শিক্ষক সমাজে তার সম্মান আছে। নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে না দেখে তাকে এভাবে অপমান করা প্রশাসনের উচিত হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানের আগে হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকায় পদত্যাগ করা ব্যক্তিকে কীভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়?’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ডিন খবরের কাগজের প্রতিবেদকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা মানা হয়নি। এ বিষয়ে উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন, তিনি কীভাবে নিয়োগ দিলেন।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আদেশটি ভুল হওয়ায় বাতিল করেছি। উপাচার্যের নির্দেশে সিনিয়রিটি হিসেবে যিনি পান, তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তবে রেজিস্ট্রার স্বীকার করেন, বিগত সময়ে উপাচার্যরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করেছেন। বর্তমান উপাচার্য তা করেননি। আসলে উপাচার্য স্যাররা তো সবকিছু চাইলে পারেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা মানবিক অনুষদের সাবেক ডিন মহসিন উদ্দীন বলেন, ‘উপাচার্য আমাকে ডিনদের একটি মিটিংয়ে ডাকেন। আমাকে ডেকেছিলেন। আমি আমার মতামত দিয়েছি। আমার সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছু বলেছে। সেটা তো মুখ চেপে ধরতে পারব না।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘আমি নিয়মে থাকার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আমি পড়েছি। যে নিয়মটা লেখা আছে সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও আমি আইন অনুযায়ী কাজ করে যাব।’