প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন পবিত্র কাবা শরিফের সাবেক ইমাম ও সিনিয়র মুহাদ্দিস, মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা বোর্ডের ফকিহ ড. শায়েখ হাসান বিন আবদুল হামিদ বুখারি।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর দারুল উলুম মহিউচ্ছুন্নাহ মাদরাসায় আয়োজিত ১০ম আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে জুমার নামাজের ইমামতি করেন তিনি।
কাবার সাবেক এ ইমামের পেছনে নামাজ আদায়ের জন্য এদিন সকাল থেকে রঘুনাথপুর এলাকায় মুসল্লিদের ঢল নামে। দূর-দূরান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষ সম্মেলনস্থলে এসে সমবেত হন।
ড. হাসান বুখারি জুমার খুতবায় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা, মুসলিম বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য দোয়া মোনাজাত করেন। খুতবায় মানবজীবনের পবিত্রতা ও শান্তি প্রচারের কথাও বলেন পবিত্র কাবা শরিফের সাবেক এ ইমাম।
ফেনী সদরের ধর্মপুর এলাকা থেকে জুমার নামাজে অংশ নিতে আসেন সোলাইমান বাদশা সাজু। তিনি বলেন, পবিত্র কাবার ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করতে অনেক দূর থেকে এসেছি। প্রথমবার এতো বড় আলেমকে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে। এ অনুভূতি অনেক আনন্দের।
পবিত্র কাবা শরিফের সাবেক ইমাম ড. শায়েখ হাসান বিন আবদুল হামিদ বুখারি। ছবি: খবরের কাগজ
মোহাম্মদ মামুন নামে আরেক মুসল্লি বলেন, প্রতিবছর এখানে অনেক বড় জামাতে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার পবিত্র কাবা শরিফের সাবেক ইমাম প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসার খবরে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসেছে। তাকে কাছ থেকে দেখেছি। নামাজে অংশ নিতে পেরে খুব আনন্দিত ও ভাগ্যবান মনে করছি।
সম্মেলনের আয়োজক মাওলানা সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে বিগত বছরে দেশ ও দেশের বাইরের বরেণ্য আলেমদের অংশগ্রহণে ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি এবারের আয়োজন করা হয়েছে। কাবা শরীফের সাবেক ইমাম শায়েখ ড. হাসান বুখারির উপস্থিতি এবারের আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। সবমিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ জুমার নামাজে অংশ নিয়েছেন।
এর আগে দুপুরে ড. হাসান বুখারি হেলিকপ্টারযোগে এসে রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামেন। নামাজ আদায় শেষে তিনি আবার ঢাকায় ফিরে যান।
নামাজ পড়তে আসা মানুষের জমায়েত। ছবি: খবরের কাগজ
ড. শায়েখ হাসান বিন আবদুল হামিদ বুখারি একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার, যিনি কাবা শরিফের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মজীবনে তিনি শুরুতে ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত মসজিদ আল হারামাইন শরিফের অভ্যন্তরীণ একাডেমি শিক্ষক ছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ছিলেন। এরপর তিনি ২০০৮ সাল, ২০১৫ সালে দুইবার উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানের নায়েবে মুহতামিম মুফতি আহমাদুল্লাহ কাসেমীর সভাপতিত্বে ইসলামী এ মহাসম্মেলনে সৌদি আরবের মক্কার হারাম শরীফের মুফতি শায়েখ মুহাম্মদ বিন মাতার আস-সেহলী, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের হাদীস ও ফিকহ বিভাগের শিক্ষা সচিব শায়েখ আফজাল কাইমুরী, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, শানে সাহাবা খতিব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি শামীম মজুমদার, মাওলানা আশেকে এলাহী, আন্তর্জাতিক কেরাত সংস্থা বাংলাদেশের মহাসচিব সাদ সাইফুল্লাহ মাদানী, মুফতি আব্দুল্লাহ আল সালেহী ও মাওলানা মেরাজুল হক বয়ান করেন।
তোফায়েল আহাম্মদ নিলয়/মাহফুজ