
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুরে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত সাধুসঙ্গ ‘তৌহিদী জনতার’ হুমকি আর প্রশাসনের ‘নিষেধে’ পণ্ড হয়েছে। গ্রামটিতে গত কয়েক বছরের মতো এবারও ফকির লালন শাহের ভক্তদের মহতী সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।
মেলার আয়োজকরা জানান, সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা হবে না, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ এসে তা জানানোর পর গত শুক্রবার সকালে ত্রিপল খুলে ফেলা হয়। এরপর দূর-দূরান্ত থেকে আসা লালনভক্তরা ফিরে গেছেন, যারা ছিলেন তারা গতকাল শনিবার সকালে চলে গেছেন। এখানে কারও জড়ো হওয়া ও গানবাজনা নিয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন যেন না হয় সে জন্য পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।
সীমিত পরিসরে আয়োজন করতে চাইলেও প্রশাসনিক চাপে তা পারেননি বলে জানান আয়োজক ফকির শাহ জালাল। তিনি বলেন, ‘ডিসি সাহেব ও এসপি সাহেবের কাছে অনেকবার গিয়েও মেলা করার অনুমতি পাইনি। গত শুক্রবার তারা একটা মাইকও লাগাতে দেননি। থানা থেকে পুলিশ এসে মেলা প্রাঙ্গণে বসেছিল। শনিবার সকালে কয়েকজন এসে বেশি বাড়াবাড়ি করলে সবকিছু পুড়িয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে যান। অতিথিদের জন্য রান্নার আয়োজন করেছিলাম। তাদের খাওয়াতেও পারলাম না; নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এর আগে, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে গত শুক্রবার লালন মেলাকে ‘ঈমান বিধ্বংসী’ উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবিতে ‘কাশীপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা’-এর ব্যানারে গ্রামটিতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে তারা মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে স্থানীয় একটি ঈদগাহে জড়ো হন।
লালন মেলার আয়োজনে কেন বাধা দেওয়া হলো জানতে চাইলে আবদুল আওয়াল বলেন, ‘এলাকার মুসল্লিরা চান না এখানে মেলা, নাচ-গান হোক। তাই বাঁধা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে লালন মেলার অনুমতি বাতিল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ‘অপারগতা’ প্রকাশের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘কুষ্টিয়ার লালন ভক্তদের নাজেহাল করে বের করে দেওয়া হয়েছে। লালন মেলা বন্ধ করার জন্য যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হুংকার দিয়েছে, প্রশাসন সেটাতে আপসরফা করেছে। আমরা প্রশাসনের এমন অবস্থানের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘আয়োজকরা লালন মেলার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। অন্যদিকে লালন মেলা বন্ধে মুসল্লিদের একটি দল স্মারকলিপি দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় লালন মেলার আয়োজন করতে নিষেধ করা হয়েছে।’ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে লালন ভক্তরা এখানে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। যেহেতু দুপক্ষ দুই রকম দাবি জানিয়েছেন, তাই এবার মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’