
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের দাসত্ব করেছিল আওয়ামী লীগ বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড ময়দানের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ সব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর ভারতকে মনিবের কাতারে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করেননি শেখ হাসিনা। পরিবারের সদস্যদের ছবি গণভবনের দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে রেখেছিল। প্রতিদিন সকালে বের হওয়ার সময় নিহত স্বজনদের ছবি দেখে বের হতেন হাসিনা। যাতে রাগ ও ক্ষোভ সব নিজের মধ্যে রেখে দেশের মানুষের ওপর শোষণ চালাতে পারেন।
জুলাই বিপ্লবের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত ১৫ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দুই হাজার মানুষকে খুন করায় বাংলাদেশের জনগণ বিতাড়িত করেছে হাসিনাকে। সেই হাসিনাকে রক্ষা করে ভারত অনেক বড় ভুল করেছে। এটি তাদের কুটনৈতিক ভুল ছিলো। হাসিনার জায়গা যেখানে, সেখানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ রইল। হাসিনার বিচার হতে হবে। আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কী সম্পর্ক হবে তা দেশের মানুষ নির্ধারণ করবে। সেই সম্পর্ক যদি শোষণের হয়, আধিপত্যবাদের হয় তাহলে টিকে থাকবে না। যদি সাম্যের হয়, সমতার হয়, সম্মানের হয় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে।
সারজিস আলম বলেন, চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমাদের বন্দরকে নিয়ে ভারত যেন কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রে আমাদের ভাই আলিফকে হারিয়েছি। যখন আমাদের সার্বভৌমের প্রশ্ন আসে তখন আমরা যেন দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকি।
ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলো আমাদের পরিবার ভাঙছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমে ভারতীয় কালচার আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ভারত সফট পাওয়ার অ্যাপ্লাই করে তাদের সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে ভাঙছে। বিভিন্ন কূটচারবিশিষ্ট নাটক-মুভি দেখিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। ভারতীয় এসব চ্যানেলে শিক্ষণীয় কিছুই থাকে না। অথচ আমাদের কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে দেখা যায় না।
বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই বলেছেন, রাজনীতি ইসলাম দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য। বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা নিজেদের ও দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেননি। আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে রাজনীতি করি বলে কারো কোনো সহযোগিতা নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হতে রাজি হইনি।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা ন্যায়ের পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে বারবার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর আমীর শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন মাহদী, বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. এস এম সরোয়ার আলম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নাজিমুদ্দিন চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা খান তালাত মোহাম্মদ রাফি, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়ক আবদুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইউসুফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ আল মাদানী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম মহানগর নেজামে ইসলামী পার্টির সভাপতি ক্বারী ফজলুল করীম জেহাদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আল ফুরকান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক মোহাম্মদ রিজুয়ান সিদ্দিকী, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সভাপতি কাজী মজিবুর রহমান মুজিব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.হুমায়ুন কবীর খালুভী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি আল মোহাম্মদ ইকবাল, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার প্রমুখ।
নাবিল/এমএ/