ঢাকা ৯ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

ফোরাম’র আয়োজনে আড়াই হাজার মানুষের ভোজ

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ পিএম
ফোরাম’র আয়োজনে আড়াই হাজার মানুষের ভোজ
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ফোরাম’র আয়োজনে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ। ছবি: খবরের কাগজ

নরসিংদীর মাধবদীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ফোরাম’র আয়োজনে বিনামূল্যে আড়াই হাজার মানুষের মাঝে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে মেঘনার তীরে এই আয়োজন করা হয়।

আয়োজকরা জানান, একঝাঁক তরুণ ও এখানকার প্রবাসীরা সম্পৃক্ত রয়েছেন এই আয়োজনে। কনকনে শীতেও গ্রামের মানুষ এই আয়োজনে মুগ্ধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার প্রস্তুত করছেন। দুপুরে দল দলে গ্রামের মানুষ প্যান্ডেলে এসে খাবার খাচ্ছেন সব বয়সের মানুষ।

খাবার খেতে আসা ব্যক্তিরা জানান, এতো সুন্দর আয়োজন এই প্রথম। এদের প্রশংসা করে শেষে করা যাবে না।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফোরামের সভাপতি শিল্পপতি মোহাম্মদ আল-আমিন রহমান জানান, দুই বছর আগে মানবিক কাজের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফোরামের পথ চলা শুরু হয়। এবার বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। এছাড়া গ্রামের হতদরিদ্রদের নানা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন ফোরামের লোকজন। ভালো কাজের অংশীদার হতে ফোরামের সঙ্গে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুক্ত রয়েছে।

ফোরাম আগামী রমজানে বরাবরের মতো রোজাদারদের পাশে থাকবে বলে জানান তিনি।

এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষানুরাগী ও ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে বথুয়াদী এলাকা একটি বৈচিত্র্যময় এলাকা। এই এলাকায় না এলে বোঝা যাবে না মেঘনা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। স্বেচ্ছাসেবীদের এই আয়োজন একটি মেগা ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। এ যেন গ্রামের মানুষের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের মিলনমেলা।’

এই কর্মসূচির সার্বিক তত্ত্ববধানে ছিলেন- ফোরমের সাধারণ সম্পাদক হাজী রোমান ও কোষাধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন মোল্লা, বথুয়াদী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. অহিদুল্লাহ প্রমুখ।

শাওন খন্দকার/সুমন/অমিয়

ধামরাইয়ে মায়ের অভিযোগে স্ত্রীসহ ছেলে গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ এএম
ধামরাইয়ে মায়ের অভিযোগে স্ত্রীসহ ছেলে গ্রেপ্তার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ঢাকার ধামরাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর ও পরিবারের লোকজনকে হত্যাসহ ভয়ভীতির ঘটনায় মায়ের দেওয়া অভিযোগে স্ত্রীসহ ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া ৪টি ধারালো ছ্যান জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারী)  বিকেলে উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের উত্তর দীঘলগ্রাম এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

এ ঘটনায় গ্রেফতার শরীফের মা শরিফন নেছা বাদি হয়ে এক স্কুলশিক্ষকসহ ১০ জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। শরীফ ওই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম নবীর সঙ্গে মিলে নিজের পরিবারের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার (৫৫), গোলাম নবী (৫৪), শরীফ (৩৫), মনোয়ারা (২৮), আব্দুর রউফ (৫৪), আসাদ (৩৩), আব্দুল মালেক (৫২), খোরশেদ আলম (৫৪), ছানোয়ার হোসেন (৩৮) ও আব্দুল কাদের (৬৫)।

পরে বুধবার (২২ জানুয়ারী) সকালে শরীফ ও তার স্ত্রী মনোয়ারাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, উপজেলার দীঘলগ্রাম গ্রামের শামসুল হক ও স্ত্রী শরিফুন নেছার সঙ্গে পারিবারিকভাবে ছেলে  শরীফ ও তার স্ত্রী মনোয়ারার বিরোধ চলে আসছিল। এরমধ্যে একই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম নবী শরীফ ও তার স্ত্রী মনোয়ারার পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বাবা শামসুল হক ও মা শরিফনসহ ভাই পুলিশ সদস্য রাজু হোসেনকে ভয়ভীতি ও ক্ষতি করার পায়তারা করছিল এমন অভিযোগও রয়েছে। দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম নবীর রয়েছে একটি সক্রিয় সন্ত্রাসি বাহিনী। 

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শরীফ ও স্ত্রী আনোয়ারা লোকজন নিয়ে শামসুল হকের বাড়ি জবরদখলের উদ্দেশ্যে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ি-ঘরে হামলা ও  ভাঙচুর করে। এ সময় কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। পরে জরুরী নাম্বার  ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪টি  ধারালো ছ্যান উদ্ধারসহ শরীফ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। 

