সুরমা নদী পেরিয়েই যাতায়াত। বর্ষায় নৌকায় পারপার হওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
ওই সময় সুরমা নদীতে নৌকা চলাচলের উপযোগী পানি থাকে না। কারণ সুরমা ও লোভাছড়া নদীর মাঝখানে অনেকটা দ্বীপের মতো অবস্থান এই ইউনিয়নের। তাই বর্ষার সময় ইজারাঘাটে ভাড়া পরিশোধ করে খেয়ানৌকা দিয়ে পারাপার হলেও শুকনো মৌসুম এলেই বাঁশের সাঁকোই ছিল তাদের ভরসা। এ বাঁশের সাঁকো পার হতে টাকা দেওয়া লাগত।
তবে এ ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামের হাজারও মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবার খেয়া ঘাটের ইজারাদার বাঁশের পরিবর্তে কাঠ দিয়ে নির্মাণ করেছেন প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। নৌকা দিয়ে যেভাবে টাকার বিনিময়ে নদী পার হওয়া লাগত, ঠিক একই ভাবে এ কাঠের সেতু দিয়ে নদী পারাপার হতেও ভাড়া দিতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের উত্তরপাশে জকিগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কানাইঘাট উপজেলা এবং দক্ষিণ ও পূর্বপাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। এ ইউনিয়নে ৩২টি গ্রাম আছে। এর মধ্যে প্রায় ১০টি গ্রামের বাসিন্দাদের জেলা শহরে যাতায়াত করা ও নিত্যদিনের কাজের জন্য সুরমা নদী পাড় হয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকা দিয়ে যেতে হয়।
সুরমা নদীর এ অংশের ঘাটের ইজারা দেওয়া হয় প্রতিবছর। বর্ষার সময় ইজারাদাররা নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে নেন। শুষ্ক মৌসুমে নদীর ওপর তারা বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেন। এই বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপারেও জনপ্রতি ৫ টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হয়।
গত বছর জুন মাসে আলী আহমদ এ নৌকা ঘাটের ইজারা পান। তিনিও এই নিয়মে ঘাট পরিচালনা করছেন। তবে এবার তিনি জনগণের সুবিধার্থে বাঁশের বদলে অস্থায়ী কাঠের সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। বর্তমানে এ গ্রামের হাজারও মানুষ প্রতিদিন এই কাঠের সেতু ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ শেষ করেন। সুরমা নদীর এ অংশে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে ১০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। এ ছাড়াও এতে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
লক্ষ্মীপ্রাসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দা সুহেল মিয়া বলেন, ‘জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের এ সংযোগস্থলে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমবে। প্রতিদিন হাজারও মানুষের যাতায়াত এই সুরমা নদীর ওপর দিয়ে। বর্ষায় ঘাটের ইজারাদার নৌকা রাখে আর শীতকালে বাঁশের সাকো বানিয়ে দেয়। যে কোনোভাবে পারপার হতে টাকা দেওয়া লাগে। প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী সুরমা নদীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। পাশাপাশি বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষতো আছেই। বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কাঠের সেতু করায় এখন যাতায়াতে অনেক সুবিধা হচ্ছে।’
সুরমা নদীর ঘাটের ইজারাদার আলী আহমদ বলেন, এখানে বর্ষায় মানুষজনকে নৌকা দিয়ে পারাপার করি। আর পানি কমে গেলে প্রতিবছর আমরা বাঁশের সাঁকো তৈরি করি দিই। কিন্তু এই বাঁশের সাঁকোতে অনেকে ভয় পান, দুর্ঘটনাও ঘটে। তাই এ বছর শুকনো মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে কাঠ দিয়ে সেতু তৈরি করে দিয়েছি। এতে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় চার মাস এই কাঠের সেতু দিয়ে মানুষজন চলাচল করবে। এবার কাঠের সেতু করাতে সবাই অনেক খুশি।’