ঢাকা ৫ চৈত্র ১৪৩১, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
English

ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের দাসত্ব করেছিল আ.লীগ: সারজিস আলম

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৬ পিএম
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের দাসত্ব করেছিল আ.লীগ: সারজিস আলম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। ছবি: খবরের কাগজ

ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের দাসত্ব করেছিল আওয়ামী লীগ বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড ময়দানের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ সব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর ভারতকে মনিবের কাতারে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করেননি শেখ হাসিনা। পরিবারের সদস্যদের ছবি গণভবনের দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে রেখেছিল। প্রতিদিন সকালে বের হওয়ার সময় নিহত স্বজনদের ছবি দেখে বের হতেন হাসিনা। যাতে রাগ ও ক্ষোভ সব নিজের মধ্যে রেখে দেশের মানুষের ওপর শোষণ চালাতে পারেন।

জুলাই বিপ্লবের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত ১৫ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দুই হাজার মানুষকে খুন করায় বাংলাদেশের জনগণ বিতাড়িত করেছে হাসিনাকে। সেই হাসিনাকে রক্ষা করে ভারত অনেক বড় ভুল করেছে। এটি তাদের কুটনৈতিক ভুল ছিলো। হাসিনার জায়গা যেখানে, সেখানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ রইল। হাসিনার বিচার হতে হবে। আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কী সম্পর্ক হবে তা দেশের মানুষ নির্ধারণ করবে। সেই সম্পর্ক যদি শোষণের হয়, আধিপত্যবাদের হয় তাহলে টিকে থাকবে না। যদি সাম্যের হয়, সমতার হয়, সম্মানের হয় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকবে।

সারজিস আলম বলেন, চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমাদের বন্দরকে নিয়ে ভারত যেন কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রে আমাদের ভাই আলিফকে হারিয়েছি। যখন আমাদের সার্বভৌমের প্রশ্ন আসে তখন আমরা যেন দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকি।

ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলো আমাদের পরিবার ভাঙছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমে ভারতীয় কালচার আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ভারত সফট পাওয়ার অ্যাপ্লাই করে তাদের সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে ভাঙছে। বিভিন্ন কূটচারবিশিষ্ট নাটক-মুভি দেখিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। ভারতীয় এসব চ্যানেলে শিক্ষণীয় কিছুই থাকে না। অথচ আমাদের কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে দেখা যায় না।

বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম চরমোনাই বলেছেন, রাজনীতি ইসলাম দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য। বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা নিজেদের ও দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেননি। আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে রাজনীতি করি বলে কারো কোনো সহযোগিতা নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হতে রাজি হইনি।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা ন্যায়ের পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে বারবার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর আমীর শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন মাহদী, বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. এস এম সরোয়ার আলম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নাজিমুদ্দিন চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা খান তালাত মোহাম্মদ রাফি, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়ক আবদুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইউসুফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ আল মাদানী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম মহানগর নেজামে ইসলামী পার্টির সভাপতি ক্বারী ফজলুল করীম জেহাদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আল ফুরকান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক মোহাম্মদ রিজুয়ান সিদ্দিকী, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সভাপতি কাজী মজিবুর রহমান মুজিব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.হুমায়ুন কবীর খালুভী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি আল মোহাম্মদ ইকবাল, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার প্রমুখ।

নাবিল/এমএ/

মিথ্যা পরিচয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা নেতা আতাউল্লাহ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
মিথ্যা পরিচয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা নেতা আতাউল্লাহ
আরসা নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। ছবি: সংগৃহীত

মিথ্যা পরিচয় দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। চট্টগ্রামের মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে তিনি সেখানে বসবাস করছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টানে কথা বলায় তিনি যে রোহিঙ্গা নাগরিক, স্থানীয়রা তা বুঝতে পারেননি। গত সোমবার (১৭ মার্চ) গভীর রাতে র‍্যাব আতাউল্লাহকে ওই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চার মাস আগে আতাউল্লাহ ভূমিপল্লীতে এসে প্রথমে ভবনের তিনতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। অন্য একজন ব্যক্তি এসে বাড়ির মালিক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা বলেন। 