স্থানীয়রা জানান, দেলোয়ার মাষ্টার, গোলাম নবী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করে চলেছে। অপরাধের একাধিক প্রমাণ থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাসপেন্ড হয়ে রয়েছে দির্ঘদিন ধরে। যখন যে দল আসে তাদের সঙ্গেই মিশে যায়। এলাকায় ঝগড়া বিবাদ, অন্যের জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মাদ্রাসার টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগও করেন এলাকাবাসী। 

এ বিষয়ে মামলার বাদি শরিফন নেসা বলেন, শরীফ আমার বড় ছেলে। সে আমাদের ভরণ পোষণ না করায় এবং মাঝে মধ্যেই আমাদের উপর নির্যাতন করে। তাই বাড়ির জায়গা ছোট ছেলেকে লিখে দেই। এর জের ধরে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসি দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার ও গোলাম নবীসহ প্রায় ২৫/৩০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। ছেলে শরীফ ও তার বউয়ের অত্যাচারে থানায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার ও গোলাম নবী একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের লোকজন সব সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে রাখে। আমার ছেলে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এমন কাজ করেছে। আমার ছোট ছেলের স্ত্রী পুলিশ সদস্য নাসরিন আক্তারের ওপরও হামলা চালায় দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার ও গোলাম নবীর লোকজন। নাসরিনের গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় এবং একটি মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে।

এ সময় বাদি শরিফন নেসার স্বামী শামসুল হক ঠিক তো কথা বলতে পারে না। শুধু ছেলে শরীফ ও দেলোয়ার হোসেন মাষ্টারের মারধরের কথা বলে কান্না করতে থাকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাউছার সুলতান জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৪টি ছ্যান উদ্ধারসহ শরীফ ও তার স্ত্রী মানোয়ারাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


মো. রুহুল আমিন/মেহেদী/ 

খবরের কাগজে সংবাদ প্রকাশ সেই কার্বন কারখানা বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩২ এএম
সেই কার্বন কারখানা বন্ধ ঘোষণা
পাবনার বেড়ার ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ কোং লি. কারখানায় অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছবি: খবরের কাগজ

পাবনার বেড়ার ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ কোং লি. নামে কার্বন কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদুল ইসলাম এ অভিযান চালান। এ সময় পরিবেশ দূষণের দায়ে কারখানাটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে কারখানায় কর্মরত সুপারভাইজার রাজিদুর রহমানকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয় বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে। এর আগে এ নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি ‘ফসলের ক্ষতি, বেড়ায় কার্বন কারখানার ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন’ শিরোনামে খবরের কাগজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

নির্বাহী অফিসার জানান, অবৈধভাবে কালি উৎপাদনের কারখানা তৈরি করে পরিবেশ দূষণ করছিল এ কারখানাটি। এ বিষয়ে গণমাধ্যম ও এনএসআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কারখানাটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারখানাটির কোনো কাগজপত্র না থাকায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অভিযানে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আ. মমিন ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চার বছর আগে আবাসিক এলাকার ৭ বিঘা ফসলি জমিতে ‘ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ কোং লি.’ একটি কারখানা করেন কাশিনাথপুর এলাকার আমিনুল ইসলাম। ওই কারখানায় বিশাল আকারের ২৪টি চুল্লিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে কালি তৈরি করা হয়। এ জন্য প্রতিটি চুল্লিতে ৭৫-৮০ মণ পাটকাঠি পুড়িয়ে তৈরি করা হয় কার্বন।

এতে প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ওই ধোঁয়া ও ছাইয়ে আক্রান্ত হয়ে এলাকাবাসী হাঁচি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। সম্প্রতি এলাকার বৃদ্ধ ও ছোট শিশুদের শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিচ্ছিল। এলাকার তিন ফসলি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

দেশজুড়ে কদর ভান্ডারি মুলার

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৭ এএম
দেশজুড়ে কদর ভান্ডারি মুলার
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ভান্ডারি মুলা হাতে এক কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিখ্যাত ‘ভান্ডারি মুলা’র জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। দেশজুড়ে রয়েছে এ মুলার চাহিদা। প্রতিটি মুলার ওজন হয় ৫ থেকে ১৪ কেজি পর্যন্ত। আকারে বিশাল এবং স্বাদে অসাধারণ। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ভান্ডারি মুলা’ নামে পরিচিত হলেও এর জাত আসলে জাপানের। 

