ঢাকা ৯ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

আমেরিকান চক্ষু ডাক্তারের চিকিৎসা পেলেন আন্দোলনে আহতরা

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম
আমেরিকান চক্ষু ডাক্তারের চিকিৎসা পেলেন আন্দোলনে আহতরা
আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. রাশেদ নিজামের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন আহতরা। ছবি: খবরের কাগজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে চোখের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন চট্টগ্রামের অনেকে। অর্থাভাবে ভালো চিকিৎসাও মিলছিলো না তাদের। এতে সুস্থ হতেও লম্বা সময় লাগছিল। সম্প্রতি তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয় সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক, আমেরিকার মিড মিসোরি আই সেন্টার, এলএলসির বোর্ড সার্টিফাইড অপথালমলজিস্ট এবং ক্যাটারেক্ট গ্লাকোমা সার্জন ডা. রাশেদ নিজাম, এমডি, এফসিপিএস, এফএএও। 

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে তিনি ফ্লাইট যোগে চট্টগ্রামে পৌঁছে প্রবর্তক মোড়ের শেভরণ হাসপাতালে আসেন। এরপর আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের দেখেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি প্রত্যেকের শারীরিক খোঁজখবর নেন। 

ডা. রাশেদ নিজামের চট্টগ্রাম আসা উপলক্ষ্যে আগের দিনই চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ফেসবুক পেইজে ঘোষণা দেন যে আন্দোলনে আহত হয়ে যারা চোখ নিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রণায় আছেন তারা যেন শেভরণ হাসপাতালের চক্ষু ইউনিটে আসেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, শেভরণ হাসপাতালের ৭০৮নং কক্ষে সকাল ১০টা থেকে চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ডা. মোহাম্মদ ইরফান চৌধুরীর সহযোগিতায় এক এক করে রোগী মোট ৯ জন রোগী দেখেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন ডা. রাশেদ নিজাম। এর মধ্যে আহত মারুফ ও শুভ হোসেনের অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয়। আর পাঁচজনকে চশমা দেওয়ার পরাদর্শ দেওয়া হয়। তাদেরকে বিনামূল্যে চশমা ও ওষুধ দেন শেভরণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

ডা. ইরফান চৌধুর বলেন, শুভ ও মারূফের চিকিৎসা আমরা ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখব। এরপর তাদের অপারেশনের সিদ্ধান্ত হবে। বাকিদের রেগুলার কিছু চিকিৎসা চলবে। 

আমেরিকা থেকে আসা ডা. রাশেদ নিজাম বলেন, ‘গত শনিবার আমি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞানে আন্দোলনে আহত ৪০ জনের মতো রোগী দেখি। আজকে এখানেও ৮-৯ জনকে দেখি। এর মধ্যে আঘাতের কারণে একজনের চোখে ছানি পড়ে গেছে। সেটি দেশেই চিকিৎসা সম্ভব। আরেকজনের রেটিনা সার্জারি হয়েছে। তাকে ছয় মাস বা এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী সময়ে কী করা যায়। বাকিদের অবস্থা মোটামুটি ভালো।’

তিনি আরও বলেন, তাদের এ ত্যাগের কোনো তুলনা হয়না। কারো একটি চোখ, কারো দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। একজনের চোখে ৪০-৫০ টি বুলেটের দাগ দেখা গেছে। এগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে। আমি জীবনে এমন আই ইনজুরি দেখিনি। দেশের জন্য এই ত্যাগে আল্লাহ বড় পুরস্কার দেবেন তাদের। আমরা সবাই তাদের এ ত্যাগ মনে রাখব চিরকাল। তাদের যদি বিদেশে নিতে হয় আমরা নিয়ে যাব।

মাহফুজ/মেহেদী/এমএ/

ধামরাইয়ে মায়ের অভিযোগে স্ত্রীসহ ছেলে গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ এএম
ধামরাইয়ে মায়ের অভিযোগে স্ত্রীসহ ছেলে গ্রেপ্তার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ঢাকার ধামরাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর ও পরিবারের লোকজনকে হত্যাসহ ভয়ভীতির ঘটনায় মায়ের দেওয়া অভিযোগে স্ত্রীসহ ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া ৪টি ধারালো ছ্যান জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারী)  বিকেলে উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের উত্তর দীঘলগ্রাম এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

এ ঘটনায় গ্রেফতার শরীফের মা শরিফন নেছা বাদি হয়ে এক স্কুলশিক্ষকসহ ১০ জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। শরীফ ওই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম নবীর সঙ্গে মিলে নিজের পরিবারের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার (৫৫), গোলাম নবী (৫৪), শরীফ (৩৫), মনোয়ারা (২৮), আব্দুর রউফ (৫৪), আসাদ (৩৩), আব্দুল মালেক (৫২), খোরশেদ আলম (৫৪), ছানোয়ার হোসেন (৩৮) ও আব্দুল কাদের (৬৫)।

