অবশেষে আদালতের নির্দেশে ও মানবিক বিবেচনায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন গোপালগঞ্জের আলোচিত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চার শিশুর বাবা জামাল মিয়া। তার চার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে গোপালগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফিরোজ মামুন এই জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর সন্ধ্যায় জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান জামাল।
এর আগে লিগ্যাল এইডের কৌঁসুলি আইনজীবী শারমিন জাহান জামাল মিয়ার জামিনের আবেদন করেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশনামতো জামালের চার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিকেলে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর আক্তার জামাল মিয়ার বাড়িতে যান। এ সময় পরিবারের সদস্যদের হাতে বিভিন্ন উপকরণ তুলে দেন ও জামালের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন।
এর আগে যমজ দুই কন্যাশিশুর জন্মের এক সপ্তাহের মাথায় মায়ের মৃত্যু হয়। তার কয়েক দিন পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান বাবা জামাল। এমন পরিস্থিতিতে যমজ দুই নবজাতক বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে ১৩ বছর বয়সী সাজ্জাদ চরম বিপাকে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদ আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। পরে স্বপ্রণোদিত হয়ে সেই শিশুদের দেখভালে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সমাজসেবা কার্যালয়কে নির্দেশ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চান ও স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবং সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই শিশুদের খাওয়া-দাওয়া ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আদেশ দেন।
এ বিষয়ে লিগ্যাল এইডের কৌঁসুলি শারমিন জাহান বলেন, ‘আমরা মানবিক বিষয়গুলো আদালতের সামনে তুলে ধরি। পরে আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফিরোজ মামুন মানবিক কারণে আসামি জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় জামাল মিয়া জেল থেকে মুক্তি পান।’
কোটালীপাড়ার ইউএনও শাহিনুর আক্তার জানান, ওই শিশুদের পরিবারের খোঁজখবর ও নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় খাদ্য ও শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। শিশুদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত খোজঁখবর রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এক মাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর সাত দিন পর তার মৃত্যু হয়। এরপর চার সন্তানের লালনপালন করছিলেন জামাল মিয়া। তার বড় ছেলে সাজ্জাদ সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদার হত্যা মামলায় গত ৮ নভেম্বর রাতে জামালকে ধরে নিয়ে যায় কোটালীপাড়া থানা-পুলিশ। পরে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয় জামালকে।