ফটিকছড়িতে অবস্থিত মাইজভান্ডার দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ওরশ ১০ মাঘ (২৪ জানুয়ারি) উপলক্ষে আগত আশেকভক্ত জায়েরনি ও দর্শনার্থীদের কাছে এই মুলার চাহিদা অত্যন্ত বেশি। এ সময় স্থানীয় কৃষকরাও মুলা বিক্রির জন্য অপেক্ষা করেন। দরবারে আগত ভক্ত-অনুরক্তরা এ মুলা রোদে শুকিয়ে দীর্ঘদিন রেখে তবারুক হিসেবেও খান বলে প্রবাদ আছে। ফটিকছড়ির হালদার চরে জমে থাকা পলি-বালি মিশ্রিত জমিতে বিশাল আকারের এ মুলার উৎপাদন হয়। 

এদিকে এ কৃষি ফসল নিয়ে রীতিমতো শুরু হয়েছে গবেষণা। মুলা কেন এ বিশাল আকারের হয়? অন্য কোনো উপজেলায় হয় না কেন? দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর চাষাবাদ কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, এর জন্য গবেষণা চালানো হচ্ছে।

ভান্ডারি মুলার খেত ঘুরে দেখা গেছে, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। শুক্রবার মাইজভান্ডার দরবারের ওরশ। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে বিক্রি শুরু হবে এটি। চলবে শনিবার পর্যন্ত। তাই বুধবার সকালে খেত থেকে তোলা হচ্ছে মুলা। খেতে দেখা যায়, কৃষকদের মধ্যে কেউ মুলার ঝুঁটিতে সুতা বাঁধছেন, কেউ পানিতে মুলাকে ধুয়ে পরিষ্কার করছেন। আর কেউ মুলাকে সড়কের পাশে নিয়ে স্তূপ করে রাখছেন। প্রতিটি মুলার ওজন ২ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত হয়। 

নাজিরহাট পৌরসভা, সুন্দরপুর, সুয়াবিল ইউনিয়নসহ হালদা নদীর অববাহিকায় চাষিরা এই মুলা উৎপাদন করেছেন। তাদের খেতগুলো দেখে মুগ্ধতা জাগে। খেতের মুলা তোলার জন্য শ্রমিকদের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনও যোগ দিয়েছেন। খেত থেকে তুলে নিয়ে মুলা নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে মাইজভান্ডার দরবার শরিফ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হয়।

একেকটি মুলা ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে চাষিরা জানান, উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে মুনাফা আগের মতো হচ্ছে না। অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে মুলার আকার ও চাহিদার কারণে কৃষকরা আশাবাদী, ওরশে ভালো দাম পাবেন।

কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলাল হোসেন জানান, এ মুলার সর্বোচ্চ ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি হয়ে থাকে। বর্তমানে ২ থেকে ১০ কেজি ওজন পর্যন্ত মুলা হয়েছে। সাধারণত এত বড় মুলা দেশের আর কোথাও উৎপাদন হয় না। এই মুলার নাম ‘জাপানি হাইব্রিড তাসাকিসান’ মুলা।

ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারে বিক্রি হয় বলে স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন ‘ভান্ডারি মুলা’। হাইব্রিড জাতের এই মুলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদী, ধুরুং ও সর্তাখালের বিস্তীর্ণ চরে উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে নাজিরহাট পৌরসভা, সুয়াবিল, সুন্দরপুর, বৃহৎ কাঞ্চননগর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা, ধুরুংখাল এবং খিরাম দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্তাখালের চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কৃষিকাজ। এসব এলাকায় ভান্ডারি মুলার চাষ হয়ে থাকে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার হালদার চরে ৫০ হেক্টর জমিতে মুলার চাষ হয়েছে। প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ভান্ডারি মুলা রোপণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। উৎপাদনে বিভিন্ন দেশীয় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এই মুলার চাষাবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। এক অজ্ঞাত রোগের কারণে উৎপাদিত অনেক মুলা নষ্ট হচ্ছে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেক চাষি। কৃষিসংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন চাষিরা।

এর আগে রহস্য উন্মোচনে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি হাটহাজারীর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী ফটিকছড়ির সুয়াবিল ও সুন্দরপুর ইউনিয়নের হালদার চর পরিদর্শন করেছিলেন। ওই কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মুলার জাত ও মাটির গুণাগুণের কারণে হালদার চরে বৃহৎ আকারের মুলা উৎপাদন হয়। কৃষকদের কাঠোর পরিশ্রম, যথা সময়ে সার-কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারে এই মুলার আকৃতি বড় হচ্ছে। মাঘ মাসের ওরশকে কেন্দ্র করে আয়ের লক্ষ্য স্থির করে চাষিরা ওই মুলার পেছনে সময় দিচ্ছেন বলেই উৎপাদন আশানুরূপ হচ্ছে। তবে এ মুলা নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে।

নাজিরহাট পৌরসভার সুয়াবিলের নাইচ্চ্যরঘাটের হালদা চরের কৃষক মুহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি তিন কানি (১২০ শতাংশ) জমিতে ভান্ডারি মুলা চাষ করেছি। এবার খেতে পাঁচ হাজার পিস মুলা উৎপাদন হয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে, সব খরচ বাদ দিয়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে। প্রবাস ছেড়ে এসে মুলার চাষ করছি।’

