
উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তর থেকে ধেয়ে আসা ঠাণ্ডা হাওয়ার প্রভাবে রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে ভোরে ও রাতে শীতের কারণে মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
এদিকে জেলার রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে গেছে। বিশেষ করে কৃষক ও দিনমজুরদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার ধানচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধান কাটার মৌসুম চলছে। কিন্তু ভোরে শীতের কারণে মাঠে নামা যাচ্ছে না। সকালে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। ফলে সময়মতো কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।’
শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শহরের স্টেশন রোড এলাকার চা-বিক্রেতা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শীতের কারণে বিক্রিও কমে গেছে। লোকজন একটু কম বাইরে বের হচ্ছে।’
অন্যদিকে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাহীন জানান, শীতের শুরুতেই হাসপাতালে সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় শয্যা ও ওষুধের সংকট দেখা দিচ্ছে।
দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে শীতবস্ত্রের অভাবে মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে শীতবস্ত্র বিতরণের। জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, ‘শীতার্তদের সহায়তায় আমরা কম্বল বিতরণ শুরু করেছি। তবে চাহিদার তুলনায় সেটা যথেষ্ট নয়।’ স্থানীয় সংগঠনগুলো শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চালালেও সেটা সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শীতের প্রকোপ বেশি হলেও সহায়তা কম পাওয়া যাচ্ছে।’
এদিকে শীতের তীব্রতায় কৃষি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ধান, গম ও আলুর চাষে এর প্রভাব পড়ছে। শীতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস জানিয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েক দিনে শীত আরও বাড়তে পারে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘কৃষকদের শীত সহনশীল পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শস্য খেতে পানি সংরক্ষণ ও সেচের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। বর্তমানে এখানে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। আগামী কয়েক দিনে এটি আরও কমতে পারে। শীতের সক্রিয়তায় রাত ও সকালের তাপমাত্রা দ্রুত কমছে। বিশেষ করে হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস এবং কুয়াশার ঘনত্ব এ অবস্থাকে দীর্ঘায়িত করছে। মানুষকে শীত মোকাবিলায় সচেতন থাকার পাশাপাশি গরম পোশাক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।