পরে বুধবার (২২ জানুয়ারী) সকালে শরীফ ও তার স্ত্রী মনোয়ারাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, উপজেলার দীঘলগ্রাম গ্রামের শামসুল হক ও স্ত্রী শরিফুন নেছার সঙ্গে পারিবারিকভাবে ছেলে  শরীফ ও তার স্ত্রী মনোয়ারার বিরোধ চলে আসছিল। এরমধ্যে একই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম নবী শরীফ ও তার স্ত্রী মনোয়ারার পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বাবা শামসুল হক ও মা শরিফনসহ ভাই পুলিশ সদস্য রাজু হোসেনকে ভয়ভীতি ও ক্ষতি করার পায়তারা করছিল এমন অভিযোগও রয়েছে। দেলোয়ার হোসেন ও গোলাম নবীর রয়েছে একটি সক্রিয় সন্ত্রাসি বাহিনী। 

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে শরীফ ও স্ত্রী আনোয়ারা লোকজন নিয়ে শামসুল হকের বাড়ি জবরদখলের উদ্দেশ্যে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ি-ঘরে হামলা ও  ভাঙচুর করে। এ সময় কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। পরে জরুরী নাম্বার  ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪টি  ধারালো ছ্যান উদ্ধারসহ শরীফ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। 

স্থানীয়রা জানান, দেলোয়ার মাষ্টার, গোলাম নবী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করে চলেছে। অপরাধের একাধিক প্রমাণ থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাসপেন্ড হয়ে রয়েছে দির্ঘদিন ধরে। যখন যে দল আসে তাদের সঙ্গেই মিশে যায়। এলাকায় ঝগড়া বিবাদ, অন্যের জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মাদ্রাসার টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগও করেন এলাকাবাসী। 

এ বিষয়ে মামলার বাদি শরিফন নেসা বলেন, শরীফ আমার বড় ছেলে। সে আমাদের ভরণ পোষণ না করায় এবং মাঝে মধ্যেই আমাদের উপর নির্যাতন করে। তাই বাড়ির জায়গা ছোট ছেলেকে লিখে দেই। এর জের ধরে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসি দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার ও গোলাম নবীসহ প্রায় ২৫/৩০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। ছেলে শরীফ ও তার বউয়ের অত্যাচারে থানায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার ও গোলাম নবী একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের লোকজন সব সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে রাখে। আমার ছেলে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এমন কাজ করেছে। আমার ছোট ছেলের স্ত্রী পুলিশ সদস্য নাসরিন আক্তারের ওপরও হামলা চালায় দেলোয়ার হোসেন মাষ্টার ও গোলাম নবীর লোকজন। নাসরিনের গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় এবং একটি মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে।

এ সময় বাদি শরিফন নেসার স্বামী শামসুল হক ঠিক তো কথা বলতে পারে না। শুধু ছেলে শরীফ ও দেলোয়ার হোসেন মাষ্টারের মারধরের কথা বলে কান্না করতে থাকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাউছার সুলতান জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৪টি ছ্যান উদ্ধারসহ শরীফ ও তার স্ত্রী মানোয়ারাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


মো. রুহুল আমিন/মেহেদী/ 

খবরের কাগজে সংবাদ প্রকাশ সেই কার্বন কারখানা বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩২ এএম
সেই কার্বন কারখানা বন্ধ ঘোষণা
পাবনার বেড়ার ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ কোং লি. কারখানায় অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছবি: খবরের কাগজ

পাবনার বেড়ার ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ কোং লি. নামে কার্বন কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদুল ইসলাম এ অভিযান চালান। এ সময় পরিবেশ দূষণের দায়ে কারখানাটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে কারখানায় কর্মরত সুপারভাইজার রাজিদুর রহমানকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয় বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে। এর আগে এ নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি ‘ফসলের ক্ষতি, বেড়ায় কার্বন কারখানার ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন’ শিরোনামে খবরের কাগজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

নির্বাহী অফিসার জানান, অবৈধভাবে কালি উৎপাদনের কারখানা তৈরি করে পরিবেশ দূষণ করছিল এ কারখানাটি। এ বিষয়ে গণমাধ্যম ও এনএসআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কারখানাটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারখানাটির কোনো কাগজপত্র না থাকায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অভিযানে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আ. মমিন ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চার বছর আগে আবাসিক এলাকার ৭ বিঘা ফসলি জমিতে ‘ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ কোং লি.’ একটি কারখানা করেন কাশিনাথপুর এলাকার আমিনুল ইসলাম। ওই কারখানায় বিশাল আকারের ২৪টি চুল্লিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে কালি তৈরি করা হয়। এ জন্য প্রতিটি চুল্লিতে ৭৫-৮০ মণ পাটকাঠি পুড়িয়ে তৈরি করা হয় কার্বন।

