মায়ানমারে আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের মধ্যে চলছে যুদ্ধ। চলমান যুদ্ধের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে মায়ানমার ওপারে বিমান হামলা ও বোমার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা। মায়ানমার মংডু শহরের হান্দা পাড়া এলাকায় জান্তা সরকারের শেষ ঘাঁটি সেটি দখলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল (নাখাখা) কেরাম নামে ক্যাম্পটি এবং সেটি আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে সীমান্তে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মায়ানমারে সংঘাতের কারণে টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মায়ানমার ওপারে কোনো ধরনের বোমা বা মর্টার শেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
মায়ানমারের মংডু শহরের বসবাসকারীরা বলেন, চলমান সংঘর্ষের কারণে মংডু শহরের পরিস্থিতি দিন দিন ব্যাপক আকারে ধারণ করেছে। মংডু শহরের ৮-১০টি জান্তা সরকারের ক্যাম্প রয়েছে। তার মধ্যে ৯টি ক্যাম্প দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। ৮ ডিসেম্বর জান্তা সরকারের সর্বশেষ মংডু শহরের হান্দা পাড়া ক্যাম্পটি দখল করে দিয়েছে আরাকান আর্মি। দখল করার পর থেকে মংডু শহরে কারফিউ জারি করেছে আরাকান আর্মি। গত কয়েকদিন ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের ইউনিয়নের লোকজন আতঙ্ক ও ভয়ে রাত দিন পার করছে। চলমান যুদ্ধের কারণে মংডু শহরের জোলা পাড়, হাদিবিল, সিকদার পাড়া, তিন মাইল এস এলাকায় জনশূন্য এবং এসব এলাকায় আরাকান আর্মি বসবাস করছে বলে জানা যায়।
টেকনাফ পৌরসভা চৌধুরি পাড়া এলাকার বাসিন্দার ইমাম শরীফ বলেন, আমরা সীমান্ত এলাকায় বসবাস করি এবং আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের মধ্যে চলছে যুদ্ধ। চলমান যুদ্ধের কারণে রাতে ঘুমাতে খুবই কষ্ট হত এবং আতঙ্কে দিন পারছি পরিবার নিয়ে। বিমান হামলা ও বোমার শব্দে কেঁপে উঠে বাড়িঘর।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সীমান্ত অপরাধ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবি। মায়ানমার রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় নাফ নদীতে টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। নাফ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং বাংলাদেশের জলসীমায় বিদ্যমান দ্বীপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নৌ টহল পরিচালনা করা হয়। সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বিজিবি ২৪ ঘণ্টা জলে ও স্থলে টহল পরিচালনা করা যাচ্ছে। এছাড়া সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়ও রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে সকল নৌকা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ধরার ট্রলারকে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে এবং সেন্টমার্টিনগামী কোনো ধরনের নৌযান অনুমোদন রেওয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় সকল নৌযান চালু করা হবে।
মো. শাহীন/মাহফুজ/এমএ/