খুলনার শহিদ হাদিস পার্কের খোলা মাঠে বড় বড় অনেকগুলো বোর্ডে সাজানো ছিল নগরীর জলাবদ্ধতার ভোগান্তির চিত্র। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতার সময়কার ছবি ও গল্প এ বোর্ডগুলোতে জায়গা পেয়েছে।
এখানে রয়েছে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে থাকা ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভোগান্তির চিত্র। এ ছাড়া নিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় কবরস্থানে দুই-তিন দিন পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকা সারি সারি কবরগুলোর ছবি দর্শনার্থীদের অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে। ছবিতে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি, ময়লা-আবর্জনায় পানি নিষ্কাশন আটকে থাকার চিত্রও উঠে এসেছে। গল্পে গল্পে বলা হয়েছে জলাবদ্ধতার শিকার মানুষের ভোগান্তির কথা।
খুলনা শহরের জলাবদ্ধতার বাস্তবতা নিয়ে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী গত রবিবার শুরু হয়, শেষ হয় গতকাল মঙ্গলবার। আয়োজকরা জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যক্তি সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আমাদের উদাসীন আচরণকে পরিবর্তন করতে হবে। টেকসই নগর উন্নয়নে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এখনো খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় আছে।
আমরা যদি পরিকল্পনায় আর কোনো ভুল না করি, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না থাকে, সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করি তা হলে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ইউএসএআইডির অর্থায়নে, জেএসআই, রিসার্চ অ্যান্ড টেনিং ইনস্টিটিউট, ব্র্যাক বাংলাদেশের সহযোগিতায় খুলনা সিটি করপোরেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জানা গেছে, খুলনা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে সিটি করপোরেশন প্রায় ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করলেও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির সুফল মিলছে না। উপরন্তু, বিভিন্ন স্থানে ধীরগতির উন্নয়ন কাজ, খোঁড়াখুঁড়ি ও অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা উঁচু করায় শহরের কয়েক হাজার বাড়িঘর রাস্তার তুলনায় নিচে চলে গেছে। এতে বৃষ্টি হলেই ড্রেনের নোংরা পানি ওইসব বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। তখন নগরবাসীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
নাগরিক সংগঠন ‘খুলনা নাগরিক সমাজ’-এর সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই ডোবে খুলনা নগরী। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সারা বছর ধরেই সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। নগরজুড়ে ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হলেও জলাবদ্ধতার পুরানো ভোগান্তি রয়েই গেছে।’
এশিয়া রেজিলেন্ট সিটির প্রকল্প প্রধান ফারহানা আফরোজ বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্যই আলোকচিত্র ও ফটোভয়েস প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে ওই এলাকার জলাবদ্ধতার ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। কোথায় কোন সংকটের কারণে জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে শহরের জলাবদ্ধতার ছবি ফুটে উঠেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এদিকে কেসিসি কর্মকর্তারা বলছেন, রূপসা ও ভৈরব নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় শহরের পানি নামতে পারে না। ফলে জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীন উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়। কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পিত শহর গড়তে হলে নাগরিকদের সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
এদিকে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খুলনা সিটি করপোরশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ শরীফ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে খুলনা শহরের দৃশ্যমান জলাবদ্ধতার ছবি ফুটে উঠেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’