এতে প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ওই ধোঁয়া ও ছাইয়ে আক্রান্ত হয়ে এলাকাবাসী হাঁচি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। সম্প্রতি এলাকার বৃদ্ধ ও ছোট শিশুদের শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিচ্ছিল। এলাকার তিন ফসলি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

দেশজুড়ে কদর ভান্ডারি মুলার

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৭ এএম
দেশজুড়ে কদর ভান্ডারি মুলার
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ভান্ডারি মুলা হাতে এক কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিখ্যাত ‘ভান্ডারি মুলা’র জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। দেশজুড়ে রয়েছে এ মুলার চাহিদা। প্রতিটি মুলার ওজন হয় ৫ থেকে ১৪ কেজি পর্যন্ত। আকারে বিশাল এবং স্বাদে অসাধারণ। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ভান্ডারি মুলা’ নামে পরিচিত হলেও এর জাত আসলে জাপানের। 

ফটিকছড়িতে অবস্থিত মাইজভান্ডার দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ওরশ ১০ মাঘ (২৪ জানুয়ারি) উপলক্ষে আগত আশেকভক্ত জায়েরনি ও দর্শনার্থীদের কাছে এই মুলার চাহিদা অত্যন্ত বেশি। এ সময় স্থানীয় কৃষকরাও মুলা বিক্রির জন্য অপেক্ষা করেন। দরবারে আগত ভক্ত-অনুরক্তরা এ মুলা রোদে শুকিয়ে দীর্ঘদিন রেখে তবারুক হিসেবেও খান বলে প্রবাদ আছে। ফটিকছড়ির হালদার চরে জমে থাকা পলি-বালি মিশ্রিত জমিতে বিশাল আকারের এ মুলার উৎপাদন হয়। 

এদিকে এ কৃষি ফসল নিয়ে রীতিমতো শুরু হয়েছে গবেষণা। মুলা কেন এ বিশাল আকারের হয়? অন্য কোনো উপজেলায় হয় না কেন? দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর চাষাবাদ কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, এর জন্য গবেষণা চালানো হচ্ছে।

ভান্ডারি মুলার খেত ঘুরে দেখা গেছে, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। শুক্রবার মাইজভান্ডার দরবারের ওরশ। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে বিক্রি শুরু হবে এটি। চলবে শনিবার পর্যন্ত। তাই বুধবার সকালে খেত থেকে তোলা হচ্ছে মুলা। খেতে দেখা যায়, কৃষকদের মধ্যে কেউ মুলার ঝুঁটিতে সুতা বাঁধছেন, কেউ পানিতে মুলাকে ধুয়ে পরিষ্কার করছেন। আর কেউ মুলাকে সড়কের পাশে নিয়ে স্তূপ করে রাখছেন। প্রতিটি মুলার ওজন ২ থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত হয়। 

নাজিরহাট পৌরসভা, সুন্দরপুর, সুয়াবিল ইউনিয়নসহ হালদা নদীর অববাহিকায় চাষিরা এই মুলা উৎপাদন করেছেন। তাদের খেতগুলো দেখে মুগ্ধতা জাগে। খেতের মুলা তোলার জন্য শ্রমিকদের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনও যোগ দিয়েছেন। খেত থেকে তুলে নিয়ে মুলা নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে মাইজভান্ডার দরবার শরিফ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হয়।

একেকটি মুলা ৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে চাষিরা জানান, উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে মুনাফা আগের মতো হচ্ছে না। অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে মুলার আকার ও চাহিদার কারণে কৃষকরা আশাবাদী, ওরশে ভালো দাম পাবেন।

কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলাল হোসেন জানান, এ মুলার সর্বোচ্চ ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি হয়ে থাকে। বর্তমানে ২ থেকে ১০ কেজি ওজন পর্যন্ত মুলা হয়েছে। সাধারণত এত বড় মুলা দেশের আর কোথাও উৎপাদন হয় না। এই মুলার নাম ‘জাপানি হাইব্রিড তাসাকিসান’ মুলা।

ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারে বিক্রি হয় বলে স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন ‘ভান্ডারি মুলা’। হাইব্রিড জাতের এই মুলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদী, ধুরুং ও সর্তাখালের বিস্তীর্ণ চরে উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে নাজিরহাট পৌরসভা, সুয়াবিল, সুন্দরপুর, বৃহৎ কাঞ্চননগর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা, ধুরুংখাল এবং খিরাম দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্তাখালের চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কৃষিকাজ। এসব এলাকায় ভান্ডারি মুলার চাষ হয়ে থাকে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার হালদার চরে ৫০ হেক্টর জমিতে মুলার চাষ হয়েছে। প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ভান্ডারি মুলা রোপণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। উৎপাদনে বিভিন্ন দেশীয় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এই মুলার চাষাবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। এক অজ্ঞাত রোগের কারণে উৎপাদিত অনেক মুলা নষ্ট হচ্ছে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেক চাষি। কৃষিসংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন চাষিরা।

