চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তারই স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত। ফলে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, এইমাত্র বাবুল আক্তার সাহেব কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে গ্রহণ করেছেন।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত তার জামিন বহাল রাখেন। এর আগে ২৭ নভেম্বর তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে তার জামিন স্থগিত করতে লিভ টু আপিল করেন শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
বুধবার আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।
গত ২৭ নভেম্বর স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। কিন্তু ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাননি। ওইদিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা ও ভাই কারা ফটক থেকে ফিরে যায়।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, আইনগতভাবে সেদিন বাবুল আক্তারকে মুক্তি দিতে কোনো বাধা ছিল না। বাদীর আইনজীবী যেই অ্যাডভোকেট সনদের আলোকে জামিন স্থগিত চেয়েছিলেন সেটি আদালত খারিজ করে দেন এবং মুক্তির আদেশ দেন। কিন্তু কারাগার কর্তৃপক্ষ তার মুক্তি না দিয়ে আটকে রাখে। এতে তারা আদালত অবমাননা করেছেন, আমরা এ ঘটনায় মামলা করব। ইতোমধ্যে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালে সিনিয়র জেল সুপার সেটি গ্রহণ না করে ফেরত পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবুল আক্তারের আদেশ দেন। সেদিনও আদালতে বাবুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
ওইদিন আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাবুল আক্তার তিন বছর ৭ মাস ধরে কারাগারে আছেন। এই বিবেচনায় আদালত তাকে ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন বাবুল প্রথমে বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু পরে এই ঘটনায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা পায় পিবিআই। ফলে তাকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন বাবুলের শ্বশুর। সেই মামলায় বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
বাবুল আক্তারের সঙ্গে অভিযোগপত্রভুক্ত অপর ছয় আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। তাদের মধ্যে বাবুল, ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার কারাগারে আছেন। এহতেশামুল জামিনে, কামরুল শিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু শুরু থেকে পলাতক।
অপরদিকে বহুল আলোচিত এই মামলা নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদারও বিতর্কিত হন এ মামলার নাটকীয় ভূমিকার কারণে। তাছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া এ সংক্রান্ত ভিডিও নিয়ে তুমুল আলোচনা হয় মামলাটির ব্যাপারে। মামলাটির বেশ কয়েকজন সাক্ষী আদালত ও বিবাদীর আইনজীবীকে জানিয়েছে তারা বাধ্য হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর এ মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলা গণমাধ্যমে বলেন, মিতু হত্যা ও বাবুল আক্তারের মামলা ছিল পুলিশ কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এটি বনজ কুমার মজুমদার পরিচালিত নাটক। এসময় তিনি তাকে পুলিশ হেফাজতে সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
মনির/মাহফুজ/এমএ/