তিনি জানান, তার এক আত্মীয় নতুন বাসা ভাড়া নিতে চান। তিনি চট্টগ্রামের মাছ ব্যবসায়ী। হুমায়ুন কবির ওই ব্যক্তির পরিচয়ে বিশ্বাস করে তাকে বাসা ভাড়া দেন। কিছুদিন পর বাড়ির মালিক আতাউল্লাহর কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) চাইলে তিনি সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। দেড় মাস পর জানান, ছোট ফ্ল্যাটে তার কষ্ট হচ্ছে, তাই তিনি আটতলায় বড় ফ্ল্যাটে উঠতে চান। পরবর্তী সময়ে আতাউল্লাহর স্ত্রী, সন্তান ও ভাইকে নিয়ে আটতলায় ২০ হাজার টাকা ভাড়ার একটি ফ্ল্যাটে উঠে বসবাস শুরু করেন। 

ওই ফ্ল্যাটের মালিক ইতালিপ্রবাসী। তার অবর্তমানে কেয়ারটেকার আতাউল্লাহকে বাসা ভাড়া দেন। গত ১৭ মার্চ রাত ৩টার দিকে র‍্যাব ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আতাউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, আতাউল্লাহ সাধারণ জীবনযাপন করতেন। অনেকে তাকে অসুস্থ মনে করতেন। লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করতেন। আবার কখনো অন্যের সাহায্য নিয়ে হাঁটতেন।

গ্রেপ্তারের পর আতাউল্লাহ ও তার পাঁচ অনুসারীকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘র‍্যাবের দায়ের করা মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

আতাউল্লাহ যেভাবে আলোচনায় আসেন

২০১৭ সালে প্রথম আলোচনায় আসেন আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। ওই বছরের ২৫ আগস্টের পর মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ওপর হামলার দায় স্বীকার করে তিনি অনলাইনে পরিচয় দেন। ওই হামলায় বিজিপির ৭১ জন সদস্য নিহত হন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়। সেখানেই তিনি নিজেকে আরসার প্রধান বলে দাবি করেন। 

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আতাউল্লাহ পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। পরে তারা সৌদি আরবের মক্কায় বসবাস শুরু করেন। আতাউল্লাহ মক্কা ও রিয়াদে ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং শিক্ষকতা করেন। ২০১২ সালে মায়ানমারের রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হলে তিনি সৌদি আরব ত্যাগ করে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৩ সালে তিনি আরসার প্রধান হন।

২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানায়, আতাউল্লাহ পাকিস্তানে তালেবানের অধীনে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং লিবিয়াতেও সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকতে পারেন। তার নেতৃত্বে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মায়ানমারের পুলিশ পোস্টে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বড় ধরনের হামলার পর মায়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালায়। এতে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

২০২৩ সালে আরসার শীর্ষ নেতা নূর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে হত্যা করার নির্দেশও আতাউল্লাহ দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পের এক বৈঠকে মুহিব্বুল্লাহ হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১২ জনের একটি দল তার কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে। মুহিব্বুল্লাহ রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পক্ষে ছিলেন। 

র‍্যাবের ভাষ্যে, এ কারণে মুহিব্বুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল আরসা। এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা (স্কোয়াড্রন লিডার) রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আতাউল্লাহ।

মাহফুজ/

পিরোজপুরে কেমিক্যাল ও রঙ দিয়ে শিশুদের খাবার তৈরি, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
পিরোজপুরে কেমিক্যাল ও রঙ দিয়ে শিশুদের খাবার তৈরি, গ্রেপ্তার ২
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