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘চরের মাটি খুবই উর্বর এবং উৎপাদিত ফসল অত্যন্ত পুষ্টিকর। চলতি বছর ভান্ডারি মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এবার কৃষকরা ভালো দাম পাবেন এই মুলা বিক্রি করে।’

খুমেকে দালালচক্র বেপরোয়া

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
খুমেকে দালালচক্র বেপরোয়া
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড়। ছবি: খবরের কাগজ

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সারি সারি মোটরসাইকেল দেখা যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) ছবি তোলেন।

চিকিৎসক নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখেছেন কি না তা তারা যাচাই করেন। আগে থেকেই তারা চিকিৎসককে ওই কোম্পানির ওষুধ লিখতে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকেন। একইভাবে বহির্বিভাগে রয়েছে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশন এজেন্ট ও দালালের উৎপাত। 

সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনের বিনিময়ে সাধারণ রোগীদের ওইসব ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে রোগীদের রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নির্দিষ্ট প্যাথলজি ক্লিনিকের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়েছেন হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকও। এভাবে খোলামেলা কমিশন বাণিজ্যের কারণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয় রোগীদের। গত দুই দিন সরেজমিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।  
   
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বহির্বিভাগে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর ভিড় বাড়লেও দায়িত্বরত চিকিৎসকরা আসেন ১১টা-১২টার পর। তাদের অধিকাংশই রোগীর ব্যবস্থাপত্রে কোনো ধরনের ওষুধ লেখা ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট বেসরকারি প্যাথলজিতে পাঠিয়ে দেন। পরীক্ষার পর ওই রিপোর্ট পেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কিন্তু দুপুরের পর ওই চিকিৎসক চেম্বারেও থাকেন না। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীসহ তার স্বজনদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে এর আশপাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দালালদের মাধ্যমে রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে এনে এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে টেস্ট বাণিজ্য। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন প্যাথলজি বিভাগ, ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট নেই। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

অভিযোগ রয়েছে, গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের টার্গেট করে চক্রটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রতারণা করছে। ছোটখাটো জিনিস বিক্রি করে অনেকে চিকিৎসা নিতে এখানে আসেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যান। হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে প্যাথলজিতে ‘ইভিনিং সিফট’ চালু করা হয়েছে। রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে স্যাম্পল নেওয়া হবে এবং রাত ৯টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হবে। এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না তা নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।  

হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বামী খলিলুর রহমান জানান, তার স্ত্রী এক সপ্তাহ ধরে পেটের ব্যথায় ছটফট করছেন। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক কয়েকটি মেডিকেল টেস্ট দিয়েছেন। যার মধ্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ সব পরীক্ষা দালালের মাধ্যমে বাইরের সুগন্ধা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে হয়েছে। নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক ছাড়া অন্য কোথাও থেকে পরীক্ষা করালে সেই রিপোর্ট চিকিৎসকরা দেখতে চান না। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবার মনগড়া রিপোর্টও দিয়ে থাকে।

খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে প্যাথলজি সুবিধা থাকলেও কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্লিপ দিয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। যদি বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয়, তা হলে হাসপাতালের নার্স রক্ত সংগ্রহ করে দেবেন।

তার পর রোগীর স্বজনরা পছন্দমতো প্যাথলজিতে নিয়ে তা পরীক্ষা করবেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসক তার পছন্দমতো ল্যাবে রোগী পাঠাবেন না। বাইরে থেকে কেউ হাসপাতালে এসে রোগীর রক্ত সংগ্রহ করতে পারবেন না। অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের যখন-তখন হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তারা হাসপাতালে ঢুকলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। নির্দেশনা না মানলে চিরদিনের জন্য তাদেরকে হাসপাতাল চত্বরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। 

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহাসিন আলী ফরাজী বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫শ-৭শ রোগী বহির্বিভাগে আসেন। তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে ভোগান্তির শিকার হন। টিকিটের জন্য লাইনে থাকা অবস্থায় সেখান থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া হয়। আমরা এই সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছি। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত নামে কোনো কক্ষ থাকবে না। ফটকের বাইরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধীনে মেডিকেল অফিসার পদবি লেখা থাকবে।

যশোরে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তায় সভা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম
যশোরে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তায় সভা
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যশোরে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা প্রকল্পের অবহিতকরণবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে এ কর্মসূচি হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ড. এ টি এম মাহবুব উল করিম।

জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ অন্যরা।

যশোর ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক ফসিউল আলমের সঞ্চালনায় সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বিদেশফেরত অভিবাসীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণদান কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।