ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল হাওয়া আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে। বিশেষ করে রাতের তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে শুক্রবার সকালে তুলনামূলক কম কুয়াশা থাকায় সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়েছে।
শীতের কারণে শ্রমজীবী মানুষের কাজের সময় কমে যাওয়ায় তাদের আয়-রোজগারেও প্রভাব পড়ছে। কৃষিকাজেও দেখা দিয়েছে বাধা। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, সকালে ঘন কুয়াশা থাকায় ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
রিকশাচালক আব্দুল মজিদ বলেন, শীতের কারণে ভোরে কাজ শুরু করতে পারি না। রাস্তায় যাত্রীও কম। দিনে আয় অনেক কমে গেছে।
শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশু ও বয়স্করা। জেলার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শীতজনিত রোগ যেমন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমরা এখনো শীতবস্ত্র পাইনি। ছোট ছোট বাচ্চারা ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। সরকারের আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। মানবাধিকার সংগঠন ‘উদ্যম’ এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। তবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’
ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ প্রতিবছরই বেশি থাকে। এবারের শীত শুরু থেকেই তীব্র রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নবীন হাসান/সাদিয়া নাহার/