এর আগে রহস্য উন্মোচনে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি হাটহাজারীর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী ফটিকছড়ির সুয়াবিল ও সুন্দরপুর ইউনিয়নের হালদার চর পরিদর্শন করেছিলেন। ওই কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মুলার জাত ও মাটির গুণাগুণের কারণে হালদার চরে বৃহৎ আকারের মুলা উৎপাদন হয়। কৃষকদের কাঠোর পরিশ্রম, যথা সময়ে সার-কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারে এই মুলার আকৃতি বড় হচ্ছে। মাঘ মাসের ওরশকে কেন্দ্র করে আয়ের লক্ষ্য স্থির করে চাষিরা ওই মুলার পেছনে সময় দিচ্ছেন বলেই উৎপাদন আশানুরূপ হচ্ছে। তবে এ মুলা নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে।

নাজিরহাট পৌরসভার সুয়াবিলের নাইচ্চ্যরঘাটের হালদা চরের কৃষক মুহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি তিন কানি (১২০ শতাংশ) জমিতে ভান্ডারি মুলা চাষ করেছি। এবার খেতে পাঁচ হাজার পিস মুলা উৎপাদন হয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে, সব খরচ বাদ দিয়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে। প্রবাস ছেড়ে এসে মুলার চাষ করছি।’

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘চরের মাটি খুবই উর্বর এবং উৎপাদিত ফসল অত্যন্ত পুষ্টিকর। চলতি বছর ভান্ডারি মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এবার কৃষকরা ভালো দাম পাবেন এই মুলা বিক্রি করে।’

যশোরে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তায় সভা

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম
যশোরে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তায় সভা
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যশোরে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা প্রকল্পের অবহিতকরণবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে এ কর্মসূচি হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ড. এ টি এম মাহবুব উল করিম।

জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ অন্যরা।

যশোর ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক ফসিউল আলমের সঞ্চালনায় সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বিদেশফেরত অভিবাসীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণদান কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

অর্থের অভাবে অধরা আরিফার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
অর্থের অভাবে অধরা আরিফার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন
সরাকারি মেডিকেলে চান্স পাওয়া আরিফা আক্তার ও তার বাবা-মা। ছবি: খবরের কাগজ

ছোট থেকেই স্বপ্ন পড়াশোনা করে ডাক্তার হবেন, এলাকার গরিব মানুষের সেবা করবেন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন অধরা হতে চলেছে।

বাবা ভ্যান চালিয়ে আর মা সেলাই মেশিনের কাজ করে কোনো রকম সংসার চালান। বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ও মায়ের সামান্য গয়না বন্ধক রেখে আরিফার মেডিকেলে ভর্তি কোচিংয়ের খরচ চালানো হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাদের মেয়ে আরিফা আক্তার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ সাফল্যে বাবা-মাসহ পরিবারের সবার মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। তবে চিন্তার ভাঁজ দরিদ্র বাবা-মায়ের কপালে। মেয়েকে আদৌ মেডিকেলে কলেজে ভর্তি করতে পারবেন কি না, জানা নেই তাদের।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দরিদ্র ভ্যানচালক শেখ আসাদুজ্জামান ও গৃহিণী হামিমা আক্তারের বড় মেয়ে আরিফা আক্তার। ২০২২ সালে বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পাওয়ার পর বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে ভর্তি হন আরিফা। পরে ২০২৪ সালে এইচএসসিতে ‘এ’ প্লাস (গোল্ডেন) পেয়ে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।

এ বিষয়ে আরিফা বলেন, ‘২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া পর্যন্ত আমার সব খরচ বহন করতে মা-বাবার অনেক কষ্ট হয়েছে। দুই লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে তাদের। আমি কষ্ট করে একটা ভালো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু মেডিকেলে পড়ার মতো সামর্থ্য নেই।’

বাবা শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার মেয়ে সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই। কী দিয়ে মেয়েকে পড়াব?’

আরিফার মা হামিমা আক্তার বলেন, ‘স্বামীর আয় ও নিজে সেলাই মেশিনের কাজ করে অনেক সময় না খেয়ে থাকলেও কখনো তার পড়ালেখা বন্ধ করিনি। আরিফা ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। এখন ভর্তির চান্স পেয়েছে। কিন্তু খুশির মাঝেও ভর্তি ও পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত। ভর্তির টাকা জোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবান ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’