ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ত্রিশ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ইজিবাইক কুমিল্লা নগরে চলাচল করে। লাইসেন্সবিহীন তিন চাকার এসব যানের কারণে নগরে যানজটের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত এসব যান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খায় পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমন্বিত পরিকল্পনা না করলে তিন চাকার এসব যান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে ১০ হাজার ৫৩০টি প্যাডেলচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয় নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্যাডেলচালিত রিকশা বিলুপ্ত হয়ে এখন কুমিল্লা নগরীর রাস্তায় চলছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। অবৈধ এসব যানের লাইসেন্স নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় যে যেভাবে পাড়ছেন রাস্তায় রিকশা নামাচ্ছেন।
বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল করে। ১০ হাজার রিকশার ধারণক্ষমতার কুমিল্লা নগরীর রাস্তায় এখন অতিরিক্ত আরও ৩০ হাজার ব্যাটারিচালিত যান চলাচল করছে। এতে যানজটের কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ও রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অটোরিকশা কিংবা ইজিবাইকের কোনো বৈধ লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। তবে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে একাধিকবার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বারবার ভেস্তে যায়। শুধু অটোরিকশার কারণে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।
অন্যদিকে ছয় সিটের অটোরিকশা-ইজিবাইক আটকে জরিমানা করাকে ‘অমানবিক’ উল্লেখ করে লাইসেন্সের দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। তারা জানান, জরিমানার জন্য যে টাকা আদায় করা হয় তা পুরোটাই বহন করতে হয় চালকদের। একবার পুলিশের হাতে অটোরিকশা আটকে গেলে তা ছাড়িয়ে আনতে যে অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়; তা তাদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে খুবই কষ্টকর। সব মিলিয়ে ‘অটোরিকশার নগরী’তে পরিণত হওয়া কুমিল্লার সড়কে বিশৃঙ্খলার চিত্র এখন নিত্যদিনের।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ৪০ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা-ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। যা কুমিল্লা নগরীর সড়কের ধারণক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত। এসব যানবাহন বিভিন্ন গ্যারেজ থেকে পরিচালিত হয়। লাইসেন্স না থাকায় ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন সময় এগুলোকে আটক করা হয়। তবে জরিমানা ও আটক করেও এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার জানান, অবৈধ অটোরিকশা বৈধ করার কোনো সুযোগ নেই। একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার আগে এগুলোর বিকল্প ভাবতে হবে। কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসন নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। এসব নিয়ে একটি পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, নিবন্ধিত প্যাডেলচালিত রিকশার জন্য বছরে ১৩০ টাকা করে আদায় করা হতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ১০ হাজার ৫৩০টি লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। তবে এখন আর পায়েচালিত রিকশা নেই। এ কারণে টু-সিটার ইজিবাইকের লাইসেন্সের সার্ভে করা হয়েছিল। ১০ হাজার ফরম বিক্রি করা হয়েছে। ৯ হাজার চারটি জমা পড়েছে। এসব ইজিবাইকের জন্য বছরে পাঁচ হাজার টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সবকিছুই পরিকল্পনা করে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অটোরিকশা-ইজিবাইকগুলো লাইসেন্স ছাড়াই নগরীর রাস্তায় চলাচল করছে।
টোকেন কিংবা রশিদ দিয়ে এসব যানবাহন চালানোর বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কোনো রশিদ কিংবা টোকেন দিয়ে যানবাহন পরিচালনা করি না। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নামে এতদিন এসব অটোরিকশা-ইজিবাইকের টোকেন-বাণিজ্য চলে আসছিল। এটা সবাই জানে। এসব এখন বন্ধ করে নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।’
জেলা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাফি জানান, অবৈধ অটোরিকশাগুলোকে বিভিন্ন সময় আটক করার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়। এসব জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়। সমন্বিত পরিকল্পনা না করলে এসব অটোরিকশা-ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।