
মায়ানমার রাখাইন রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে গত বছর থেকে চলছে তুমুল সংঘর্ষ। চলমান যুদ্ধের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর আমদানিতে ধস নেমেছে। গত ৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকালে টেকনাফ স্থলবন্দরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দর জেটিঘাট একেবারে শূন্য এবং মালামাল নিয়ে বন্দর থেকে দুইটি কাঠের ট্রলার রওনা দিয়েছে মায়ানমারে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ কারণে আমদানি-রপ্তানি কম হলেও সোমবারে বন্দর দিয়ে মায়ানমার মংডু শহরে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার বস্তা সিমেন্ট, ১৪ টন আলু, ১ হাজার ৫৩০ কেজি বিস্কুট, ৫ টন কোমল পানীয়। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্য, তৈরি পোশাক, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি পণ্য মায়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে।
বন্দরের সিএন্ডএফ এর কর্মচারী মো. রুবেল বলেন, ‘বন্দরে মালামাল কম আসছে। পূর্বে আমরা যেভাবে কাজের চাপে থাকতাম কিন্তু এখন কাজ না থাকার কারণে আমরা মানবেতর দিন পার করছি। সরকার এই বিষয়ে পদেক্ষপ নিলে আমরা আগের মতো কাজে ফিরতে পারব। আমাদের কষ্ট কিছুটা কম হবে।’
বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, মায়ানমারের যুদ্ধের কারণে আগের মত ব্যবসা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় মায়ানমারের ওপারে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রলার ও জাহাজ আসতে সমস্যা সৃষ্টি না হলে এবং দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে আগের মতো সীমান্ত বাণিজ্য স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট, আলু, বিস্কুট, কোমলপানীয়সহ ভিন্ন মালামাল পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বন্দরের শ্রমিক জামাল হোসেন বলেন, ‘আমার গ্রুপে শ্রমিক ছিল ৭৫ জন। মায়ানমারে চলমান যুদ্ধের কারণে মালামাল কম আসায় আমাদের জীবনযাপন করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মায়ানমার মংডু শহরে স্বাভাবিক হলেও আকিয়ার জেলায় যুদ্ধের কারণে মালামাল আসছে না। এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে বন্দর থেকে বাড়ি যেতে গাড়ি ভাড়া পাচ্ছি না।’
টেকনাফ স্থলবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তা বি.এম. আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘মায়ানমারে চলমান যুদ্ধের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি কমে গেছে। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে আমদানি হয়েছে ৪৭ হাজার টন মালামাল। তার পরিবর্তে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি রপ্তানি হয়েছে ৬৩৬ টন মালামাল। গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বন্দরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ হাজার টন মালামাল। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। রপ্তানি হয়েছে ৬৯১ টন মালামাল।’
তিনি বলেন, ‘বন্দরে পূর্বে মায়ানমার থেকে জান্তা সরকারে অধীনে যে মালামালগুলো বন্দরে আসত সেগুলো গত ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি মায়ানমার মংডু শহর দখলে নেওয়ার পর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। পণ্যবাহী জাহাজ গুলো নির্বিঘ্নে আসতে পারছে না আরাকান আর্মির কারণে। সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই এই সমস্যাটি নিরসন হলে চলিত অর্থবছরে পণ্য আমদানি হলে আশা করি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।’
উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর মায়ানমার মংডু শহরসহ ২৭০ কিলোমিটার এলাকা আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে জানা যায়।
মো. শাহীন/মাহফুজ