বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে পানকৌড়ির ডানা ঝাপটানো ছুটে চলা। কানে বাজছে কপোতাক্ষ নদের কলকল জলরাশির মৃদু শব্দ। সঙ্গে রয়েছে নদের দুই পাশের সবুজ প্রকৃতির স্নিগ্ধময় আবেশ।
এমনই এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্র।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পড়ন্ত দুপুরে যশোরের ঝিকরগাছার কাটাখালের কপোতাক্ষ নদের মাঝে নৌকায় ভিন্নধর্মী এ পাঠচক্রের আয়োজন করে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ নামে সাহিত্য চর্চা সংগঠন।
পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ‘কবি’ বইটির পাঠ চলাকালে সদস্যদের মধ্যে উপন্যাসের তিনটি চরিত্র নিতাই, ঠাকুরঝি ও বসন্তের ভালোবাসা নিয়ে নানা মত প্রকাশ পায়। বইয়ের চরিত্রকেন্দ্রিক যুক্তি-আশ্রয়ী রোমান্টিক আলোচনায় উপভোগ্যময় হয়ে ওঠে পাঠচক্র। এ ধরনের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট বইয়ের বিষয়বস্তু জানা ও পাঠে আনন্দের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় পাঠচক্র। পাঠ-প্রতিক্রিয়া পর্বে অংশগ্রহণ করেন অভিজিৎ কুমার তরফদার, খাদিজা একরাম এষা, সোনিয়া আফরিন, অপু দেবনাথ, জান্নাতুল ফেরদৌস ইলা, হামিদা হিমু, আনিকা প্রমুখ। প্রতিবেশ অধ্যয়ন সঞ্চালনা করেন মুরাদ হোসেন।
সালেহা সুলতানা ঊষার কণ্ঠে সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আর শেষ হয় ৫ মিনিটের মেডিটেশন দিয়ে। আলোচনার মাঝে মাঝে রুবাই পাঠ করেন কবি মামুন আজাদ। কবিতা শোনান মনিরা খাতুন এবং লোকোজ গান পরিবেশন করেন স্থানীয় বাউলশিল্পী সোহরাব হোসেন।
‘কবি’ উপন্যাস নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন ও পাঠচক্রের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীর।
আলোচনার একপর্যায়ে ‘কবি’ উপন্যাসকেন্দ্রিক রম্য বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন পাঠচক্র সদস্যরা। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘বসন্ত নয়, ঠাকুরঝিই ছিল নিতাইয়ের প্রকৃত ভালোবাসা’। পক্ষ দলে অংশগ্রহণ করেন মুরাদ হোসেন, সায়মা আক্তার তৌফা, অভিজিৎ তরফদার ও সোনিয়া আফরিন এবং বিপক্ষ দলে অপু দেবনাথ, সালেহা সুলতানা ঊষা, খাদিজা একরাম এশা ও জান্নাতুল ফেরদৌস ইলা।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কবি মামুন আজাদ, সাংবাদিক সালমান হাসান রাজীব ও সংগঠনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও কবি সুমন রেজা। বিতর্কে পক্ষ দল বিজয়ী হন এবং শ্রেষ্ঠ বক্তা হন অভিজিৎ তরফদার।
ভিন্নতর আয়োজন নিয়ে সংগঠনের সভাপতি শাহ্জাহান কবীর বলেন, ‘পাঠচক্রের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর মধ্যে অনন্য আয়োজন হচ্ছে ‘প্রতিবেশ অধ্যয়ন’। বইয়ের বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে আবহ সৃষ্টির মাধ্যমে পাঠচক্র করার নামই ‘প্রতিবেশ অধ্যয়ন’। সাধারণত ১০টি সাপ্তাহিক পাঠচক্র সম্পন্ন করার পর ‘প্রতিবেশ অধ্যয়ন’র আয়োজন করে সংগঠনটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাঠচক্রে বই আলোচনার পাশাপাশি থাকে গান, কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উপস্থিত সবাই পাঠচক্রে পূর্বনির্ধারিত বইয়ের ওপর পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুযোগ পান। কোনো কোনো বইয়ের জন্য প্রধান আলোচকও রাখা হয়। বইটির ওপর বিশদ আলোচনার পাশাপাশি প্রধান আলোচক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।’
শাহজাহান কবীর বলেন, ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ বই পড়ার একটি নিত্য আন্দোলনের নাম। উন্নত, কল্যাণকর, নান্দনিক ও উদার চিন্তা-চেতনাসমৃদ্ধ মানুষের সমাজ বিনির্মাণে বই পাঠের বিকল্প নেই। মানবিক ও নান্দনিক মানুষের সমাজ গঠনে কাজ করছি আমরা।’