পিরোজপুরের নাজিরপুরে একটি বাড়িতে বিভিন্ন রঙ ও কেমিক্যাল দিয়ে শিশুদের খাবার তৈরি ও বিভিন্ন অনুমোদনবিহীন মোড়কে পণ্য তৈরি করে ডিলারশিপের মাধ্যমে বিক্রি করায় নামবিহীন এক প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও দুই জনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রামান্যমাণ আদালত।

বুধবার (১৯ মার্চ) শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের বন্দর বাজার পাশে একটি বাড়িতে পিরোজপুর জেলা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা শাখা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই কারখানায় অভিযান চালায়। গোয়েন্দা সংস্থা অভিযানে সত্যতা পেলে উপজেলা প্রশাসনকে খবর দিলে প্রশাসন তাদের টিম নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে ভ্রামান্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে।

এ সময় নামবিহীন ওই কারখানাটি সিলগালা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই মালিক মো. মিরাজ হাওলাদার (৩৫) ও তার ভাই মো. রাব্বি হাওলাদার (২২) দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আটকরা জেলার নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী গ্রামের মো. জয়নাল হাওলাদারের ছেলে।

মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি।

অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি জানান, এখানে এসে দেখি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানীকর, ক্ষতিকর মালামাল তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মোড়কে। এর অপরাধে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে অবৈধ কারখানাটি সিলগালা করা হয়েছে ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনা করার সময় নাজিরপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মর্কতা মশিউর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ, জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর পিরোজপুরের সহকারী পরিচালক দেবাশীষ রায়সহ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা পিরোজপুর জেলা শাখার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
 
মো. হাসিবুল ইসলাম হাসান/মাহফুজ

 

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নাসিমের বিরুদ্ধে সস্ত্রীক দুদকের মামলা

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নাসিমের বিরুদ্ধে সস্ত্রীক দুদকের মামলা
ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম (৬৪) এবং তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর (৪৯) বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান বাদী হয়ে ফেনীর বিশেষ জজ আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেন।

এতে সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৭ টাকা এবং তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্জনের তথ্য পায় সংস্থাটি।

অভিযুক্ত আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার গুথুমা গ্রামের সালেহ উদ্দিন আহমদের ছেলে। তিনি সাবেক প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়ের প্রোটোকল কর্মকর্তা ছিলেন এবং তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু একই গ্রামের মো. আবু তাহের চৌধুরীরর মেয়ে। তিনি ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক।

দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আদালত পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) মো. ইদ্রিস মামলার বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ ও সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান অনুসন্ধান করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সরকারি চাকরীতে যোগদান করেন। তিনি ২৩ বছর পর ২০০৯ সালে যুগ্ম-সচিবের পদ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। পরে ২০২৪ সালে ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ফেনী, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়  মোট ১২৬টি দলিলের মাধ্যমে পাঁচটি ফ্ল্যাট, দুটি প্লটসহ মোট ৩৯ কোটি আট লাখ ৪৪ হাজার ৬০৫ টাকার স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করেন।

এ ছাড়া তার নামে ১৪টি ব্যাংক হিসাবে আট কোটি ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ১০৮ টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে ১৫টি কোম্পানিতে ৩৪ কোটি ৬২ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ টাকার শেয়ার, তার নামে ঢাকা-চট্টগ্রামে ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৬ টাকায় ১০টি ক্লাবের সদস্যসহ স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট ৮৪ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৩ টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। পারিবারিক ব্যয়সহ এ হিসেবের পরিমাণ ১০২ কোটি ৩৮ লাখ সাত হাজার ৪৯১ টাকা।

অপরদিকে তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর নামে ফ্ল্যাট, প্লট ও জমিসহ মোট ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/মাহফুজ

 

হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:২১ পিএম
হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ছবি: খবরের কাগজ

ভোকেশনাল ও পলিটেকনিক থেকে পাশ করা প্রকৌশলীদের একই গ্রেডে অন্তর্ভুক্তির হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
 
বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল থেকে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কাজির বাজার এলাকায় অবস্থান নেন তারা। এ সময় রাস্তার দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ৪ বছর ডিপ্লোমা করার পর চাকরিতে দশম গ্রেড পান। অথচ ভোকেশনাল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে এসে তারা দশম গ্রেডে চাকরি পাবে, এটা যৌক্তিক না। হাইকোর্টের আদেশের ফলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরি প্রাপ্তি সংকুচিত হবে। তারা অবিলম্বে হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় ক্লাস, পরীক্ষা বর্জনসহ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শাকিলা ববি/মাহফুজ

রাজবাড়ী‌তে বলাৎকার চেষ্টার অ‌ভি‌যো‌গে মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম
রাজবাড়ী‌তে বলাৎকার চেষ্টার অ‌ভি‌যো‌গে মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার
পুলিশের হাতে আটক অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক

রাজবাড়ীর কালুখালী‌ উপ‌জেলার এক মাদ্রাসা শিক্ষককে ছাত্রদের বলাৎকা‌রের চেষ্টার অ‌ভি‌যোগে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে আদাল‌তে পা‌ঠি‌য়ে‌ছে পু‌লিশ। 

গ্রেপ্তার মাদ্রাসার শিক্ষ‌কের নাম আব্দুল্লাহ আল মামু‌ন। তিন‌ি কালুখালী উপ‌জেলার হরিণবাড়িয়া কামিয়া দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি খুলনা পাইকগাছার সোনাতন কাঠি এলাকার বাসিন্দা।
 
একা‌ধিক ছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অ‌ভি‌যো‌গে র‌য়ে‌ছে শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৩)‌ বিরু‌দ্ধে।

বুধবার (১৯ মার্চ) বিকা‌লে কালুখালী থানার ও‌সি মুহাম্মদ জা‌হেদুর রহমান এ তথ‌্য নি‌শ্চিত ক‌রে জানান, তাকে আদাল‌তে পাঠা‌নো হ‌য়েছে।

এর আগে বুধবার দুপু‌রে মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামু‌নের বিরু‌দ্ধে থানায় এক ছা‌ত্রের মা মামলা ক‌রেন।

মামলা সুত্রে জানা‌ গে‌ছে, দীর্ঘ ক‌য়েক বছর ধ‌রে ওই শিক্ষক মাদ্রাসার ছাত্রদের কৌশলে বলৎকার করার চেষ্টা ক‌রে আস‌ছি‌ল। কিন্তু ছাত্ররা যা‌তে বিষয়‌টি কাউ‌কে না ব‌লে সেজন‌্য নানাভা‌বে ভয় দেখা‌তেন অভিযুক্ত শিক্ষক। প‌রে বিষয়‌টি জানাজা‌নি হ‌লে স্থানীয়রা তাকে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রা‌তে আটক ক‌রে কালুখালী থানা পু‌লিশ‌কে খবর দি‌য়ে তা‌দের হা‌তে সোপর্দ ক‌রে।

কালুখালী থানার ও‌সি মুহাম্মদ জা‌হেদুর রহমান জানান, বিষয়‌টি জানাজা‌নি হ‌লে মঙ্গলবার রা‌তে স্থানীয়রা মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামু‌নকে আটক ক‌রে পু‌লি‌শকে খবর দেয়। বুধবার দুপু‌রে মাদ্রাসার এক ছা‌ত্রের মা থানায় মামলা ক‌রে‌ছে। প‌রে গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল মামু‌নকে আদাল‌তে পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ও‌সি জানান, গ্রেপ্তার মাদ্রাসার শিক্ষক দীর্ঘদিন ধ‌রেই বেশ ক‌য়েকজন ছাত্রকে বলাৎকা‌রের চেষ্টা ক‌রে আস‌ছিল। আর বিষয়‌টি যেন কাউ‌কে না ব‌লে এজন‌্য ছাত্রদের নানাভা‌বে ভয় দেখা‌তো। এরকম অ‌ভি‌যোগ তিন অ‌ভিবাবক ক‌রে‌ছে।

সুমন বিশ্বাস/মাহফুজ